২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:৫৮/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ৬:৫৮ অপরাহ্ণ

সরকার বনাম আমজনতা

     

মাহমুদুলহকআনসারী

সরকার এবং জনগণ একে অপরের সহযোগী। জনগণ ছাড়া সরকার হয় না। সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে চলতে পারেনা। সরকার জনগণের জন্য , জনগণ সরকারের জন্য। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সরকারআছে। সরকারের কাজ হলো দেশ এবং জনগণের সেবা দেয়া। সরকার নির্বাচিত হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। সরকারের মধ্যে আম জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে। জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেখানে থাকবে সেখানে জনগণের সুখ-দুঃখের বিচার বিশ্লেষণ হয়ে থাকে। জনগণের সরকার না হলে , সে সরকার যদি জোর-জবরদস্তি ক্ষমতাসীন হয় , সেখানে জনগণের সুখ-দুঃখের বিচার-বিশ্লেষণ থাকেনা। জনগণকে যেভাবেই হউক সরকারের নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। বৈধ অবৈধ যেভাবেই সরকার প্রতিষ্ঠিত হউক না কেন , অবশ্যই জনগণকে সে সরকারের প্রতি অনুগত থাকতে হয়। সরকার ছাড়া দেশ চলেনা। জনগণের মতামত ছাড়া সরকার টিকে থাকতে পারেনা। যেভাবেই হউক , গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের মতামতেরউপর নির্ভর হয়ে সরকার গঠন করতে হয়। সরকার গঠন করার জন্য নির্বাচন , নির্বাচন কমিশনএকটি স্বাধীন দেশে থাকে। তারাই সরকার গঠনে জনগণএবংসরকারের মধ্যে একটি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করে। মূলতঃ দেশকে সঠিক নিয়মে সুশৃংখলভাবে অব্যাহতভাবে পরিচালনার জন্য একটা সরকার গণতান্ত্রিক দেশে থাকতে হয়। সে সরকার জনগণের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা প্রয়োজন সবকিছু তদারকী করে থাকে। জনগণকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অনেকগুলো মন্ত্রণালয় গণতান্ত্রিক দেশে থাকে। সরকারের মধ্যে বেশকিছু ডিপার্টমেন্ট জনগণের জন্য থাকে।

এসব মন্ত্রণালয় এবংবিভাগে কতিপয় জনপ্রতিনিধিকে নিয়োগ দিয়ে মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। সে মন্ত্রণালয় দেশ এবং জনগণের পক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী প্রণয়ন এবংবাস্তবায়ন করে থাকে। এসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছোট ছোটঅনেকগুলো শাখা-প্রশাখা জনগণের পক্ষেকাজকরে থাকে। এসবপ্রতিষ্ঠানজাতীয়এবং স্থানীয়ভাবে জনমতামত জরীপ পূর্বক জনগণের জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে। যেটা আম-জনতার জন্য কল্যাণকর সেটাই এসব সংস্থা বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হয়। আমার বক্তব্য হচ্ছে বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ নামক এক মহামারী পৃথিবীর মানুষকে থমকে দিয়েছে। এ মহামারীর কারণে সারা দুনিয়ার প্রায় মানুষ আক্রান্ত এবং সুস্থ  থাকা মানুষগুলো নানাভাবে জটিলতা এবং ভোগান্তির মধ্যে আছে। মহামারীর বিভিন্ন আকৃতির পরিবর্তন হয়ে নানাভাবেএখনো বিস্তার অব্যাহতআছে। ব্যবসা-বাণিজ্য,শিল্পকারখানার উৎপাদন বিপণন সব কিছুর মধ্যে একটা স্তব্ধতা পরিলক্ষিত। সচলতার মধ্যে দূর্বলতা অব্যাহতআছে। যে পরিমাণ শিল্প-কারখানার ব্যবসা-বাণিজ্য হওয়ার কথাছিলো সে হিসেবে তা হচ্ছেনা। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে চাকুরীজীবি ব্যবসায়ী সব শ্রেণী পেশার কর্মজীবির মধ্যে অস্থিরতা অভাব-অনটন , মহামারীর কারণে এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান।

এ পরিস্থিতিতে আম-জনতার জন্য গণতান্ত্রিক সরকারকে যেখানে ভর্তুকী দিয়ে নিত্যপণ্য, সাধারণপণ্য , অপরিহার্য পণ্য সবকিছু জনগণের নাগালের মধ্যে রাখার কথা ছিলো সেটা আমাদের দেশে দেখছিনা। একদিকে সবশ্রেণী পেশার মানুষের আয়-রোজগারের মধ্যে সীমাবদ্ধতা , কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনভাতা কর্তন , চাকরী থেকে ছাটাই হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থানের চরম অভাব । সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তা রাজস্ব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন , তা দিয়ে তাদের মোটামুটি পরিবার-পরিজন সামলানো সম্ভব হয়। অপরাপর পেশাজীবি নাগরিকের আয়-ইনকামের সাথে প্রচলিত বাজারের বাজার মূল্যের সাথে মোটেও মিল নেই। সরকারী চাকরীজীবি বাদ দিয়ে বাকি সব  বেসরকরী চাকরীজীবিরা কেউ বর্তমান সময়ে ভালো নেই। একদিকে দ্রব্যমূল্যের হু হুকরে উর্ধ্বগতি , অপরদিকে  বেতনভাতা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। তুলনামূলকভাবে সরকারী চাকরীজীবিরা বেতনভাতা পেনশন সবকিছুতেই ভালো আছে। এর বাইরে আম-জনতা সকলেই চরমভাবে কষ্ট এবং ভোগান্তির মধ্যে জীবন-যাপন করছে। তারা তাদের সমস্যা ব্যাথা-বেদনার কথা কাউকেই বলতে পারছেনা। বাজারের সমস্ত ধরনের নিত্যপণ্যের দাম হরহামেশা বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎের দাম ,গ্যাসের মূল্য , পানিরমূল্য সবকিছু বাড়ানো হচ্ছে। শুধুই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহতভাবে চলছে। যা দেখার কেউ নেই। সরকারী বেসরকারী কতিপয় তদারকী  সংস্থা , থাকলেও বাস্তবে জনগণের পক্ষে কোনো বিচার বা সমাধান ফলপ্রসু হচ্ছে না। কৃষক কৃষিপণ্য উৎপাদনকরেই যাচ্ছে, কিন্তু   অধিকার মূল্য পাচ্ছে না। কৃষককে অতিরিক্ত বাড়তি মূল্য দিয়ে নিত্যপণ্য বাজার দোকান থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে। এ শোষণ কে এবং কারা করছে ? তারাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রতিদিন বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা লুট করে জনগণের পকে টকাটা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। আম-জনতার পক্ষে কেউ নেই। সরকার আছে, নাকি নেই। একদিকে বিভিন্ন সেবামূলক পণ্য থেকে সরকার মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটছে, অপরদিকে নিত্যপণ্যের বাজার থেকে অঘোষিতভাবে কালোবাজারীরা আম-জনতার পকেট কাটছে। এভাবেএকটা দেশ চলতে পারেনা। আদর্শিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র এমন হয়না। জনগণের মধ্যে সমতা ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করতেহবে। একশ্রেণীর স্বল্প-সংখ্যক জনগণ সবকিছু ভোগ করবে , অন্যদিকে আম-জনগণ হাহাকারের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থনৈতিক ভোগান্তির মধ্যে জীবন কাটাবে তা হয়না। এভাবে গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র চলতে পারেনা। রাষ্ট্রকে জনবান্ধব হতে হবে। গণতান্ত্রিকনিয়ম-নীতির মধ্যে আম-জনতার কল্যাণে রাষ্ট্র চালাতে হবে। উন্নয়নের সমস্ত কর্মসূচী পরিকল্পনা আম-জনতার সুখ-দুঃখের নীরিখেই বিচার-বিশ্লেষণ চায় দেশের জনগণ।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply