২০ মে ২০২৪ / ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১:৪৯/ সোমবার
মে ২০, ২০২৪ ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বুক ভরা যন্ত্রনা নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা বাউল আব্দুল কাইয়ুম

     

আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে 
অনেকটা অভিমান করেই,বুক ভরা যন্ত্রনা নিয়ে না ফেরার দেশে চলে
গেলেন,সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা বাউল আব্দুল কাইযুম। তাঁর
আফসোস ছিল একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একাধিকবার
আবেদন নিবেদন করার পরও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নামটি অন্তর্ভূক্ত
করা হয়নি। ২১ আগস্ট ২০২০ইং রোজ শুক্রবার বিকেল দেড়টায় সুনামগঞ্জ
পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব সুলতানপুর আবাসিক এলাকাধীন নিজ
বাসভবনে বার্ধক্য ও অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী পুত্র কন্যা ভাই
ভগিনীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। শুক্রবার বাদ
আছর হাসননগর জামেয়া আসআদিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ঈদগাহ
ময়দানে নামাজে জানাযা শেষে শহরের পাটানবাড়ী কবরস্থানে তাঁকে
দাফন করা হয়।
এসময় সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার সমরাজ মিয়া,বিশিষ্ট
লেখক গবেষক সুবাস উদ্দিন,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ
জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজ
জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন,৩নং ওয়ার্ডের
কাউন্সিলর ফজর নূর,সাবেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোশাররফ হোসেনসহ
এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
ইদগাহ ময়দানে সমবেত মুসল্লিয়ানদের উদ্দেশ্যে সাবেক কমিশনার
সমরাজ মিয়া বলেন,বাউল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম শুধু আমার
জামাতাই ছিলেন না তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সরকারের
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গত ৭ বছর ধরে একজন প্রকৃত বাউল মুক্তিযোদ্ধা
স্বীকারে তাঁকে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী ভাতা প্রদান করে রাষ্ট্রীয়
সম্মান প্রদর্শন করেছে। কিন্তু দু:খের বিষয় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার
পরও তাঁর নামটি তালিকাভূক্ত না হওয়ায় তিনি জীবদ্ধশায় স্বীকৃতি ও
সম্মানী ভাতা ভোগ করতে পারেননি।
গত ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ সিলেট প্রতিদিন পত্রিকায় “অভাবের জ¦ালায়
জ¦লছেন আব্দুল কাইয়্যুম” শিরোনামে সাংবাদিক শামস শামীম এর
একটি লেখা প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক গ্রাম বাংলার কথা
পত্রিকায়,“সুনামগঞ্জের একজন অসহায় বাউল শিল্পী মুক্তিযোদ্ধার হতাশা
ও কিছু কথা”শিরোনামে মার্চ ২০১১ইং সংখ্যায় এস.এস হক
শিমুলের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ করা হয়,
“আমার দরদী কেউ নাইরে জগতে/মরিয়া যাবো বলে বান্ধিনা বাড়িঘর/

কাল সমনের ভয়ে কাপে শুধু অন্তর ।

অকারণ গেল সুদিন,আসলো যে দুঃখের দিন/সন্ধ্যা হল গাছতলাতে।।

এদিকে কাপড় নাই মাবোনের পিন্দেতে/
ভাত নাই ঘরে মন বসেনা ছেলে মেয়ের কান্দনে।
অসুখে করিলো ভর ভাঙ্গিয়া পড়তাছে ঘর/
কে তার বাতাইয়া দিব রাস্তারে \

না খাইয়া না বইয়া যাহা কিছু পাই/কোরাখী বাদে কিছু হইতে

পারে ভাই।

লাভের কপালে ছাই আসলে আসল নাই/
হিসাব করিয়া দো-না খাস্তারে \

অতি কষ্ট করে আমরা ফসলও ফলাই/ নিজের ফলানো ফসল খাইতে নাহি

পাই।

খাইলে পরে জোতদার মহাজনে/ বাকী বেসাত নিয়া যায় সস্তারে \
হৃদয়ও মন্দিরে প্রাণবন্ধুর বাসা/ আমার গোচরে করে যাওয়া-আসা।
যদি পাইনা দেখা নামটি তার আছে লেখা/ কাঙ্গাল কাইয়ুমের অন্তরাতে”

\

দুঃখে যার জীবন গড়া তবু দুঃখের শেষ নেই এরকম একজন অসহায় গরীব
রিক্সা চালক বাউল ফকির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম। তালিকায় নাম নেই
তবে সুনামগঞ্জের এই গরীব গীতিকার একজন প্রকৃত সক্রিয়
মুক্তিযোদ্ধা। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করলেও জীবন যুদ্ধে আজ
তিনি পরাজীত। তাইতো জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আজো তিনি
অনাহার অর্ধাহার ক্ষুধা দারিদ্রতা ও বাস্তবতার বিরুদ্ধে জীবন যুদ্ধ
চালিয়ে যাচ্ছেন। তালিকায় নাম না থাকলে কি-বা আসে যায়। মৃত্যুর
পূর্ব পর্যন্ত তার বেঁচে থাকার সংগ্রাম চলছে এবং চলবে। মোঃ আব্দুল
কাইয়ুম ১৯৪৭ সালের ১২ই মে বর্তমান দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার
পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামে এক নি¤œ-মধ্যবিত্ত
মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম আব্দুল গণি
আর মাতা ছাউবেটি। ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে আব্দুল কাইয়ুম মা-বাবার
তৃতীয় সন্তান। লেখা-পড়ার ন্যূনতম সুযোগ পাননি তিনি। আজ
পর্যন্ত টিপসহি দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর এক সকালে গ্রামের বাড়িতে ৮-১২জন
সমমনা যুবকদের সাথে নিয়ে ঘরোয়া মিটিং শেষে আব্দুল কাইয়ুম
রাজী হন মুক্তিযুদ্ধে যেতে। সকালের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গভীর রাতে
একটি নৌকা যোগে একই গ্রামের সহযোদ্ধা তাইবুল মিয়া,
সাজবার হোসেন, মইন উদ্দিন, আতাউর রহমান, বদর মিয়া, হাসকুড়ি
গ্রামের ইদু মিয়া এবং উক্তিরপার গ্রামের আবুল কাশেম ও কাচা মিয়া
গংদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম তাহিরপুরের টেকেরঘাটে
পৌছেন। পরে পায়ে হেটে যান ভারতের ডিমরাই অর্থাৎ সেলাইয়ুথ
ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পে প্রায় ১ মাস থাকা-খাওয়ার পর রিক্রুট শেষে দিরাই
উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুল গণি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার
ধামোদরতপি গ্রামের ন্যাপ কর্মী মানিক মিয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ

উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের দীঘলি গ্রামের মৃদুল দাস পুরকায়স্থ
মলয় গংদের নেতৃত্বে আব্দুল কাইয়ুম ও তার সহকর্মীরা শিলং পৌছে
সেখানে ভারতীয় ক্যাম্প এডমিনিস্ট্র্যাটর এনসি বসাক, বাংলাদেশী
ক্যাম্প ইনচার্জ মলয় দাস পুরকায়স্থ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর ক্যাপ্টেন মইন
উদ্দিন চৌধুরী কর্তৃক অস্ত্র ট্রেনিং নেন। এবং সি কোম্পানী
কমান্ডার এসএস রাউত এর অধীনে যুদ্ধ করে আহত হন। আহত হবার পর
ডাক্তার আব্দুর রহীমের কাছে চিকিৎসা সেবা নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা
সরাসরি দোয়ারা বাজারের বাংলা বাজারে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প
ঘেরাউয়ের দায়িত্ব পান। ৫ জন করে ৩টি গ্রæপ ওই অভিযানে অংশ নেয়
এবং ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাই প্রথমে শহীদ হয়। নদীর চরে সহযোদ্ধাদের লাশ
দাফন করেন আব্দুল কাইয়ুম। মুক্তি ফৌজের মধ্যে প্রধানত গুলাবারুদ
বহনকারী এবং ভিখারীর বেশে শত্রæপক্ষের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমেও তিনি
সফলতা দেখান। পরবর্তীতে সিলেটের তামাবিল এলাকায় কোম্পানী
কমান্ডার জনৈক সৈয়দ সাহেবের নেতৃত্বে দ্বিতীয় অপারেশনে
অংশগ্রহণ করেন। রাত ১০টায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে ডান
হাটুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় ক্যাম্পে ডাক্তার দুলন মিয়ার কাছে
চিকিৎসা সেবা নেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে কমান্ডার মৃদুল দাস
পুরকায়স্থ মলয়,আব্দুল গণি ও মানিক মিয়ার সাথে গ্রামের বাড়িতে
ফিরে আসেন। গ্রামের বিশিষ্ট রাজাকার মন্তাজ আলীকে ধরে এনে
সোপর্দ করেন সুনামগঞ্জ পিটিআই ক্যাম্পে। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা
রাজাকার মন্তাজ আলীকে পা দ্বারা মারিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনার পর
প্রাণ রক্ষার্থে গ্রামের বাড়িতে আর ফিরে যাননি আব্দুল কাইয়ুম।
স্বাধীনতা লাভের ২ বছরের ব্যবধানে দিরাই উপজেলার মাটিয়াপুর গ্রামে
পরবর্তীতে সিলেট শহরে সর্বশেষে সুনামগঞ্জ শহরে পরের বাড়িতে খেটে
খেয়ে প্রতি নিয়ত জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত থাকায় আব্দুল কাইয়ুম
মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারেননি। বাড়িতে রাখা
কমান্ডার ও বঙ্গবীর এমএজি ওমসানীর দেওয়া সার্টিফিকেটগুলোও অজ্ঞতা
বশত তার মা চুলোর আগুনে পুরিয়ে ফেলেন। তার সহযোদ্ধা হিসেবে যারা
গ্রামে অথবা শহরে ছিলেন তারাও তার নামটি তালিকাভূক্ত করার ন্যূনতম
চেষ্টা করেননি। এমতাবস্থায় সুনামগঞ্জে এসে গত ১৭/৩/২০১১ইং
তারিখে একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকারে তাকে একটি প্রত্যয়ণ পত্র দেন তার
রিক্রুটিং ইনচার্জ মৃদুল দাশ পূরকায়স্থ মলয় বাবু (সিলেট জেলার
বিশ^নাথ উপজেলার মুক্তিবার্তা তালিকায় যার নং ০৫০১০৯০১২৭)।
একজন প্রকৃত যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া স্বত্তে¡ও সরকার প্রদত্ব ভাতা
সহ আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা থেকে তিনি আজ বঞ্চিত। ফলে ৪
কন্যা ৩ পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব সুলতানপুরে
সরকারী খাস খতিয়ানের একটা খালের পশ্চিম পাড়ের বাস্তুভিটায় তার
মানবেতর দিন কাটে। একেবারে অক্ষর জ্ঞান না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল
কাইয়ুম প্রায় শতাধিক গান রচনা করেছেন। কিন্তু কোন পান্ডুলিপি
প্রস্তুত করারও সুযোগ পাননি। মাটিয়াপুর গ্রামে এক গানের আসরে

বিখ্যাত বাউল শাহ আব্দুল করিম তার বাদ্যযন্ত্রের সুর ও গানে মুগ্ধ হয়ে
বলেছিলেন “লেখা-পড়া জানা থাকলে তুমি আমার মতোই বড় শিল্পী হতে
পারতে”। শাহ আব্দুল করিম তাকে নগদ ১০০ টাকা বকশিষ দিয়ে
বলেছিলেন “কাইয়ুম মিয়া সাধনা চালিয়ে যাও, লোকে তোমাকে আদর
করবে”। “মাটির তারের গান সুনামগঞ্জ” নামের একখানা
গীতিগ্রন্থের ২৪৯ পৃস্টায় এ তথ্যটি উপস্থাপন করেছেন লেখিকা সৈয়দা
আখি হক। বইটিতে জেলার ২৪৮ জন গীতিকার বাউল শিল্পীর সাথে
গীতিকার বাউল হিসেবে আব্দুল কাইয়ুম এর একটি গানও তিনি
উপস্থাপন করেছেন। যে গানে রাষ্ট্র সরকার ও সমাজপতিদের কাছে
ভালবাসা প্রার্থী বাউল আব্দুল কাইয়ুম তার হতাশা ব্যক্ত করেন এভাবে,

“পরে কি আর জানে বেদনা/

আমার জ্বালায় আমি জ্বলি অন্য কেউতো জ্বলেনা \
যারে আমি ভালবাসি এ জগতে হইলাম দোষী/
দুঃখ সইলাম দিবা-নিশি তবু তারে পাইলাম না \
সজনী তোর পায়ে ধরি আইনা দেখা আমায় তারাতারি/
কই আছে শ্যাম বংশিদারী না দেখলে আর প্রাণ বাঁচেনা \
এক জ্বালা স্বামী বাদী আরেক জ্বালা কালননদীগো/
জল আনিতে গিয়া জ্বালা হেরিয়া চিকন কালা \
যে আমারে দুঃখ দিয়াছে তারে আমি পাইলে কাছেগো/
বুকে বুকে বুক মিশাইয়া পুরাইতাম বাসনা \
কাইয়ুম পাগল এই জীবনে সুখ-শান্তি না পাইলো মনে/
ঘুইরা বেড়াই দেশ-বিদেশে মনের মানুষ মিলেনা \

” সর্বশেষ খবরে জানা যায়, গানের মধ্যে দিয়ে মনের বেদনা প্রকাশ করে
মনের মানুষের সন্ধান করার ধারাবাহিকতায় কাঙ্কিত সেই মানুষগুলোর
খোজ পেয়েছেন বাউল ফকির বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম। তার
নামটি তালিকাভূক্ত করার জন্য দুইজন সাংবাদিকের লিখিত
প্রতিবেদনের আলোকে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সহায়তায় আব্দুল
কাইয়ুম পৃথক দুইটি আবেদন প্রেরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও
কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে। আবেদন মোতাবেক কেন্দ্রীয় কমান্ড
কাউন্সিলের তত্ত¡াবধায়ক ও মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা
কাউন্সিলের মহা-পরিচালক এসএম আব্দুল ওয়াহাব সারা দেশের ৫৬৪ জন
দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাচাই তালিকায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ
উপজেলার ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সাথে ১৪ নং ক্রমিকে আব্দুল কাইয়ুমের
নামটি তালিকাভূক্ত করে গত ৫মে ২০১০ইং ৯৫৪/১০নং স্মারকে এবং ২৫
আগস্ট ২০১০ইং মন্ত্রণালয়ের ২৬৪ (৬৪) নং স্মারকে সুনামগঞ্জ জেলা
প্রশাসকের কাছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কার্যক্রম
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করণ প্রসঙ্গে শিরোনামে পত্র প্রেরণ করেছেন।
২৬/৮/২০১০ খ্রিঃ তারিখে উনিঅ/দ:সু:/মুক্তি:/১২(১)/১০-১০২৯নং স্মারকে
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: লুৎফুর রহমান ৪৪
জন আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধার ১টি তালিকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা

তালিকাভ‚ক্তকরণ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার
ডা: ইসহাক মিয়ার কাছে প্রদান করেন। এই তালিকার ০৪ নং ক্রমিকে
আব্দুল কাইয়ুম এর নাম তালিকাভ‚ক্ত হয়। গত ৮ ডিসেম্বর ২০১১ইং
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় তৎকালীন জেলা প্রতিনিধি এডভোকেট পীর
ফজলুর রহমান মিসবাহ “প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও তালিকায় নাম নেই
তাদের”শিরোনামে আব্দুল কাইয়ুম এর ছবি সহকারে একটি
প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। বীরগাঁও ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান
নূরকালামও আব্দুল কাইয়ুমসহ তার ইউনিয়নের তালিকাবঞ্চিত
মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভূক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত
আবেদন করেন।
কিন্তু সেই সময় তালিকার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে অনলাইনে আবেদন
শুরু হলে নিরক্ষর দরিদ্র এই মুক্তিযোদ্ধা সময়মতো তার আবেদন করতে
পারেননি। পরে গত ২/২/২০১৭ইং তারিখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের
চেয়ারম্যান বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য
আবেদন করেন। এর পূর্বে অনুরুপ আবেদন করেন ২০/৮/২০১০ইং
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর কাছে। কিন্তু
এখন পর্যন্ত তার আবেদন মোতাবেক তার নামটি তালিকাভূক্ত করা হয়নি।
এমনকি তার একাধিক আবেদনের ব্যাপারে একটি তদন্ত পর্যন্ত করা
হয়নি। তথাকথিত যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হলেও উক্ত কমিটি
তাকে কোন পত্র প্রেরণ বা একটি খবর পর্যন্ত পাটায়নি। ফলে
দায়িত্বশীলদের অবজ্ঞা আর উপেক্ষার কারণে রণাঙ্গণের এই প্রকৃত
মুক্তিযোদ্ধা এখনও বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।
একজন উপেক্ষিত বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় এবং তাহার দু:খের কাহিনী
সরজমিনে প্রত্যক্ষ করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইয়ামিন চৌধুরী
আব্দুল কাইয়ুম কে অসচ্ছল সংস্কৃত সেবী হিসাবে ভাতা প্রদান
করেন। ২০১২ সালের উক্ত ভাতা মঞ্জুরীর সরকারী পত্রে আব্দুল কাইয়ুম এর
নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা বাউল কথাটি উল্লেখ আছে।
গত ২০/৮/২০১০ইং তারিখের আবেদনে তিনি নিজেকে সেলা সাবসেক্টরের
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঐ সাবসেক্টরের অধিনায়ক
ছিলেন লে: কর্ণেল এ.এস হেলাল উদ্দিন। সেলা সাবসেক্টরের বীর
মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু নিজ বাসভবনে
আব্দুল কাইয়ুমের সাথে আলাপ আলোচনা করার পর এ প্রতিনিধিকে
বলেন,আব্দুল কাইয়ুম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ ব্যাপারে আমার কোন
সন্দেহ নাই। কিন্তু দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই
বাছাইকালে জনৈক থানা কমান্ডার পরিচয়ধারী সাবেক এক বিএনপি
নেতা তাঁর কাছে তালিকায় নাম উত্তোলন বাবত নগদ ৫০ হাজার টাকা
ঘুষ দাবী করেছিলেন। চাহিতো টাকা দিতে না পারায় প্রকৃত
মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার পরও তালিকাভূক্তি থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন আব্দুল
কাইয়্যুম।

জীবদ্ধশায় গানের স¤্রাট বাউল কামাল পাশার একটি গানের কথা উল্লেখ
করে তিনি বলতেন,“প্রেম করিয়া পাইলাম আমি বুকভরা যন্ত্রণা,তোরা
প্রেম করিছনা”গানটির কথা আমার জীবনের ব্যথা একই। আর সেটা
হচ্ছে দেশ স্বাধীন করলাম,যুদ্ধ করলাম কিন্তু স্বীকৃতি পেলামনা। এই
যন্ত্রণা ও লজ্জার চাইতে মরে যাওয়া অনেক ভাল।
আব্দুল কাইয়ুমের বিধবা স্ত্রী আবজুন বেগম ও পুত্র জুয়েল আহমদসহ
তাঁর অসহায় পরিবারবর্গরা জীবদ্ধশায় স্বীকৃতি না দিলেও অন্ততপক্ষে
মরনের পর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুমকে স্বীকৃতিসহ তার নামটি
তালিকাভূক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা
করেছেন।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply