২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:৩১/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ২:৩১ অপরাহ্ণ

জাগো মুসলমান

     

মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন আল—মালেকী

বিধর্মী আগ্রাসনি শক্তি, ইসলাম কে সমূলে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এ সময়ে দ্বীন—ইসলাম ও মাজহাব—মিল্লাত রক্ষা করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। কিন্তু আলেমরা নানান মতবাদ ও ফতোয়া দিয়ে মুসলমানদের নানান দলে বিভক্ত করে রেখেছে। এদিকে বর্ষার মুষলধারে বৃষ্টির মত ইহুদীরা গাজায় সহ নানান দেশে ও স্থানে গোলা—বারুদ বর্ষণ করে মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বাংলাদেশের কওমী, সুন্নী, লা—মাজহাবী ও জামাতির বাড়াবাড়ি ও দূরত্বে সাধারণ মুমিন—মুসলমান অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঈমান ও আমল বিধ্বংসী মতবাদ নিয়ে ছদ্মবেশী ও নামধারী কিছু মুনাফিক ইসলামে ঢুকে পড়েছে। তারা ইসরাঈল প্রেমী। তারা এমন এমন মতবাদ বাজারজাত করছে যা পূর্ববর্তী কেউ পালনও করেনি; এমনকি আমলও করেনি। তাদের ভাষ্যমতে, পূর্ববর্তী সকল মুসলিম দোযখে যাবে। আর তাদের মতবাদ গ্রহণ করলে সকলি জান্নাতে যাবে। জান্নাত জাহান্নামের টিকেট নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। আর কিছু সম্প্রদায়, যারা ধর্মের মধ্যে এমন বিদয়াতের প্রচলন ঘটাচ্ছে যা অদূর ভবিষতে মানুষ দ্বীনের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করবে। অথচ তা দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। আর কিছু সম্প্রদায়, যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইসলাম কে ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। অথচ দিনদিন মুসলমানদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বিধর্মী পরাশক্তির কাছে মুসলমানরা জিম্মি হয়ে পরাজয় বরণ করছে। নিজেদের ঐতিহ্য, গৌরব, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্ব দিনদিন হারাচ্ছে। ঈমানদারদের কোণঠাসা করে মূর্খদের মসনদে বসাচ্ছে নামধারী মুসলমানরা। মুসলমান ভাই—বোনের রক্তের উপর পা দিয়ে বির্ধমীর পক্ষে সরব ভূমিকা পালন করছে একদল মুসলিম সম্প্রদায়। এ কঠিন সময়ে কুরআন ও সুন্নাহ’র বিপরীতমুখী নানান কুসংস্কার কে ইসলামের মানদন্ড হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে একদল ভ্রান্ত মতবাদী গোষ্ঠী। যেসময় মানুষ, সকালে ঘর থেকে বের হচ্ছে ঈমানদার হয়ে; সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছে বেঈমান হয়ে। এ প্রজন্ম, পাশ্চাত্যের বেহায়াপনা কৃষ্টি—কালচার কে ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। ইসলামের দর্শন কী? সুন্নতে নববী দ.’র আদর্শ কী? মুসলিম জাতির ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন ও ধর্মীয় জীবন প্রণালী কেমন হওয়া দরকার তা ইসলাম প্রিয় মানুষগণ ভুলে যাচ্ছে! দলীয় কোন্দল ও বিপরীত মুখী আক্বিদা পোষণ করার কারণে এ সবের সঠিক রূপরেখা বর্তমান প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে আলেম সমাজ। যার কারণে মুসলিম জাতিসত্তা দিনদিন অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্বীনের প্রকৃত পালনীয় ও করণীয় বিষয়াদি চর্চা ব্যতিরেখে অতিরিক্ত বিষয় গুলোকে ইসলামের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় বানিয়ে নিচ্ছে একদল আলেম। ইসলামের ভাষ্যমতে, এক মুমিন আরেক মুমিনের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতন। কিন্তু এ শিক্ষা মুসলমানরা ভুলে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কাদাছুড়াছুড়ি ও হিংসা—বিদ্বেষ ছড়াছড়িতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে, চীনের শিনজিয়ান প্রদেশের উইঘুর মুসলমানদের, বার্মার আরাকানে, ফিলিস্তিনের গাজায় ও হামাসে প্রতিদিন—রাত ইহুদীদের নির্যাতনে হাজারো প্রাণ অকালে ঝড়ে যাচ্ছে, নারীরা কুমারিত্ব হারাচ্ছে, যৌনলিপ্সার স্বীকার হচ্ছে, আত্মীয় স্বজন হারাচ্ছে, ঘর—বাড়ী হারাচ্ছে, ক্ষুধার্ত হয়ে বা পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছে । এমনকি ঠিকমত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এ জালিম ইহুদীরা। এ বীভৎস চিত্র মুসলমানদের চোখে দৃশ্যমান হলেও না দেখার ভান করছে। এসব নির্যাতনের আর্তনাতের আওয়াজে আকাশ—বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে; অথচ তাদের কানে এ আওয়াজ পৌঁছাচ্ছেনা। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জিহাদের কথা আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বারবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুসলমানরা এখনো আসহাবে কাহাফের মত আজব ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। পীর—আউলিয়া ও প্রকৃত আলেমগণ আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত রাখার জন্য নিজেদের জীবনকে উৎস্বর্গ করেছেন। মুসলমানরা বীরের জাতি; কিন্তু বর্তমানে ভীতুর জাতিতে পরিণত হচ্ছে। এ দায়ভার আলেমদের কাঁধে বর্তাবে। কারণ তাঁরা ইসলামের সঠিক বার্তা জাতির সামনে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহ হেফাজত করবেন ঠিকই; কিন্তু মুসলমানদের একত্রিত ও সংঘবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। শায়খুল হাদিস, শহীদ, আল্লামা শাহ্ আবদুল মালেক আল—কুতুবী রহ. বলেছিলেন, “অদূর ভবিষতে; বার্মার আরকান রাজ্য হতে আফগান পর্যন্ত ইসলামের বিজয়ের পতাকা পতপত করে ওড়বে। ভারত বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত হয়ে খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে। বাংলাদেশে সর্বদলীয় ঐক্যজোট তথা ৩✘১২=৩৬ (ছত্রিশ) জন বিশিষ্ট সরকার গঠন হবে; তখনি এ দেশে শান্তি ফিরে আসবে।” মুসলমানদের উচিত আল্লাহর ঘর বায়তুল মুকাদ্দাস; রক্ষায় ফিলিস্তিন ভাইদের সহযোগিতা করা। বাংলাদেশর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অসংখ্য আরকানী মুসলমানদের এ বাংলায় থাকার ব্যবস্থা করেছেন এবং সবসময় ফিলিস্তিন সরকারের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের হাত মুসলিম বাসীর জন্য আরো সম্প্রসারিত হোক। আল্লাহ পাকের কাছে করজোরে ফরিয়াদ জানাই, হে আল্লাহ! আপনি মুসলমানদের কুচক্রীমহলের আগ্রাসন থেকে হেফাজত রাখুন। তাঁদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও যোদ্ধ পরিচালনা করার তৌফিকে মুসলমানদের ধন্য করুন।

মুহাম্মদ কায়ছার উদ্দীন আল—মালেকী সূফিবাদী লেখক ও গবেষক

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply