২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৮:২৩/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতি রোজার উদ্দেশ্য

     

 

মাহমুদুল হক আনসারী

তাকওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর প্রচন্ড বিশ্বাস ও আনুগত্য সৃষ্টিই রোজার উদ্দেশ্য। রোজা মুসলমানদের ওপর একটি ফরজ ইবাদত। সবল, সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়ষ্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর  রোজা নামক ইবাদতকে অবশ্যই পালনীয় হিসেবে ফরজ করা হয়েছে। রোজা অর্থ কতিপয় বিষয় থেকে নির্দিষ্ট একটি সময়  বিরত থাকা। নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট বিষয়কে এড়িয়ে চলা এবং এর মাধ্যমে মানবীয় ইন্দ্রয়কে বিশুদ্ধ করা। রোজার উদ্দেশ্য তাৎপর্য্য ফজিলত নিয়ে হাজার হাজার লেখা বই পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। কোরআন হাদিসের কিতাবে নির্দিষ্টভাবে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। অনেক লেখক বিভিন্নভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আসলে রোজা নামক নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট বিষয় থেকে বিরত থেকে সৃষ্টিকর্তা তার বান্দাকে কী বিষয়ের ওপর শিক্ষা দিতে চেয়েছেন সেটাই এখানে আমি আলোচনা করতে চাই।

ইসলাম হচ্ছে শৃঙ্খলাপূর্ণ একটি ধর্ম বা জীবন বিধানের নাম। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.) তাঁর উম্মতের জন্য যেভাবে ধর্মকে অনুসরণ অনুকরণের কথা বলেছেন সেভাবেই ধর্ম পালন করার নাম ধর্ম পালন। নামাজ, রোজা,  হজ্ব, যাকাত পালনের একটা নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। বিধানের বাইরে গিয়ে কেউ যদি ধর্ম পালন করে ধার্মিক হতে চায় সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সবকিছুর একটা নিয়ম ও মাপকাঠি রয়েছে। মাপকাঠি হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও হাদিস। এর বাইরে ইজমা, কিয়াস ও ফিকাহ। ইসলামের নবী, চার খলিফা, সাহাবায়ে কেরাম (রা.), চার ইমাম ও মাজহাব যেভাবে ইসলামকে অনুসরণ অনুকরণের সঠিক দিক নির্দেশনা রেখে গেছেন ঠিক সেভাবেই অনুসরণ অনুকরণে নামাজ, রোজা, হ্জ্ব, যাকাত মুসলিম সমাজে অনুসরণ অনুকরণ হওয়া চায়। এর বাইরে গিয়ে নতুন নতুন ইচ্ছে মতো অপ্রয়োজনে ধর্মকে কাটচাঁট করা ধর্মীয়ভাবে বিধান পরিপন্থী। রোজা এমন একটি আল্লাহ প্রদত্ত ইবাদত যেটা আল্লাহ এবং তার বান্দা ছাড়া  কেউ জানে না। উপবাসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় সুনির্দিষ্ট বিষয় থেকে বিরত থেকে সত্যিকার অর্থে আল্লাহ বান্দাকে বিশুদ্ধ করতে চান। বান্দার ভোগ, বিলাস, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, কাম, ক্রোধ সবকিছুকেই একটা বিশুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য। রোজার উপবাসের এ সংস্কৃতির মাধ্যমে গরিব এতিম মিসকিন অভাবী  মানুষের ব্যাথা বেদনা অনুধাবন রোজার অন্যতম একটি কারণ। আত্মা আর নফসকে বিশুদ্ধ পরিশুদ্ধ করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের মাধ্যম রোজা। নফসের সাথে সংগ্রাম আর পঞ্চ-ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে রোজা পালন একটি বিশাল সংগ্রাম। যারা এসব নিয়ম নীতি মেনে রোজা পালন করে থাকে তারাই সৃষ্টিকর্তার নিকট মহা বিজয়ী। রোজা পালনের জন্য নির্দিষ্ট সময় ও বিষয়ের সাথে আহার ও ভোগ বিলাসেও বিধান রয়েছে। পবিত্র খাবার গ্রহণ, অপবিত্র আহার বর্জন রোজা পালনকারীর বিশাল একটি গুণ। রোজা পালন যেমনি পবিত্র, ইবাদত তেমনি রোজা রেখে অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম আচার অনুষ্টান থেকে বিরত থাকাও রোজার বৈশিষ্ট্য। রোজা পালনকারী সুনির্দিষ্ট বিষয় থেকে যেভাবে বিরত থাকবেন একই নিয়মে অন্যের ন্যায্য পাওনা অধিকার তাকে দিতে বাধ্য থাকবে। অন্যের অধিকার অথবা প্রাপ্য হক ধ্বংস করে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের ব্যবহারে রোজা পালন সঠিকভাবে আদায় হবে। প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন ও আত্মীয়তার হক আদায় করে রোজা পালন করার বিধান রয়েছে। অন্যের অধিকার অথবা কুক্ষিগত সম্পদের সঠিকভাবে বন্ঠন না করে জবরদস্তিভাবে সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখে রোজার মতো পবিত্র ইবাদত কবুল করা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যার যে দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালন করা না হলে রোজা বলে কোনো কথা নয় যেকোনো ইবাদত কবুল হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় থেকে যায়। ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য অবশ্যই হালাল উপার্জন অন্যতম শর্ত। হালাল উপার্জন ও পরিষ্কার খাবার গ্রহণ ছাড়া ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। রোজা মুসলমান নর-নারীর জন্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। লোক দেখানো অভ্যাস আর সংস্কৃতির নাম রোজা নয়। রোজার বিষয়ে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, রোজা পালন একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য, আর রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ নিজেই। কীভাবে, কী পরিমাণে, কোন ধরনের পুরষ্কারের মাধ্যমে রোজা পালনকারীকে পুরষ্কৃত করা হবে সে বিষয়ে বহু কথা কোরআন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যা মুসলিম সমাজ ওয়াজ, বয়ান ও নসীহতের মাধ্যমে অবগত আছেন। সেসব বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলে কথা বাড়াতে চাই না। আমার বলার উদ্দেশ্য হলো রোজা যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জন্য হয়। কাউকে দেখানো এবং বোঝানোর জন্য রোজা পালন নয়। রোজার মূখ্য উদ্দেশ্য ও দাবি যেনো পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত পালন হয়। যদি সঠিকভাবে রোজার উদ্দেশ্য আবেদন সমাজে প্রতিষ্টা না হয়, তাহলে বাস্তবে রোজার তাৎপর্য্য ও উদ্দেশ্য সমাজে উপকার বয়ে আনবে না। যদি তাই হয়, তাহলে রোজা পালনের মাধ্যমে সামাজিকভাবে তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহ ভীতি অর্জন হবে না। আর যদি আল্লাহর প্রতি অধিক পরিমাণে ভয়ভীতি অর্জন না হয়, সে রোজা পালন ও আদায় লোক দেখানো সংস্কৃতি ছাড়া বেশি কিছু এ মুহুর্তে বলার মতো ভাষা নেই।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply