২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:১২/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ১:১২ অপরাহ্ণ

উন্নয়নের অর্থে দূর্নীতি জনমনে বহু প্রশ্ন

     

মাহমুদুল হক আনসারী
দূর্নীতি আর উন্নয়ন একসাথে নয়। রাজনীতি অর্থনীতি উন্নয়ন ও দূর্নীতি একাকার। রাজনীতির অর্থ জনসেবা। রাজনীতির মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এই সংস্কৃতি এখন আমাদের দেশে রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান। রাজনীতি অর্থ জনগণ যেটি বুঝে সেটি হলো মানবসেবা জনসেবা দেশ ও রাষ্ট্র সেবা। ব্যক্তি রাজনীতি থেকে দলীয় রাজনীতির সকল ক্ষেত্রে জন ও দেশসেবার যেই উদ্দেশ্য এবং সংস্কৃতিতে রাজনীতির উৎপত্তি সেই রাজনীতি এখন বলতে গেলে অদৃশ্য। দেশ স্বাধীনের আগ হতে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত যেসকল নেতা দল নেতৃত্ব জনগণ দেখছিল এবং পেয়েছিল সেই গৌরবজ্জল রাজনীতি ও নেতৃত্ব এখন আর রাজনীতির মাঠে নেই। সেই নেতাও নেই নেতৃত্ব এবং সেই রাজনীতি দেশে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই বর্তমান রাজনীতি দল পরিচালনা নির্বাচন ভোট ভোটার সবকিছুর মধ্যেই একটা বড় ধরনের বিবাধ বিরোধ তৈরি হয়েছে।
রাজনীতি বর্তমান সময়ে দিনে রাতে বেচা বিক্রি হচ্ছে। রাজনীতির কর্মসূচী বক্তব্য শাসকগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনার সাথে সামঞ্জস্য ও পরিকল্পনা করে চালানো হচ্ছে। কর্মসূচী কথা বার্তা আন্দোলন সংগ্রাম সবকিছুতেই ক্ষমতাসীন শাসক দলের নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে পরিচালনার যথেষ্ঠ ইঙ্গিত এবং কার্যকলাপ জনগণ দেখছে। গণতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনা রাজনীতি এইসব বিষয়ে ছিল জনসেবা দেশসেবা রাষ্ট্র পরিচালনা। সেই রাজনীতি রাষ্ট্র পরিচালনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখন মুখ্য উদ্দেশ্য হয়েছে ক্ষমতায় আরোহণ। যেকোনো পন্থায় চিন্তা এবং জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। এই যদি হয় রাজনীতির উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা তাহলে সেই জায়গায় দেশ জনগণের সেবা তাদের সুখ দুঃখ ব্যাথা বেদনা ও সহমর্মিতার স্থান কোথায়। গণতন্ত্র রাজনীতি নির্বাচন ভোটাধিকার এবং মতামত ব্যক্ত করার যেইসব নাগরিক অধিকার সেই অবস্থা পরিবেশ আজকে কোন পর্যায়ে। দিন যত যাচ্ছে নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার রাজনীতির পরিবেশ চরমভাবে বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। কারণ রাজনীতিতে ব্যক্তি দল এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা দেশপ্রেমিক দায়িত্ববোধ হারিয়ে যাচ্ছে।
পথ পদবি জনপ্রতিনিধির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল স্থান এবং পদসমূহ অর্থের মাধ্যমে বেচাবিক্রি হচ্ছে। রাজনীতির পদবি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রধান দলের হাই কমান্ড থেকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্টন হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা নেতৃত্ব পদ পদবি বন্টন উপরের নির্দেশ হাই কমান্ড সিলেকশন করছে। সেখানে শুনা যায় এবং অভিযোগ আছে লাখ ও কোটি টাকার অর্থের লেনদেন হচ্ছে। অর্থের মাধ্যমে পদ পদবির বেচা বিক্রি। নেতার নেতৃত্ব যোগ্যতা রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দেশপ্রেমিক জনদরদী ভ্রাতৃত্ববোধ অর্থের নিকট পরাজিত। যেভাবেই হোক অর্থের বিনিময়ে পদ পদবি চাই। আর সেটি হলো ক্ষমতাসীন দলের হতে হবে। এই সংস্কৃতিতে বর্তমানে রাজনীতি চলতে দেখছি। ফলে রাজনীতি এখন প্রায় কলুষিত। জনগণ বর্তমান প্রচলিত রাজনীতি কর্মসূচী নেতৃত্ব আচার অনুষ্ঠানকে বয়কট করছে। অর্থ ছিটিয়ে কতিপয় দল নেতাকর্মী সংগ্রহ করছে। যতক্ষণ অর্থ বিলি বণ্টন সেই পর্যন্ত নেতাকর্মীর মিলনমেলা অর্থ যেখানে শেষ সেখানে মিলনমেলা আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যায়। রাজনীতিতে এখন আদর্শ চরিত্রবান যোগ্য নেতৃত্বের সব দলের মধ্যেই যথেষ্ঠ অভাব পরিলক্ষিত। যেখানে অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে নেতা নেতৃত্ব পদ পদবি বেচা বিক্রি হয়, সেখানে সঠিক আদর্শ নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া অথবা প্রতিষ্ঠিত করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই রাজনীতিতে দুর্নীতি অর্থ লুটপাত ক্ষমতার ব্যবহারে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, গাড়ি বাড়ি অট্টালিকা সম্পদের মালিক হওয়া কঠিন কোনো বিষয় নয়। রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে যারা ব্যবহার করতে পেরেছে সমাজে তারাই অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে স্থানীয় রাজনীতি পর্যন্ত এখন যেসকল নেতা এমপি মন্ত্রী অথবা স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি তারা বহু অর্থের মালিক। তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তাদের অর্থ সম্পদের যেই পাহাড় সেই জায়গায় জনগণ ভাবনায় না পরে পারেনা। জনগণ যেখানে দুবেলা ডালভাতের সংস্থান করতে পারেনা সেখানে জনপ্রতিনিধিরা কিভাবে এত অর্থ সম্পদের মালিক হয় সে জায়গায় জনগণের মাথা হেট হয়ে যায়। জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনী হলফ নামার হিসেব নিকেষ দেখে জাতি আতকে উঠছে। হায়রে দেশ, হায়রে উন্নয়ন, হায়রে জনগণ। আমরা যাচ্ছি কোথায়, কি আমাদের গন্তব্য। শুধু লুটপাট আর হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশকে অর্থশূর্ণ করে সেই লুটপাটকারীরাই আজকে দেশের নেতা এবং জনপ্রতিনিধি। তারাই আবার নির্বাচন করবে জয়যুক্ত হবে। পুনরায় লুটপাট ও অর্থ পাহাড় গড়ার স্বাদ গ্রহণ করবে। অর্থ লুটপাটের সংবাদে সাধারণ জনমনের মধ্যে চরম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এতো অর্থ পাচার করে আবার তাদের ব্যাপক অর্থ জমা সম্পদ এইসব জনগণ দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। লাখ কোটি টাকার উন্নয়নের দৃশ্যমান চিত্র দেখে একদিকে আনন্দ উদ্দীপনা খুশি অনুভব হলেও পক্ষান্তরে দুর্নীতিবাজদের অর্থ পাচার অর্থের পাহাড় দেখলে অন্তরটা খান খান হয়ে যায়। হায়রে দেশ , এত দুর্নীতি এত অর্থ পাচার স্বাধীনতার এই অর্ধশতকের মধ্যেই। আমাদের সাথে পৃথিবীর যেসকল দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তারা আজকে কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে , আর আমরা কোথায়। আমরা দুর্নীতি , অর্থ পাচার মানবাধিকার লঙ্ঘন জনগনের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ পকেঁস্থ করার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে গেছি। এই সংস্কৃতি থেকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদেরকে জাতিকে ফিরে আসতে হবে। স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি অর্থনীতি পরিচালনা করতে হবে। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতিবাজ আমলা জনপ্রতিনিধি তাদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। দুর্নীতির অর্থ রাষ্ট্রীয় খাতে জনগণের কল্যাণে ফিরিয়ে এনে ব্যয় করতে হবে। সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে দুর্নীতি মুক্ত রাখা চাই প্রত্যাশা জনগণের।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply