২৯ এপ্রিল ২০২৪ / ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:০৪/ সোমবার
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

আজ পাহাড় রাণী খাগড়াছড়ি হানাদার মুক্ত দিবস

     

শংকর চৌধুরী,খাগড়াছড়ি

আজ ১৫ ডিসেম্বর পাহাড় রাণী নামে ক্ষ্যাত, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে ভারত সীমান্তবর্তী পানছড়ি উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। থেমে থেমে কয়েকবার চলে গোলাগুলি। ভোরে খবর আসে পাক হানাদার বাহিনীরা পালিয়েছে। পরে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প দখলে নিয়ে সেখান থেকে পানছড়ি বাজারে রওয়ানা দেন মুক্তিযোদ্ধারা। ১১ ডিসেম্বর নিশ্চিত করা হয় পানছড়ি শত্রæমুক্ত।১৩ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহর অভিমুখে রওয়ানা পথে, ভাইবোনছড়া এলাকায় এসে পাকিস্তানীদের অবস্থান জানতে পেরে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যান তারা। দুপুরের দিকে ভাইবোনছড়া বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা দুইভাগে অবস্থান নেন। তাদের অবস্থান জানতে পেরে পাকিস্তানি সেনারা হামলা করে।

তবে, ওই দিন ভাইবোনছড়া হাট-বাজার হওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষতি হতে পারে এমন ভাবনায় পিছু হটে এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরে রাত দেড়টারদিকে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেন তারা। মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রায় ২০ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। ভোর সাড়ে ৫টায় খবর আসে রাতেই পাক বাহিনীর সদস্যরা পালিয়েছে।

দিনটি ছিল ১৪ ডিসেম্বর। ওইদিন দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা খাগড়াছড়ি শহরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পথে কুকিছড়া গাছবান এলাকায় বিকেলের দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট যুদ্ধ চলে । পরে শত্রæরা গোলাগুলি বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীকালে সেখান থেকে স্বনির্ভর বাজারে এসে চার প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা তিন ভাগে ভাগ হয়ে শহরের অভিমুখে রওয়ানা দেন। ১৪ ডিসেম্বর রাত ৩টায় খাগড়াছড়ি মহকুমা শহরে তিন দিক থেকে ৬০ শতাংশ এলাকা মুক্ত করা হয়।

ওই দিন রাতেই সতর্কতার সঙ্গে মহকুমার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। তখন ১২ জনের একটি গ্রপ মাইনস চার্জ করতে করতে শহরের দিকে এগিয়ে যান। ১৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর আসে, হানাদার বাহিনী রাতেই খাগড়াছড়ি বাজার লুটপাট করে মহালছড়ির দিকে পালিয়ে গেছে। অন্যদিকে, মহালছড়িতে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের।

১৫ ডিসেম্বর সকালে খাগড়াছড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুরী। এ সময় গ্রæপ কমান্ডার অশোক চৌধুরী বাবুল, মংসাথোয়াই চৌধুরী, মোবারক মাস্টার, জুলু মারমাসহ অনেকেই সঙ্গে ছিলেন। সেদিন থেকে খাগড়াছড়ি হানাদারমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত  হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বকোণে অবস্থীত আবহমান বাংলার প্রকৃতিক সৌন্দের্যের নৈসর্গিক লীলাভূমি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি। হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়গুলো যেন ঢেউ খেলানো শাড়ি। আকাশের মেঘ ছুঁয়ে যায় পাহাড়ের বুক। শরৎ, হেমন্ত ও শীতে শুভ্র মেঘের খেলাও চলে পাহাড়ের ভাজে ভাজে। যেন প্রকৃতির এই এক অপরূপ লীলাভূমি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply