একুশে টিভির আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
একুশে টিভির সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ দিয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রৌয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়। গত ২১ এপ্রিল রৌয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছলাম উদ্দিন ফকির এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তথ্য অধিকার আইনে চাহিতো তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া তথ্যে তিনি উল্লেখ করেন,জনাব আব্দুস সালাম নামীয় ব্যক্তি রৌয়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯১ সালে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করিয়াছে। তার শ্রেণি রোল নং ৪০। ” ঐ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করিয়াছে মর্মে কোন তথ্য তিনি ঘুণাক্ষরেও পাননি। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৩৫নং স্মারকে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রপেসর মোঃ আব্দুছ ছত্তার,তথ্য অধিকার আইনে চাহিতো তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া তথ্যে উল্লেখ করেন,“২০০২ সনের ডিগ্রী (পাস) পরীক্ষার টেবুলেশন সীট যাচাইপূর্বক দেখা যায় জনাব আব্দুস সালাম নামীয় ব্যক্তি সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের অধিনে ২০০২ সালে ডিগ্রী পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স পরীক্ষার কোন পরীক্ষার্থী ছিলনা।”এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে নিজের স্বাক্ষরিত জন্মবৃত্তান্তে নিজেকে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের বিএ পাশ বলে লিখিতভাবে দাবী করলেও বাস্তবে আব্দুস সালাম কোন কলেজ থেকেই বিএ পাশ করেনি। সুনামগঞ্জে মহান পেশা সাংবাদিকতার নামে অভিনব জালিয়াতি প্রতারনার এরকম নজিরবিহীন অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতারকের নাম আব্দুস সালাম। সালামের নিজের স্বাক্ষরিত এরকম একটি পরিকল্পিত জালিয়াতি প্রতারনার প্রমাণও সংগ্রহ করেছেন সুনামগঞ্জের সাংবাদিকেরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়,জেলার দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সুরিয়ারপাড় গ্রামের ইরশাদ আলীর পুত্র আব্দুস সালাম,গ্রামের সুরিয়ারপাড় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী দাখিল মাদ্রাসা হতে মাত্র ৫ম শ্রেণি এবং পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার রৌয়াইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৭ম শ্রেণি পাশ করিয়াছে। সে ঘুণাক্ষরেও এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন কিংবা এস.এস.সি পাশ করেনি। অথচ একুশে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রদত্ত সিভিতে (জন্মবৃত্তান্ত) সে নিজেকে ১৯৯৩ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ২য় বিভাগে এস.এস.সি ও ১৯৯৫ সালে একই বোর্ডের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করিয়াছে বলে দাবী করেছে। প্রদত্ত সিভিতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করিয়াছে তা উল্লেখ করেনি। একই সিভিতে উক্ত আব্দুস সালাম ২০০২ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ হতে বিএ পাশ করিয়াছে বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করিয়াছে। অনুসন্ধানে জানা যায়,সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে বিএ পাশ করাতো দূরের কথা উক্ত সালাম কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পর্যন্ত পাশ করেনি। অন্যদিকে নিজের স্বাক্ষরিত সিভিতে বিএ পাশ বলে উল্লেখ করলেও সালাম তার ভোটার তালিকায় নিজেকে মাধ্যমিক পাশ বলে উল্লেখ করেছে। শুধু ভোটার তালিকায় তথ্য গোপন করেই ক্ষান্ত হয়নি সে। বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রেরিত আবেদনে ভূয়া সনদ সরবরাহ করে জালিয়াতি প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া স্বাক্ষরিত সিভিতে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা কলামে সে উল্লেখ করেছে,সে সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য,একুশে টিভি,দৈনিক আজকের খবর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। অথচ বাস্তবে সে সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোন সদস্যই নয়। সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কখনও সে দায়িত্ব পালন করেনি। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক আল-হেলাল বলেন,সালাম যে ভূয়া সনদধারী তা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। একদিন আমার জিজ্ঞাসাবাদে সে আমাকে জানায় যে,সে সিলেট সরকারী কলেজ থেকে বিএ পাশ করিয়াছে। তখনই তার প্রতি আমার সন্দেহ হয় এবং আমি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করি। সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশক আহমদুজ্জামান চৌধুরী বলেন,আমি আমার পত্রিকায় আব্দুস সালাম নামে কোন পিওন বা স্টাফ রিপোর্টার নিয়োগ করিনি। সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম ডিএফপি,এনএসআই অধিদপ্তর ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে আছে। সালাম নামে আমাদের কোন স্টাফ অতীতেও ছিলনা বর্তমানেও নেই। দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা পত্রিকার সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার বলেন,ইদানিং মামলার ব্যাপারে জানতে চেয়ে আলাপকালে সালাম আমার কাছে সত্য স্বীকার করে বলেছে “ভাই আমি আসলে এস.এস.সি পাশ করতে পারিনি”। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের একাংশের সাধারন সম্পাদক লতিফুর রহমান রাজু বলেন,আব্দুস সালাম প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছিল কিন্তু আবেদন সাথে সে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এর ফটোকপি দেয়নি। সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের একাধিকবারের নির্বাচিত সভাপতি দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্ঠা সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমার ৫ দশকেরও বেশী দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে এরকম নজিরবিহীন প্রতারনা জালিয়াতি দেখিনি। ভেজাল সনদ,ভেজাল তথ্য ও ভেজাল সিভি সরবরাহ করে একটা লোক একুশে টেলিভিশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠাণকে দিনের পর দিন ধোকা দিয়ে যাচ্ছে। আমি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করবো। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের অফিস সহকারী তৈয়ব আলী বলেন,আমি টেবুলেশন সীট তন্ন তন্ন করে খুজে দেখেছি,সালাম নামে কেউ আমাদের কলেজ থেকে ২০০২ সালে বিএ পাশ করাতো দূরের কথা ঐ বছর বিএ পরীক্ষায় পর্যন্ত অংশ নেয়নি। জেলা তথ্য অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন,কোন ব্যাক্তি যদি জেনে শুনে মহাণ পেশা সাংবাদিকতায় জালিয়াতি প্রতারনার আশ্রয় নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। আর পত্রিকা সম্পাদক ও টেলিভিশনের পরিচালক বা নীতি নির্ধারকদের উচিত জেনে শুনে দেখে বুঝে সনদসহ সকল যোগ্যতা ভাল করে যাচাই বাছাই করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা। আমি এই পেশার স্বার্থে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তারা যেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রকৃত সাংবাদিকদের একটা ডাটাবেজ তৈরী করেন। আরো জানা যায়,মিডিয়া সেন্টার পৌরবিপনী ১ম তলা সুনামগঞ্জ ঠিকানা ব্যবহার করলেও প্রতারক সালাম ঐ ঠিকানা থেকে সাংবাদিকতা করেনা। সে নিজে টিভি ফুটেজ প্রস্তুত ও সরবরাহ সম্পর্কে আদৌ জ্ঞাত নয়। তার নাম দিয়ে শহরের অপর এক সাংবাদিক টিভিতে প্রক্সি দিয়ে সংবাদ সরবরাহ করেন। একুশে টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন,আব্দুস সালামের সনদ জালিয়াতি ও মামলাবাজীর অভিযোগ আমাদের হস্তগত হয়েছে আমরা নিজেদের মত করে বিষয়টির তদন্ত করছি। তদন্তের পর পরই দোষী সাব্যস্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।