২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৫৪/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ২:৫৪ অপরাহ্ণ

আবার এসেছে রমজান মুসলিমদের ঘরে ঘরে

     

মাহমুদুল হক আনসারী
ইসলামের ৫টি মৌলিক স্তম্ভ রয়েছে। তার মধ্যে একটি রমজান মাসের রোজা। দ্বিতীয় হিজরীতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দার উপর রোজা ফরজ করেন। রোজা যদি কোনো মুসলমান অস্বীকার করে তার ঈমান থাকবেনা। শারীরিক অক্ষমতা ছাড়া রোজা পরিত্যাগ করার কোন বিধান নেই। রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন তোমাদের মধ্যে যে রমজান মাস পাবে সে যেন রোজা পালন করে। যদি কেউ অসুস্থ কিংবা সফরে থাকে তবে সে অন্য সময়ে সমান সংখ্যক রোজা রেখে পূরণ করে দেবে। বিশ^নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন রমজানের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মাস আর নেই। ঈমানদারগণ রোজা পালনের মাধ্যমে ঈমানি শক্তি সঞ্চয় করে। পবিত্র কোরআনে পাকে আল্লাহ পাক বলেন হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে রোজা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।
রোজা এমন একটি আল্লাহ প্রদত্ত ইবাদত যেটা আল্লাহ এবং তার বান্দা ছাড়া কেউ জানে না। উপবাসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট বিষয় থেকে বিরত থেকে সত্যিকার অর্থে আল্লাহ বান্দাকে বিশুদ্ধ করতে চান। বান্দার ভোগ, বিলাস, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, কাম, ক্রোধ সবকিছুকেই একটা বিশুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য। রোজার উপবাসের এ সংস্কৃতির মাধ্যমে গরিব এতিম মিসকিন অভাবী ও বুভূক্ক মানুষের ব্যাথা বেদনা অনুধাবন রোজার অন্যতম একটি কারণ। আত্মা আর নফসকে বিশুদ্ধ পরিশুদ্ধ করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যম রোজা। নফসের সাথে সংগ্রাম আর পঞ্চ-ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে রোজা পালন একটি বিশাল সংগ্রাম। যারা এসব নিয়ম নীতি মেনে রোজা পালন করে থাকে তারাই সৃষ্টিকর্তার নিকট মহা বিজয়ী। রোজা পালনের জন্য নির্দিষ্ট সময় ও বিষয়ের সাথে আহার ও ভোগ বিলাসেও বিধান রয়েছে। পবিত্র খাবার গ্রহণ, অপবিত্র আহার বর্জন রোজা পালনকারীর বিশাল একটি গুণ। রোজা পালন যেমনি পবিত্র, ইবাদত তেমনি রোজা রেখে অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম আচার অনুষ্টান থেকে বিরত থাকাও রোজার বৈশিষ্ট্য। পবিত্র রমজান মাস দোয়া কবুল হওয়ার মাস। মনের বাসনা, ইচ্ছে পূরণ হওয়ার মাস। একটি আমলে ৭০টি সওয়াব পাওয়ার মাস।
রমজান মাসে নিত্য-পণ্য গোডাউন জাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইসলামের আলোকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রোজা পালনকারী মুসলমানদের বিরুদ্ধে খাদ্য সংকট তৈরি করে যারাই এমন ধরনের গর্হিত কাজ করবে তারা আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হিসেবে গণ্য হবে। এইসব অপরাধ যারাই সংঘটিত করবে তাদের আয় বৈধ হবে না। তারা দেশ জাতি ও রাষ্ট্রের শত্রæ। মহান আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য সীমাহীন সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। অথচ একটি দুষ্ট চক্র রমজান মাস আসলেই ভোগ্যপণ্যের অবৈধ ভাবে গোডাউন জাত করে। বাজার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অবৈধ মুনাফা আদায় করে জনগণের পকেট কাটে ফলে ভোক্তা জনসাধারণের কষ্টের সীমা থাকে না। সত্যিকারের কোনো ঈমানদার মুসলমান ব্যবসার নামে এধরনের কারসাজি সৃষ্টি করে। তথাকথিত ব্যবসার নামে সংকট যারা সৃষ্টি করছে তারা প্রকৃতপক্ষে সমাজ রাষ্ট্র ও ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধী।
ইসলাম যেকোনো ধরনের অন্যায়, অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরোধী। রমজান মাস এবং রোজাদারদের পুজি করে যে বা যারা ভোগ্য পণ্যের সংকট সৃষ্টি করছে তার সাথে ধর্মের মূল চরিত্রের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। রোজা ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও ঈমানদারদের তাকওয়া খোদার প্রতি ভীতি তৈরি করে। আল্লাহার প্রতি বিশ^াস পরকালের তার পরকালের ভয় এবং জান্নাতের পুরস্কারের সুসংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু রোজা, নামাজ ও হজ¦ ইত্যাদি ধরণের পণ্যের ইবাদাত করে একজন মুসলমান কখনো সমাজ জনগণ রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে অনৈতিক, অযৌক্তিক ব্যবসার নামে অহেতুক পণ্য সংকট মূল্যবৃদ্ধি করতে পারে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ চরিত্রের সাথে এই সব চরিত্র সাংঘর্ষিক।
রমজান মাসের কারণে অহেতুকভাবে পণ্য মজুদ এবং সংকট তৈরি করা যাবে না। মজুদদারীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব ধরনের পণ্য জনসাধারণের জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
রমজান মাসে দিনের বেলায় হোটেলের রোস্তোরা বন্ধ রাখতে হবে। অশ্লীল গানবাজনা, বেহায়াপনা বন্ধ করতে হবে। অফিস টাইম, স্কুল টাইম কর্ম ও শ্রমজীবী জনগণের জন্য নগরকে যানজট মুক্ত রাখতে হবে। দেশের সবগুলো শহরে শ্রমজীবি মানুষ যেনো ঠিক সময়ে কর্মস্থল থেকে গন্তব্যে ফিরতে পারেন তার সঠিক উদ্যোগ থাকতে হবে। ছুটির টাইমে শ্রমজীবি জনগণ যেনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে গিয়ে ইফতার ও সেহেরী রাস্তাঘাটে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাকতে হবে। পর্যাপ্ত শহরে , শিল্পাঞ্চলে ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা ও ফুটপাতকে জনগণের জন্য ভোগান্তিহীন রাখতে হবে।
আসুন ধর্মপালন ধর্মের মর্মবাণি ও চরিত্র যেন ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারি। অন্যথায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় ধর্মের নিয়ন্ত্রণ সমাজে কোনো কাজে আসবেনা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply