সাঈদুর রহমান লিটন
বাড়িতে একটি বিড়াল পোষে বাঁধনের আম্মু। যার নাম দিয়েছে মিনি। মিনি মাঝারি বয়সের হলেও খুব চঞ্চল আর দুষ্টু স্বভাবের। বাড়ির সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঁধনের আম্মু তাকে প্রায়ই ডেকে আদর করেন।
একদিন সকালবেলা উঠোনে খেলতে খেলতে মিনি হঠাৎ একটি বড় ইঁদুর দেখতে পেল। ইঁদুরটিকে দেখে তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলল। লাফিয়ে গিয়ে ইঁদুরটিকে ধরে ফেলল । কিন্তু মিনি ইঁদুরকে সঙ্গে সঙ্গে মারল না। বরং ইঁদুরটাকে মাঝখানে রেখে সে দূরে বসে রইল।
ইঁদুরটি একটু নড়লেই মিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে টুপ করে থাবা দিয়ে থামিয়ে দিতে লাগলো । ইঁদুর আবার স্থির হয়ে পড়লে মিনি লুকিয়ে বসে থাকে। যেন ওদের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলছে! মিনি বেশ কয়েকবার এমন করল। শেষ পর্যন্ত ইঁদুরটি আর পালাতে পারল না। মিনি তাকে শান্ত করে একপাশে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখে এল, যেন নিজের ধন নিরাপদে রাখল।
এদিকে এই বাড়ির উঠোনে আরও কিছু অতিথি আসে। প্রতিদিন রোদ উঠলেই শালিক পাখিরা ছুটে আসে। বাঁধনের আম্মু ওদের ডেকে ডেকে ভাত ছড়িয়ে দেন বলে শালিকেরা এখানে বেশ আপন ভেবেই সময় কাটায়। উঠোনের এক কোণে লাউয়ের জাঙলা। বড় বড় পাতার আড়ালে চুপচাপ বসে থাকতে ভালোবাসে মিনি। এখান থেকেই সে শালিকদের আসা-যাওয়া দেখে। একদিন মিনি ভাবল,আজ দেখি শালিকদের সঙ্গে একটু খেলা করি। সে ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে এগোল। শালিকেরা প্রথমে টের পায়নি। হঠাৎ মিনি লাফ দিয়ে একটি শালিককে ধরে ফেলল। শালিকটি ভয় পেয়ে ডানা ঝাপটাতে লাগল। মিনি কিন্তু তাকে কষ্ট দিল না। বরং তাকে মাটিতে রেখে আবার দূরে সরে গেল। শালিকটি উড়তে গেলে আবার মিনি নরম থাবা দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল। এভাবে প্রায় সারাদিন মিনি আর শালিকটির মধ্যে ছোট ছোট দৌড়ঝাঁপ চলতে লাগল। যেন তারা দু’জন অদ্ভুত এক খেলায় মেতেছে। শালিকটি ক্লান্ত হয়ে পড়ল। বিকেলের দিকে মিনি বুঝল, খেলাধুলা অনেক হয়েছে, এবার শালিকটিকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সে শালিকটিকে উঠোনের পাশে শান্তভাবে রেখে দিল। তারপর নিজে গোল হয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে বাঁধনের আম্মু উঠোনে এসে দেখলেন, মিনি আগের মতোই লাউয়ের গাছের নিচে বসে আছে, আর শালিকেরা আবার ভাত খেতে এসেছে। তিনি মিনি’র মাথায় হাত রেখে বললেন, তুই খুব দুষ্টু, আবার খুব চালাকও। মিনি চোখ বন্ধ করে গুরগুর শব্দ করল, যেন বলছে,
এই দুষ্টামিই তো আমার আসল মজা। এভাবেই মিনির সাথে শালিক ও অন্যান্য প্রাণীদের দুষ্টুমি চলতে থাকে প্রতিদিন।



