রোকন উদ্দীন আহমদ

এম. জামাল উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রামের নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক। সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী নবীনদের জন্য ছিলেন নিস্বার্থ। তিনি সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে চট্টগ্রামে অনেকে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত হয়েছেন।
এম. জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরের মিস্ত্রীপাড়ায় ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি  লক্ষীপুর জেলার রায়পুর গ্রামের পীর সাহেবের বাড়ি। তাঁর পিতার নাম আবদুর রউফ ও মাতার নাম আমিনাতুর নুর বেগম। তিনি চট্টগ্রামের ব্যারিষ্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী কলেজ ও  এম.ই.এস কলেজে পড়ালেখা করেছেন। লেখাপড়া শেষে তিনি ডা. মাহফুজুর রহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক অনুবীক্ষণ পত্রিকায় কাজ করেছেন। ২০০০ সালে তিনি সাপ্তাহিক ভোরের আলো নামে একটি সাময়িকী পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। পত্রিকাটির তিনি সম্পাদক ছিলেন। ২০০০ সালে পত্রিকাটিতে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দিয়ে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। ২০০০ সালে পত্রিকাটির প্রিন্টার্স কলামে বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে আমার নাম দেওয়া হয়। পত্রিকাটিতে তখন এম. জামাল উদ্দিন সম্পাদক, এস.এম. রহমত উল্লাহ বার্তা সম্পাদক, আয়ান শর্মা প্রতিবেদক এবং মুহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রোকন উদ্দীন আহমদ, এম. নজরুল ইসলাম, মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ বাবলু, আবদুল হালিমের নাম বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে প্রিন্টার্স কলামে নিয়মিত ছাপা হতো। ২০০০ সালের পর পত্রিকাটি আর প্রকাশ করেননি।

ভোরের আলোর সাথে জড়িত থাকা আয়ান শর্মা এখন দৈনিক আলোকিত চট্টগ্রাম ও দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর প্রকাশক। মুহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী কলাম লেখক এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা। রোকন উদ্দীন আহমদ কলাম লেখক এবং সাপ্তাহিক পূর্ব বার্তার নির্বাহী সম্পাদক।
২০০১ সালে তিনি “আলোকিত চট্টগ্রাম” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় অনুমোদন নেন। পত্রিকাটির তিনি সম্পাদক এবং প্রকাশক ছিলেন। এই পত্রিকাটিতেও আমি স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কয়েক বছর জড়িত ছিলাম। এর কয়েক বছর পর “চট্টগ্রামের পাতা” নামে একটি দৈনিক পত্রিকার অনুমোদন নেন। সেটিরও তিনি সম্পাদক এবং প্রকাশক ছিলেন। সাপ্তাহিক আলোকিত চট্টগ্রাম নিয়মিত অনিয়মিতভাবে বেশ কয়েক বছর চালানোর পর অন্য একজন সাংবাদিককে পত্রিকাটির প্রকাশক পদ হস্তান্তর করেন। এরপর দৈনিক চট্টগ্রামের পাতা নিয়মিত-অনিয়মিতভাবে প্রকাশ করতেন। ২০০৬ সাল থেকে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে পরিশ্রম করে কাজ করতে তাঁর সমস্যা হতো। এক পর্যায়ে দৈনিক চট্টগ্রামের পাতা প্রকাশে তিনি অসমর্থ হন।

এম. জামাল উদ্দিন ছিলেন অনুসন্ধিৎসু এবং পরিশ্রমী সাংবাদিক। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিবেদনের জন্য অনুসন্ধান, তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাতকার গ্রহণ, বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এসব কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর পত্রিকা বের হওয়ার পর তিনি নিজেই বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছে দিতেন। এসব কাজ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম শহরে তাঁর একটি শুভাকাঙ্কী  মহল তৈরী হয়েছিল। পুরো চট্টগ্রাম শহর তিনি ভালোভাবে চিনতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং পরিচয় তৈরীতে সহজে সক্ষম হতেন। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে কৌশলী ভুমিকায় তিনি সফল হতেন। তাঁর পত্রিকায় সাথে জড়িত ছিলেন এবং তার শুভাকাঙ্কীদের মধ্যে ছিলেন, হোটেল আগ্রাবাদের প্রকৌশলী (২০০০ সালে) সাব লে: (অব:) প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বিএন, অধ্যক্ষ শাফায়াত আহমদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল হক, হোটেল সেন্ট মার্টিনের চেয়ারম্যান লায়ন সুফী আহমদ ভুইয়া, প্রফেসর এস.এম. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি নেতা প্রয়াত দস্তগীর চৌধুরীর স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য সাপ্তাহিক ইজতিহাদ সম্পাদক মইনুদ্দিন কাদেরী শওকত, দেশের প্রথম তাঁর রঙের পত্রিকা দৈনিক আল মোজাদ্দেদের চট্টগ্রামের প্রথম ব্যুরো প্রধান খুরশীদ আলম বশীর প্রমুখ।

সাংবাদিক এম. জামাল উদ্দিন ছিলেন সহজ-সরল মানুষ। তার ছিল সাদাসিধে জীবন। খুব বেশী অর্থের চাহিদা ছিল না তাঁর। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার মত অর্থের চাহিদা ছিল। তিনি ছিলেন সহযোগিতা করার মানসিকতাপূর্ণ। বন্ধু-বান্ধব বিভিন্ন মানুষের সমস্যায় এগিয়ে যেতেন। সাধ্যমত সহযোগিতা করতেন। ছিলেন বন্ধু বৎসল, কর্মী অন্তপ্রাণ। তাঁর পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতে আগ্রহী নবীণদের সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তরিক থাকতেন। তার পত্রিকায় অথবা তাঁর সাথে যারা সাংবাদিকতা করতেন তাদের আয়ের ব্যাপারে তিনি পথ দেখিয়ে দিতেন। অনেক সময় নিজের সাথে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতেন। তাঁর মন ছিল এ ধরণের উদার।
এ রকম নিবেদিত মানুষ জীবনের এক পর্যায়ে এসে জীবন চালাতে হিমসিম অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। নিজের অসুস্থতা, সংবাদপত্রের আধিক্য, পুঁজি সংকট এসব কারণে তাঁর পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। তাই জীবন সংগ্রামে তিনি আর্থিকভাবে সফলতা পাননি। অনুমান করা যায় তিনি প্রয়োজনমত চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারেননি।
২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের বেপারী পাড়ায় ভাড়া বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সাথে ২০০০-২০০১ সালের দিকে যারা কাজ করেছেন অথবা বন্ধুত্ব ছিল এমন সাংবাদিকদের মধ্যে তাঁর জানাজায় সাপ্তাহিক পূর্ব বাংলার বর্তমান সম্পাদক এম. আলী হোসেন এবং সাপ্তাহিক পূর্ববার্তার বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক রোকন উদ্দীন আহমদ ছাড়া তেমন কাউকে চোখে পড়েনি। বর্তমানে সাংবাদিকতায় জড়িত কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। একজন সহজ-সরল, বন্ধুবৎসল, সাংবাদিক অন্তপ্রাণ, সাংবাদিক-সম্পাদকের এরকম প্রস্থান কষ্টদায়ক।

 

 

শেয়ার করুনঃ