২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৪৬/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ২:৪৬ অপরাহ্ণ

পবিত্র কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত : আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত ও বরকত

     

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এমন ফজিলতপূর্ণ কিতাব যার প্রতিটি অক্ষর পাঠে আছে সওয়াব। তবে কোরআনের বেশ কিছু
আয়াত ও সুরা এমন আছে যেগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা রাসুলুল্লাহ (সা.)-বিশেষভাবে ইরশাদ করেছেন। এমনই
একটি আয়াতের নাম ‘আয়াতুল কুরসি’। এই আয়াতটিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বর্ণনা
করেছেন। পবিত্র কোরআন শরিফের দ্বিতীয় সুরা বাকারা। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি নামে পরিচিত।
এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে
আল্লাহতাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এটি পাঠ করলে অসংখ্য পুণ্য লাভ হয়।
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল
আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইউ
হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু
হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাডা অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত সবকিছুর ধারক।
তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছ এমন যে
সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া ? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর
জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন)
সম¯ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ
এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা কোনো কঠিন বিষয় নয়। আয়াতুল কুরসি আমরা
অনেকেই মুখস্থ পারি। যারা পারি না তারাও মুখস্থ করে নিতে পারি। আয়াতুল কুরসি কোরআন শরীফের তৃতীয় পারার প্রথম
পৃষ্ঠার একটি আয়াত। সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতটিই হলো আয়াতুল কুরসি। এ আয়াত তেলাওয়াত করতে বেশি হলে
এক মিনিট সময় লাগতে পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচ মিনিট। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয়
করলে এক মহা পুরস্কার লাভ করা সম্ভব হবে। আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াতের আরও ফায়দা রয়েছে-রাতে ঘুমানোর সময়
আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমালে আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার বালা-মসিবত থেকে হেফাজত করেন। যে ব্যক্তি
সকালে আয়াতুল কুরসী পড়বে সে বিকাল হওয়া পর্যন্তজিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে আর যে ব্যক্তি বিকালে
তা পড়বে সে সকাল হওয়া পর্যন্তজিন শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে সেটি হলো আয়াতুল কুরসি।
যে ঘরে এটি পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। কেননা আমরা অন্যমনস্ক হয়ে নামাজ পড়তে থাকি আর
সালাম ফিরিয়েই যে আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে তা ভুলে যাই, কিন্তু মানুষের দিল যখন আল্লাহর দিকে মায়েল হয়ে যায়
তখন তারা ভুলতে পারেনা।
আয়াতুল কুরসিতে মোট ৯টি বাক্য আছে। প্রথম বাক্যের সঙ্গে নবম বাক্য দ্বিতীয়র সঙ্গে অষ্টম বাক্য তৃতীয়র সঙ্গে সপ্তম
বাক্য ও চতুর্থর সঙ্গে ষষ্ঠ বাক্যের অলৌকিক মিল! বাদ পড়ে শুধু পঞ্চম বাক্য। সেটি মাঝে থেকে কী সুন্দরভাবে তার অর্থ ও
অবস্থানকে অর্থবহ করে তোলে। হজরত আবু উমামা (রা.)-থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন : যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ
নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়েন তাঁর জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না। হজরত আবু জর
জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.)-রাসুলুল্লাহকে (সা.)-জিজ্ঞেস করেছিলেন হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে
মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে ? রাসুল (সা.)-বলেছিলেন আয়াতুল কুরসি। আবু হুরাইরা (রা.)-থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন প্রতিটি ব¯তুরই চূড়া আছে। কুরআনের উঁচু চূড়া হলো সূরা আল-বাকারা। এতে এমন
একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতগুলোর প্রধান। তা হলো আয়াতুল কুরসি।
তবে কেউ যদি প্রত্যেক নামাজের পর তা পাঠ করতে না পারে তাহলে অন্তত ফজরের নামাজের পর এবং মাগরিবের
নামাজের পর পাঠ করবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে আল্লাহতাআলা পুরো রাত ও পুরো দিন পাঠকারীকে যাবতীয় বিপদ-
আপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন। আল্লাহ সবাইকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করুন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-
একদিন দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি সদকার মাল চুরি করছে। তখন তিনি তার হাত ধরে বললেন আমি তোমাকে আল্লাহর
রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলে যে সে খুব অভাবী। আবু হুরায়রা (রা.)-তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরদিন সকালে রাসুল (সা.)-এর কাছে আসার পর তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন গতকাল তোমার
অপরাধীকে কী করেছ ? আবু হুরায়রা তখন তাকে ক্ষমা করার কথা বললেন। রাসুল (সা.)-বললেন সে তোমাকে মিথ্যা
বলেছে সে আবার আসবে। পরদিন আবু হুরায়রা চোরকে পাকড়াও করলেন আর বললেন এবার অবশ্যই আমি তোমাকে
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। এবারও সেই চোর বলে যে সে খুব অভাবী আর তার অনেক প্রয়োজন আর শপথ
করে যে আর আসবে না। পরদিন আবারও রাসুল (সা.)-তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একই জবাব দেন আর তখন তিনি
বলেন আসলেই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবারও আসবে। পরদিন আবারও আবু হুরায়রা (রা.)-চোরের জন্য
অপেক্ষা করতে লাগলেন আর যখন সে আবারও চুরি করতে এল তখন তিনি তাকে পাকড়াও করলেন আর বললেন এবার
অবশ্যই আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। চোর যখন দেখল এবার তাকে সত্যিই রাসুল (সা.)-এর
কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তখন অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলে আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন কিছু বলে দেব যার
মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.)-সেটা জানতে চাইলে চোর বলে যখন ঘুমাতে যাবে তখন
আয়াতুল কুরসি পরে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর
কোনো শযতান সকাল পর্যšত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.)-তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরদিন রাসুল (সা.)-আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সা.)-বললেন
যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। রাসুল (সা.)-আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন তুমি কি জানো সে কে ?
আবু হুরায়রা (রা.)-বললেন ‘না’। রাসুল (সা.)-আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন সে হচ্ছে শয়তান।
অনেক সময় দেখবেন এমন লকার থেকে মাল চুরি হয়ে যায় যে লকারের চাবী সে ছাড়া আর কারো কাছে নাই এ ধরনের
চুরি হয়ত শয়তান করে থাকে আর এ ধরনের চুরি থেকে বাঁচার জন্য আয়াতুল কুরসি পড়ে চারদিকে ফুক মারবেন। তেমনি
লকার লক করার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে তাতে ফুক মেরে দিন। আল্লাহতায়ালা একজন ফেরেশতাকে আপনার সে
সম্পদ হেফাজত করার দায়িত্ব দিবেন ফলে কেহ চুরি করতে পারবেনা। শয়তান ও দুষ্ট জিনের ক্ষতি থেকেও নিরাপদ
রাখবেন। তাই প্রতি নামাজ শেষে ঘুমানোর আগে বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি পাঠ করার অভ্যাস করুন।
সুবহানাল্লাহ! পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি এতই বরকতপূর্ণ যে রাসুল (সা.)-বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতি নামাজের পর এই
আয়াত পড়বে সে তার জান্নাতে যেতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। আল্লাহতাআলা আমাদের বেশি বেশি
আয়াতুল কুরসি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। আয়াতুল কুরসীর বিস্ময়কর ফজিলত পাল্টে দিবে আপনার জীবন
ইনশাআল্লাহ।
লেখক : ফখরুল ইসলাম নোমানী, লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply