১ মে ২০২৪ / ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:১৪/ বুধবার
মে ১, ২০২৪ ২:১৪ অপরাহ্ণ

সাংবাদিক এবং সম্পাদকগণ দায়িত্বশীল আচরণ করুন

     

মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন

২১ এপ্রিল ২০১৯ বাংলাদেশের প্রায় সকল পত্রিকা, পোর্টাল এবং টেলিভিশনের  খবর সিনিয়র সাংবাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক খন্ডকালীন শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বর্তমান শিক্ষক ও ৬০ এর দশকের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজ উল্লাহ মারা গেছেন। কিন্তু পরে জানা গেল যে, তিনি মারা যান নি বেঁচে আছেন। অথচ সংবাদটি বাংলাদেশের আকাশ বাতাস সহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে গেছে। ফেইসবুক ছেয়ে গেছে শোকের স্ট্যাটাসে।

সাংবাদিকদের এবং পত্রিকার সম্পাদকদের অন্তত এটুকু দায়িত্ব ছিল না কি যে তার পরিবারের কাছ থেকে খবর নেয়া? একজন মানুষকে মৃত বলার পরে যদি বলেন সে লোকটি বেঁচে আছেন তাও একজন সাংবাদিককে বিষয়টি কি দুঃখজনক নয়? ফলে এ ধরণের সংবাদপত্র এবং অন্যান্য মিডিয়ার প্রতি মানুষের যে অনাস্থা সৃষ্টি হবে এবং হয়েছে নিশ্চয়ই বুঝা যাচ্ছে। তখন পত্রিকাগুলো, পোর্টালগুলো এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ভাবা হবে সেই রাখালের মতো যে কিনা মিথ্যা বলে চেঁচাতো, বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে পরে নিজেরই ক্ষতি হলো।
আমরা এর আগেও দেখেছি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক রাজ রাজ্জাককেও জীবিত থাকা অবস্থায় মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল মিডিয়ায়, পরে তার  ছেলে নায়ক সম্রাট যখন বিষয়টি জানতে পারলো সে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানালো, ‘বাবা বেঁচে আছেন। আপনারা কেন না জেনে মিথ্যাচার করছেন।’ কয়েকদিন আগে চলচ্চিত্র জগতের আরেক কিংবদন্তি, পরিচালক, নির্মাতা ও অভিনেতা কাজী হায়াত কেও মিডিয়া মৃত ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার ছেলে মারুফ বিষয়টি শুনার পরে জানালো বাবাতো বেঁচে আছেন।

এখন সংবাদপত্রগুলো এবং পোর্টালগুলোর সবচেয়ে খারাপ দিক হিসেবে যেটি নজরে পড়ে সেটি হল- যে নিউজ টি বা বিষয়টি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়, সেটি তারা দ্রুত নিজেদের সাইটে পাবলিশ করেন, যাতে পাবলিক বেশি খায়। পাবলিক যাতে আপনার পোর্টাল বা পত্রিকার পেইজ থেকে ফেইসবুকে বা অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বেশি শেয়ার দেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা এবং সম্পাদকরা আমি মনে করি দু’টাকা মোবাইলে খরচ করে নিউজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নিউজের সাথে যারা জড়িত তাদের ফোন দেয়াও প্রয়োজন বোধ করেন না। সত্যতা যাচাইবিহীন ভাইরালের পিছু ছুটার কারণে আজ নিউজের সত্যতা হুমকির মুখে। যেটি আদৌ কাম্য নয়। একসময় পত্রিকা ছিল না । পরে পত্রিকা আসলো, টেলিভিশন আসলো এখন আবার পোর্টাল, যার ফলে মিডিয়ায় আয় যদিও কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে এটি আমরা বুঝতে পারি তাই বলে তো আর একজন জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে ফেলতে কেউ পারেন না। তাহলে আপনাদের টেলিভিশন, পত্রিকা বা পোর্টালের অন্যান্য নিউজের প্রতি আস্থা রাখা কি আদৌ সম্ভব হবে?

মাহফুজ উল্লাহর ঘটনায় সবচেয়ে উদ্ভুদ বিষয় ছিল এটি যে, কোনো সত্যতা যাচাই না করেই কিছু টিভি চ্যানেলের পোর্টালও লিখলেন, ‘সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ মারা গেছেন। বিস্তারিত আসছে….’ কিন্তু তারা যখন জানতে পারলো বাস্তবে উনি মারা যান নি তখন আবার তারাই তাদের টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার নিল। আর এখন আর কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে, পত্রিকা এবং পোর্টালে তার মৃত্যুর খবর নেই সবাই ডিলেট করে দিয়েছেন, নিজেদের মানহানির মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য।
যাই হোক পরিশেষে, সকল টেলিভিশন চ্যানেল, পত্রিকা এবং পোর্টালের সাংবাদিক ও সম্পাদকগণের কাছে অনুরোধ থাকবে জীবিতকে আর মৃত বানাবেন না। নিউজের এবং ভাইরালের সত্যতা যাচাই করুন। কারণ সবাই আপনাদের কাছ থেকে সত্য ও অনুসন্ধানী সংবাদ আশা করে। তাই আপনারা দায়িত্বশীল আচরণ করুণ।

সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply