২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:৫৭/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ১২:৫৭ অপরাহ্ণ

ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত

     

ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক! শান্তির ধর্ম ইসলাম আর ইসলামে রয়েছে সকল প্রকার দিকনির্দেশনা মানব জীবনের সকল সমাধান নির্ধারিত রয়েছে ইসলামে এবং ইসলামের শান্তির প্রতীক গুলোর মধ্যে রয়েছে সালাম এবং সালাত।
“আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাাহি ওয়াবারাকাতুহ” এর অর্থ হচ্ছে আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। এই সালামকে আমরা সংক্ষেপে “আসসালামু আলাইকুম” বলি। সালামের উত্তর হলো “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকা”-তুহ। অর্থাৎ-আপনার উপরেও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। যার সংক্ষেপ ওয়ালাইকুমুস সালাম। সালাম দেয়া নেয়া কোনো ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। পরস্পর দেখা হলে আমরা একে অপরকে সালাম বিনিময় করে থাকি। সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন মুসলমানের সঙ্গে যখন অন্য মুসলমানের দেখা হয় তখন প্রথমে সালাম করা উচিত। সালাম আরবি শব্দ এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দন জ্ঞাপক, উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন। ‘সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে অন্যতম। (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত : ২৪)।
আল্লাহতাআলা প্রথমে আদি মানব হজরত আদম (আ.)-কে সালাম শিক্ষা দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন আল্লাহতাআলা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে বলেন যাও ফেরেশতাদের সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয় মন দিয়ে শোনো। এটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী হজরত আদম (আ.)-গিয়ে ফেরেশতাদের বলেন আসসালামু আলাইকুম অর্থ আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ফেরেশতারা উত্তরে বলেন আসলামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ অর্থ-আপনার ওপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। অন্যের গৃহে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা বলেছেন হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না করো এবং গৃহবাসীদের সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যাতে তোমরা স্মরণ রাখো। (সুরা-২৪ নূর, আয়াত : ২৭)।
সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যখন দুজন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয় সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায় । সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য। বিশেষ পরিস্থিতিতে সালাম দেওয়া মাকরুহ এবং জবাব দেওয়া জরুরি নয়। যেমন : নামাজরত ব্যক্তি, কোরআন শরিফ তিলাওয়াতকারী, জিকিরকারী, হাদিস পাঠদানকারী, খুতবাদানকারী এবং শ্রবণকারী, ফিকহ নিয়ে আলোচনাকারী, বিচারকাজে ব্যস্ত বিচারক, আজানরত মুয়াজ্জিন, ইকামত দানকারী যখন ইকামত দেন, পাঠদানে ব্যস্ত শিক্ষক, বিবস্ত্র লোক ও প্রাকৃতিক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে। (সুরা-৪ নিসা, আয়াত : ৮৬)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় কর।
সালামের মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় হয়। হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। এ ছাড়া এতে আল্লাহর জিকির পাওয়া যায়। আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। সালাম মুসলিম ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ করে। সালাম মুসলিম ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দোয়া। সালাম মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে এ চুক্তি যে আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনি কোনো কষ্ট পাবেন না। হাদিস শরিফে এসেছে প্রথম সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত। এতে বোঝা যায় আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দারাই সালামের মতো মহৎ গুণে অভ্যস্ত হতে পারে। এর উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে। হজরত আবু উমামাহ (রা.)-থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-বলেছেন মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়। চিঠি বা যেকোনো মাধ্যমে সালাম দিলেও তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। দূতের মাধ্যমে সালাম পাঠালে মুস্তাহাব হলো দূতকেও সালাম দেওয়া এবং এভাবে বলা ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি এসে বললেন আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। এ কথা শুনে রাসুলে আকরাম (সা.)-বললেন তোমার ওপর এবং তোমার পিতার ওপর সালাম। বধির ব্যক্তিদের সালাম দেওয়ার সময় মুখে বলার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ইশারা করতে হবে।
মেশকাতে বর্ণিত আছে একবার এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.)-নিকটে এসে বললেন আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-তার জওয়াব দিয়ে বললেন তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুল (সা.)- তারও জওয়াব দিয়ে বললেন লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।
সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক, আবু হুরায়রা (রা.)-হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (স.)-বলেন এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার তথা কর্তব্য রযেছে। জিজ্ঞেস করা হল হে রাসূল (স.)! সেগুলো কী কী ? তিনি বললেন-যখন তুমি তার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দিবে। সে যখন তোমাকে দাওয়াত দিবে তখন তুমি তার দাওযাত কবুল করবে। সে যখন তোমার কাছে পরামর্শ বা উপদেশ চাইবে তুমি তাকে সৎপরামর্শ দিবে। সে হাঁচি দিয়ে যখন আল-হামদুল্লিাহ বলবে তুমি তার হাঁচির জবাব দিবে। সে যখন অসুস্থ হবে তখন তাকে দেখতে যাবে। সে যখন মারা যাবে তখন তুমি তার সঙ্গী হবে (জানাযা পড়বে ও দাফন করবে)।
সালাম পরস্পরের প্রতি দয়া মায়া, আন্তরিকতা ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ সহমর্মিতা জাগ্রত করে। তখন মানব মনের কোণে অহঙ্কার বড়ত্ব হিংসা বিদ্বেষ, অন্যের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ ইত্যাদি দূরীভূত হয়। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়। ইহজীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে সালামের বিকল্প নেই ।
অর্থাৎ, যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)। সালামের মাধ্যমে আমাদের আখেরাতের পুঁজি সমৃদ্ধ হবে। এবং পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবন হবে শান্তি ও সম্প্রীতির। প্রথমে সালাম প্রদানকারী গর্ব-অহংকার থেকে যেমন মুক্ত থাকে তেমন বিনয়ীও হতে পারে। বিনয আল্লাহর গযব হতে রক্ষা করে তাঁর রহমতের অধিকারী বানায় । অহংকার ব্যক্তিকে কলুষিত করে আর বিনয মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। অহংকার শত্রুতা সৃষ্টি করে আর বিনয় শত্রুকেও পরম বন্ধুতে পরিণত করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অহংকার নামক মারাত্মক ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য সালামের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া। আসুন, সালামের মাধ্যমে পাস্পরিক বন্ধন মজবুত করি। চেনা-অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে বেশি বেশি সালাম বিনিময় করে শান্তি ও কল্যাণ লাভ করি। আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ফখরুল ইসলাম নোমানী, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply