২৯ মার্চ ২০২৪ / ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:৪৪/ শুক্রবার
মার্চ ২৯, ২০২৪ ১:৪৪ অপরাহ্ণ

নতুন প্রজন্মের সাহসের প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা

     

মো. আবদুর রহিম

সারা বিশ্বের অভিনন্দন আর দেশবাসীর দোয়া ভালবাসায় সুদীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো। দেশের প্রধান প্রমত্তা পদ্মার ওপরে স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান ও সৌদি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের সাহস ও সৃষ্টির সক্ষমতায় অবিভূত। নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের প্রশংসায় সারাবিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের শুভ মুহুর্তে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘এ সেতু দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনে বাংলাদেশের নেতৃত্বে আরেকটি উদাহরণ। মানুষ ও পণ্যকে দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য টেকসই পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ অন্তর্ভূক্তমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশে অষ্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করবে। এ সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন এবং সব বাংলাদেশির জন্য গর্বের। বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশকে তাঁর দেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুকে সাহস, সংকল্প এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেছেন। স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশ এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সেতুটি শুধু বাস্তবায়নই হয়নি, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে শতভাগ নির্মিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দুরদর্শী নেতৃত্বের সাক্ষ্য দেয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে অবিচলভাবে সমর্থন করেছে ভারত। পদ্মা সেতু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এটি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থাই উন্নত করবে না, পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের সংযোগ ও নিবিড় করবে। এর আগে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী জাপানের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে অভিনন্দন। বাংলাদেশের সক্ষমতায় প্রশংসা করেছে বহু ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। পদ্মা সেতু’র উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। যেমনটা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। জাতি এতে গৌরবান্বিত। সবাই বলেছিল, এই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করতে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেটা করেননি। পদ্মা সেতু নাম রেখেছেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছেন। ইতিহাসে অনেক কিছু দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। এবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখলাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে খানিকটা এগিয়ে নেবে স্বীকার করি। কেউ কাজ করলে সে অগ্রসর হবে না কেন। নিশ্চয়ই হবে। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে একজন সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্ব ইতিহাসের নতুন মাইলফলকে প্রবেশ স্পর্শ করল বাংলাদেশ। আমাজানের পর বিশ্বে সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। ১৯৯৭ সালের ওই সফরে তিনি পদ্মা এবং রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জাপান সরকার দু’টি সেতুর নির্মাণে সহায়তা করতে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা বিশাল নদী, তাই জাপান পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে সমীক্ষা শুরু করে আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে। ২০০১ সালে জাপানের সমীক্ষার ভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই দিনটি ছিল ৪ জুলাই ২০০১ খ্রি.। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর দেশের জনগণের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন আসে। জনতার শক্তি হৃদয়ে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেন। ‘পদ্মা সেতু’র মধ্য দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বীরের জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের বিশে^র বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে আরো একবার সক্ষম হলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করে বলেছিলেন ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এই চির প্রেরণার বাণীতে জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে উজ্জীবিত করে প্রমাণ করেছিলেন বাঙালি পারে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫ জুন ২০২২ খ্রি. শনিবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখ লাখ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেয় অন্তত ১০ লাখ মানুষ। ইন্টারনেটের সুবিধায় অনুষ্ঠানটি দেখেছে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শক। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। পিছনে ফেরার আর কোন সুযোগ নেই। ইউটিউবে পাকিস্তানী এক বøগারের একটি ভিডিও প্রচার হয়েছে। সে পদ্মা সেতু সম্পর্কে লিখেছে বিশ^জুড়ে স্থাপত্যের বিস্ময় পদ্মা সেতু। স্বাধীনতার পর একজন মার্কিন কুটনীতিক বাংলাদেশকে উপাধি দিয়েছিলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। সেই বাংলাদেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে উন্নতি-সমৃদ্ধির সোপানে। এগিয়ে যাচ্ছে বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতি থামানো আর সম্ভব নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ এখন বিশ^ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। বাংলাদেশ বলতে পারে তোমাদের ঋণ না পেলেও আমরা পারি। বাংলাদেশ করোনার কঠিন এই দুঃসময়ে সফলভাবে করোনার অর্থনীতি মোকাবিলা করে এক কঠিনতম সময়ে নির্মাণ করেছে প্রমত্তা পদ্মার উপর বিশাল সেতু। অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ^বাসী অবাক বিস্ময়ে ভাবছে সঠিক নেতৃত্ব থাকলে একটি দেশ অতি সহজে সামনে যেতে পারে। মালয়েশিয়াকে একজন মাহাথির বদলে দিয়েছেন। লি কুয়ান ইউ গড়ে তুলেছেন আধুনিক সিঙ্গাপুর। গতিশীল নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া উঠে দাঁড়িয়েছে। বদলে দিয়েছে নিজেদের। বাংলাদেশের ও সময়ে এসেছে বদলে যাওয়ার বদলে দেওয়ার। করোনার ছোবল-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা দুনিয়ার বাজারে প্রভাব পড়েছে। লাগামছাড়া জিনিস পত্রের দাম। এ কঠিন অর্থনীতির যুগে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা। দেশের প্রায় ১৬টি জেলার কোটি কোটি মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে ঘর-বাড়ি সহায়-সম্পদ এই কঠিন অর্থনীতির সময়ে বাংলাদেশ শেষ করেছে পদ্মা সেতু নির্মাণ। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশ-বিদেশের কঠিন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা এতটা সহজ ছিল না। একজন দৃঢ়চেতা সাহসী নেতা শেখ হাসিনা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবার নিষেধাজ্ঞা পরিহার করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশে পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের পদ্মা পাড় নাটকের কালজয়ী গান ‘বাবু সেলাম বারে বারে’। যেখানে পদ্মাপাড়ের গয়া বাইদা ও বেদেনী চম্পাবতীদের জীবন ও জীবিকার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে বড় মর্মস্পশী অবয়বে। ‘মোরা এক ঘাটে রান্ধি বাড়ি আর আরেক ঘাটে খাই, মোদের দুখের সীমা নাই? পদ্মা পাড়ের ২১ জেলার গণ মানুষের দুখের দিন ফুরালো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত দরে। পদ্মা সেতু এখন শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি এখন বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশের গর্ব, আত্মমর্যাদা ও অহংকারের প্রতীক। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের গল্পটা কত দুরহ, কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিলÑ তা অনেকের জন্য ভাবনা-চিন্তার বিষয়, অবাস্তব কল্পনার বিষয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা অসম্ভবকে সম্ভব করার চালেঞ্জ নিয়ে ছিলেন। এভাবে সবাই পারে না। তিনি পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার বাবা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। পিতার শক্তিতে বলিয়ান কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর ভিতরের শক্তি সততা ও নিষ্ঠার। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুবিহীন আওয়ামী লীগের যখন হাল ধরেন তখন এ দলটি ছিল এক জীর্ণ বিভক্ত দল। তারপর শত ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৈরি পরিবেশ বন্ধুর পথ, নানা চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে এ দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন সততা ও দৃঢ়তায়। তিনি নতুন মাত্রা দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে। সব চক্রান্ত ও মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন তিনি। জাতির পিতাকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণ বিশে^র প্রামান্য দলিল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙালির ভাষার দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায় করেছেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগিয়ে দিয়েছেন, বিশ^বাসীর কাছে উপহার দিয়েছেন নতুন এক উন্নতি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু’র স্থান বিশ^বাসীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশে^র সেরা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নায়কদের একজন। তিনি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। নানা বৈচিত্র সৃষ্টি করে, সৃজনশীল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে টানা ক্ষমতার ইতিহাস গড়ে তিনি উঠে এসেছেন অনন্য উচ্চতায়। শেখ হাসিনার সাহস ও শক্তি এখন বিশ^জুড়েই এক অপার বিষ্ময়। তাঁর জাদুকরী গুণে বিশাল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ আজ অনন্য উচ্চতায়। নতুন প্রজন্মের সাহসের প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সাবাস বাংলাদেশ।  লেখকঃ সাধারন সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply