২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:০৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৮:০৯ অপরাহ্ণ

অনলাইন জন্মনিবন্ধন ভোগান্তির শেষ কোথায়

     

মাহমুদুল হক আনসারী
জন্মনিবন্ধন প্রাপ্তি শিশুর অধিকার। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিশুকে জন্মনিবন্ধন দিতে বাধ্য। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জন্মমৃত্যু সনদ নাগরিককে প্রদান করা। অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের পূর্বে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন ইউপি পরিষদ , পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনে নাগরিকদের দেয়া হতো। একই জন্ম নিবন্ধন এখন ডিজিটালাইজ করে অনলাইনে প্রদান করার কর্মসূচী বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে। অনলাইন জন্মনিবন্ধন ছাড়া একজন শিশু চিকিৎসা থেকে স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত নানা কর্মকান্ডে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে ভর্তির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সনদ স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হচ্ছে। ফলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন এটা জরুরি ভিত্তিক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক বাংলাদেশের জন্মসনদ। সরকারী সার্কুলার অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে , পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন সব সেক্টরে  স্হানীয় নাগরিকের জন্য জন্মনিবন্ধন , মৃত্যুসনদ , অনলাইনে পাওয়ার এবং গ্রহণ করার একটা নিয়মনীতি দেয়া হয়েছে। সমস্ত নিয়মনীতি অনুসরণ করে একজন গ্রাহক অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার পর তিনদিন থেকে শুরু করে তিনমাস পর্যন্ত দৌঁড়াদৌঁড়ি করেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন হাতে পাচ্ছেনা। নানা জটিলতা , ভোগান্তি , অবৈধ অর্থের রমরমা বাণিজ্যের কথা পত্রিকার মাধ্যমে সারাদেশের চিত্র জানা যায়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১০ নং চাম্বল ইউপি কার্যালয়ে স্হানীয় এক নাগরিক আশিকুল্লাহ চৌধুরীর সন্তানের অনলাইনে জন্মনিবন্ধন আনতে গিয়ে অবৈধভাবে ঘুষ চাওয়াতে , ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী ,পরিষদের সচিব ফয়সাল আহমদ, কম্পিউটার অপারেটর সৌরভ , টাকার প্রস্তাবের কারণে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আশিকুল্লাহ চৌধুরী ৯৯৯ এ ফোন করে তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়। বাঁশখালী থানার পুলিশ এসে চেয়ারম্যান এবং তার বাহিনী থেকে তাকে মুক্ত করে ছেড়ে আনে। এ বিষয়ে অভিযোগ আকারে আবেদন করেছে আশিকুল্লাহ চৌধুরী। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বরাবরে, ৮ ফেব্রুয়ারী একটি অভিযোগ দায়ের করেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। সে অভিযোগে তিনি তার সাথে চেয়ারম্যান কর্তৃক তার বাহিনী দিয়ে তার ওপর শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভিআইপি টাওয়ারের ব্যবসায়ী ৮ নং শোলকবহর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসমত আলী অভিযোগ করেছেন। তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে পারছেনা অনলাইন জন্মনিবন্ধনের জন্য। তিনি দুই মাস পূর্বে অনলাইনে আবেদন করেও এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে অনলাইন জন্মনিবন্ধন নিতে পারেননি। তাকে প্রতি সপ্তাহে সময় দিয়ে আসা যাওয়া করা হচ্ছে। এর মধ্যে সন্তানের ভর্তির সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এখনো তিনি সন্তানের অনলাইন জন্মনিবন্ধন কাউন্সিল অফিস থেকে পায়নি। ঘুষ এবং উৎকুচ যেটায় হউক নগদ টাকার লেনদেনের পরেও সন্তানের জন্য জন্মনিবন্ধন প্রাপ্তি কঠিন একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের সংবাদ লেখালেখি অনেক হয়েছে। অনলাইন জন্মনিবন্ধনের জন্য সারাদেশে কোনো না কোনো এলাকায় হরহামেশা  স্হানীয় প্রশাসনের সাথে নাগরিকের , নানা ধরনের হৈ-হাঙ্গামা বিশৃংখল পরিস্হিতি তৈরি হচ্ছে। সহজ একটি বিষয় নিয়ে  স্হানীয় প্রশাসন এবং নাগরিকের মধ্যে , অধিকার নিয়ে এতো বিশৃংখলার কারণ ও হেতুকি বুঝে আসছেনা। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি যে , সেটি হচ্ছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগণের আশ্রয়। তারা এদেশে বস্তচ্যুত হয়ে আসার পর থেকে , বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের নাগরিকদের ওপর এক প্রকার প্রশাসনিক বাক-বিতন্ডা বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। এর প্রভাব সারা বাংলাদেশে এখন বিস্তৃতি লাভ করেছে। মনে হয়ে যেনো রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম বিভাগের স্হায়ী বাসিন্দাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। প্রশাসনের নানা সেক্টর , যেমন- পাসপোর্ট অফিস, থানা-পুলিশ, সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনীর নানা সেক্টরে চট্টগ্রামের নাগরিকগণ তাদের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মোটেও চট্টগ্রামবাসী এসবের জন্য প্রস্তুত না। চট্টগ্রাম বিভাগ ,এ অঞ্চলের মানুষ অতীব আদর যত্নের মাধ্যমে অতিথি হিসেবে রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিয়েছে। জমি, ভিটা-বাড়ি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ সরকারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, চট্টগ্রামের মানুষদেরকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব চিন্তা করা দরকার। কোনোভাবেই যাতে এদেশের কোনো নাগরিক তাদের কারণে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে।
নির্বাচন কার্যালয়ে চট্টগ্রামের মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সেখানেও এ অঞ্চলের ভোটারগণ তাদের অধিকার মতো নির্দ্বিধায় সমস্ত ধরনের তথ্য দেয়ার পরও নানাভাবে জটিলতার মধ্যে পড়ে। এ অঞ্চলের জন্য এসব দপ্তর নানা ধরনের তথ্য যাচাই বাচাই করছে। যা বাংলাদেশের অন্যসব এলাকায় করা হয় না। এসব বিষয় চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রশাসনের দপ্তরে ভোগান্তির সাথে মোকাবেলা করছে। এসবের একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সমাধান দরকার। জনভোগান্তি নানাভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন জন্মনিবন্ধন , ভোটার হওয়া , পাসপোর্ট প্রাপ্তি তিন জায়গায় চট্টগ্রামের মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার। এ ধরনের ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে বসে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে , তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রাপ্তি সহজতর করতে হবে। যেসব ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্হানে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে সংঘটিত হচ্ছে, সেসব ঘটনার সাথে প্রশাসনের যারাই জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হউক। কোনো জনপ্রতিনিধি স্হানীয় এলাকার জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করলে তাকেও বিচারের আওতায় আনা হউক। আইনকে সকলের জন্য সমানভাবে ব্যবহার করা হউক। অনলাইন জন্মনিবন্ধন প্রাপ্তিকে সহজ ও সহজলভ্যভাবে পাওয়ার ব্যবস্হা করা হউক।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply