নুসরাতদের জীবন আর কতো যাবে ?
মাহমুদুল হক আনসারী
বাংলার একটি হাসি খুশি মুখের নাম নুসরাত জাহান রাফি। রাফি তার ডাকনাম। সবাই তাকে রাফি নামেই ডাকত। রাফি ছিলো পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তান। পরিবার এবং তার স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে সে একজন বড় মাপের মানুষ হবে। রাফি পরিবারের কাছে যেমন ভাবে প্রিয় ছিলো একইভাবে সহপাঠী আশপাশের সমাজের অন্যদের কাছেও প্রিয় ও আদরের রাফি ছিলো। অন্য ছাত্রছাত্রীদের মতো রাফি ক্লাস এবং পরীক্ষায় নিয়মিত এটেন্ড করতো। সহকর্মীদের নিকট সে ছিলো মেধাবী, সৎ ও নিষ্টাবান একজন রাফি। জানা যায়, রাফি তার পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী ছিলো। সে কখনো ক্লাস পরীক্ষা ফাঁকি দিতো না। মাদ্রাসার ক্লাস পরীক্ষায় সে সবসময় ভালো রেজাল্ট করতো। ছাত্র শিক্ষক সকলের নিকট রাফি ছিলো মেধাবী একটি মুখ। সবসময় সে হাস্যজ্জোল থাকতো। রাফিদের পরিবারে রাফি ছিলো অহংকারের একটি নাম। কিন্তু রাফি তার আশা পূরণ করতে পারল না। রাফির উপর কু-নজর পড়ল সে মাদ্রাসার কুখ্যাত নরঘাতক অধ্যক্ষের। জানা যায়, এ কুখ্যাত অধ্যক্ষ আরো অনেক ছাত্রীদের সাথে কু সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলো। এ নরপশু অধ্যক্ষের নামে জাতির একটি কলঙ্ক। আজকের এ দিনের ইতিহাসে সারা দেশের অধ্যক্ষের নামের এ কলঙ্ক একটি জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করল। জঘন্য এ ব্যাক্তি এবং এ ষড়যন্ত্র ও হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে কী বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। দেশের অজ গাঁ গ্রামে এ জাতীয় আরো অনেক নরপশু মানুষ নামে বিচরণ করছে। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাফিদের মতো অনেক প্রতিভা এসব নরপশুদের লালসার শিকার হয়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করতে পারছে না। অনেক খবর এ ধরনের থাকলেও পত্রিকার কাগজে ছাপা হয় না। চাপা পড়ে যায় এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধের সংবাদ। এসব বিষয় রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে অসংখ্য রাফিদের মতো নারী শিক্ষার্থী মাঝ পথে শিক্ষাজীবন থেকে জীবন ও ইজ্জত বাঁচাতে ছিটকে পড়েন। হায় সমাজ! হায় শিক্ষক নামের কলঙ্ক? সমাজ, রাষ্ট্র ও সমাজকে আলোকিত করার কারিগর জাতির কর্ণধার হাতেগোনা কয়েকজন কুখ্যাত শিক্ষক নামের নরপশুর জন্য নারী শিক্ষার অগ্রগতি কী থেমে যাবে? না কখনো নারী জাতি মায়ের জাতি বিশাল এই গোষ্ঠীকে কখনো শিক্ষার আলো থেকে পিছে রাখা যাবে না। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, মহান সংসদের স্পিকার নারী। গৌরবের সাথে তাঁরা শাসন উন্নয়নে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্টানে অসংখ্য নারী গৌরবও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে নিষ্টা, পরিশ্রম, সততার সাথে জাতিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়ন পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত অনেক সম্প্রসারিত। মহান সংসদে নারী সদস্যগণ অত্যন্ত বুদ্ধিভিত্তিক তীক্ষ্মতার সাথে রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নয়নে নারী জাতির অবদান ক্রমেই এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ নারী শিক্ষায় ও অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। নারী যখন সব দিকে এগিয়ে চলছে তখন এ জাতিকে পিছিয়ে রাখতে একটি কুখ্যাত ষড়যন্ত্রকারী নরপশু এ ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে উৎপেতে আছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেশের আপামর জনগণের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে রাফির হত্যাচেষ্টার সংবাদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিক সব রকমের চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে যত ধরনের উন্নত চিকিৎসা ছিলো সব চিকিৎসার সুযোগ তাঁর কাছে দেয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নুসরাত জাহান রাফিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না। সমাজ রাষ্ট্র আজ গভীরভাবে মর্মাহত। রাফির জন্য শোকের ভাষা আমার জানা নেই। কাঁদছে পরিবার, কাঁদছে সমাজ, কাঁদছে রাষ্ট্র। তাৎক্ষণিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার যোগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাফির চিকিৎসা এবং কুখ্যাত নরপশু সে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আইনের আওতায় এনে বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই বিচার দেখতে চাই। অতীতে আরো বহুসংখ্যক নারী এভাবে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু সমাজ তাদের সঠিক বিচার দেখতে পায় নি। সে জন্য সুশীল সমাজ আপামর জনগণ উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠিত। যথাসময়ে যদি আইনের আওতায় এনে এসব নরপশুদের বিচার করা হতো তাহলে হয়তো নতুন নতুন রাফিদেরকে এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে হতো না। যত দ্রুত সম্ভব সর্বোচ্চ ও প্রকাশ্য শাস্তি দিয়ে কুখ্যাত এসব মানুষ নামক নরপশুদের বিচার দেখতে চায় সমাজ। রাষ্ট্রের নিকট দেশের অভিভাবক মহলের আবেদন আর যেনো কোনো নারীকে লালসার শিকারী হতে না হয়। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্টানে যেনো নজরদারি রাখা হয়। অসৎ দুশ্চরিত্র শিক্ষকদের কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে তালিকা তৈরী করে পবিত্র অঙ্গন শিক্ষা ক্যাম্পাস থেকে তাদের যেনো বের করে দেয়া হয়। চারিত্রিক উন্নত আদর্শ ব্যাতিরেকে কাউকে যেনো শিক্ষানামক এ সেক্টরে নিয়োগ দেয়া না হয়। শিক্ষক নিয়োগের সময় তাদের ছাত্রজীবনের কর্মকান্ড যেনো পযার্লোচনা করা হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় নৈতিকতা বিবর্জিত কোনো শিক্ষককে যেনো পবিত্র অঙ্গন শিক্ষা সেক্টরে নিয়োগ দেয়া না হয় সে বিষয় এখন গুরুত্বের সাথে জাতিকে দেখতে হবে। শিক্ষাকে পবিত্র রাখতে হবে। শিক্ষাঙ্গনের সমস্ত সেক্টর সন্ত্রাসমুক্ত ও দখলমুক্ত রাখতে হবে। রাজনীতির নামে দখল ও বেদখল, শিক্ষাঙ্গনে দেখতে চায় না। আমার ছেলে আমার সন্তানরা নিরাপদে শিক্ষাজীবন শেষ করে পরিবার ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ফিরে আসুক সেটাই এদেশের অভিভাবক মহলের বাসনা। সে চিন্তা চেতনা পাওয়া যেনো অভিভাবক ও সমাজ পায় সে নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে কঠোরভাবে দিতে হবে। নীতি নৈতিকতার কেন্দ্র শিক্ষাঙ্গন থেকে সব ধরনের অনৈতিকতা বন্ধ করতে হবে। নুসরাত জাহান রাফির প্রতি জাতির পক্ষ থেকে তার এই অকাল মৃত্যুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ক্ষমা করে দাও রাফি, ক্ষমা করো পরিবার পরিজন। রাফির আত্মার শান্তি, শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীরভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি সমাজের পক্ষ থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের সব সেক্টরের যারা রাফিকে বাঁচাতে অবিশ্রান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। অবিলম্বে স্বল্প সময়ে কুখ্যাত অধ্যক্ষের নামে কলঙ্ক নরপশু ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের প্রকাশ্য কঠোরভাবে বিচার দেখতে চায় জাতি।