ছোট বেলায় আমরা ঈদের উৎসব নিয়ে খুব আমেজ করতাম। খুব বেশী আশা/আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম ৩০ রোজা কখন আসবে। কখন ঈদের চাঁদ দেখা যাবে ? চাঁদ উঠছে এই খবর পেয়ে ঠিক ভাবে ইফতার করতে পারতাম না। একটু পানি আর একটি খেজুর মুখে দিয়ে দৌড় দিতাম চাঁদ দেখার জন্য। পিছন থেকে মা ডাক দিত, এই তুমি দাঁড়াও, তুমি কোথায় যাচ্ছ। কোন কথাই শুনতাম না। আমাদের বাড়ীর সামনে বড় একটা জমি ছিল, ওই জমিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতাম। এখন সেই জমিতে ঘর করে ফেলেেছ, আশেপাশে বড় বড় জমি ও মাঠগুলোতে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। তাই এখন চাঁদ দেখার আর সুযোগ নেই। চাঁদ উঠলে আমরা আতশ বাজি ও গোল্লাবাজি ফুটাতাম। কি যে খুশী লাগত, মসজিদে আল্লাহ্ ধ্বনি শুনা যেত, হুজুরের কি যে সুন্দর সুর দিয়ে মাইকে গজল পরত। কিছুক্ষণ পর পর ইমাম সাহেব ঈদের জামাতের সময়সূচি মাইকের মাধ্যমে জনিয়ে দিত। চাঁদ উঠার পরে প্রত্যেকের ঘরে ভাল ভাল রান্না বান্না করত, ওই রান্নার সুগন্ধি সমস্ত পাড়ায় ছড়িয়ে যেত। ঈদের দিন সকালে আমার মা আমাকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিত এবং নতুন কাপড় পড়িয়ে দিত। তারপর মা ঈদগাহ মাঠে যাওয়ার আগে রান্না করা সেমাই খাওয়াই দিত। বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজ শেষে বাড়িতে এসে সবাইকে পা ধরে সালাম করতাম এবং ওদের কাজ থেকে ঈদের বকসিস নিতাম।যদি কেউ ঈদের বকসিস দিতে ভুলে গেলে , তাই তাকে বারবার করে সালাম করতাম যেন ঈদ বকসিস দেয়। এরপরও যদি ঈদ বকসিস না দেয় তাহলে চেহারা কালো করে মুখ ফিরিয়ে নিতাম। ওই সময়ে এক টাকার ঈদ বকসিসে লক্ষ টাকার খুশী ছিল।
বর্তমান ছেলেমেয়েদের হাজার টাকা বকসিস দিলেও মনে হয় আগের সময়ের আনন্দ পায়না, যেটা আমরা ছোটবেলায় পেতাম। ঈদের নামাজ পড়ার পর মসজিদে প্রত্যেক মুরুব্বিদের কে ছোট বেলায় পা ধরে সালাম করতাম বর্তমানে ঐ রেওয়াজ উঠে গেছে। ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে গুড়াপিঠা, কদুর সেমাই ও পেপের সেমাই রান্না করা হত। ঈদের দিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মেহমানদের জন্য গরুর মাংস/মাছ রান্না করা হত।তারা যেন দুপুরে অথবা রাতে খেতে পারে। ওই মেহমানদের জন্য স্পেশাল কিছু নাস্তা বানানো হত, যেমন: ডিমের পুডিং, লাচ্ছা সেমাই, নারিকেলের পুলি, জর্দা ভাত ও চালের পিঠা। ঈদের দিন আমরা ঘরে বানানো পিঠা সেমাই নিয়ে টিফিন ক্যারিয়ারে করে আত্মী য়-স্বজনের বাড়ী বাড়ী যেতাম। বিশেষ করে ফুফু, খালা, বোনদের বাড়িতে যাওয়া হত। কিন্তু বর্তমান ছেলেমেয়েরা আত্মীয়-স্বজন থেকে বন্ধু-বান্ধদের নিয়ে বেড়াতে বেশি আগ্রহী। বর্তমানে ঘরের রান্না করা পিঠা সেমাই বাদ দিয়ে দামী দামী ব্রান্ডের হোটেল রেষ্টুরেন্টের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। সেই কারণে ঈদের দিন অনেক গৃহিনীরা রান্না-বান্না না করে আরাম-আয়েশে দিন কাটে।বর্তমানে কেনাকাটা অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে, বুকিং দিলেই চাহিদা মাফিক জিনিস পত্র ঘরে পৌছে যাচ্ছে।ঈদের দিন টেবিল ভর্তি বিভিন্ন রকমের দেশি বিদেশি খাবারে জমজমাট হয়ে থাকে। বর্তমান ছেলেমেয়েরা ঈদ বকসিস নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে ভাল ভাল খাবার দাবার খাচ্ছে এবং বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে। বিগত ২০২০ সালে করোনা কালীন সময়ে লোকজন ঈদের উৎসব ঠিকভাবে পালন করতে পারে নাই। ওই করোনা ভাইরাসের নিদিষ্ট গাইডলাইন দিতে বিশিষ্ট জনেরা হিমশিম খেয়েছিল। আমরা যদি সুবিধা বঞ্চিত লোকদের মুখে হাসি ফুটাতে পারি তবেই আমাদের ঈদ আনন্দ সার্থক হবে।
ছাবের আহমদ চৌধুরী
সংবাদর্কমী।