লকডাউনে লন্ডভন্ড ইফতার সংস্কৃতি
মাহমুদুল হক আনসারী
মহামারী করোনায় গোটা পৃথিবী স্থবির হয়ে আছে। চীনের উহান শহর থেকে মহামারীর যাত্রা এখন গোটা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত তিন লাখের মতো মৃত্যু সংবাদ জানা গেছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশ লাফিয়ে লাফিয়ে এ মহামারী পৃথিবীকে আক্রমণ করছে। এখনো পর্যন্ত বাস্তব কোনো প্রতিষেধক রোগটির বিরুদ্ধে আবিস্কৃত হয়নি। ফলে কতোদিন নাগাদ এ মহামারী থেকে বিশ্ব মুক্তি পাবে সে কথা কেউই বলতে পারছেনা। করোনার মতো এ ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে এ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পরামর্শ নিয়েছে সেটি লকডাউনে থাকা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আক্রান্ত মানুষগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী এখনো অনেক অপ্রতুল। পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহ রোগটির মাধ্যমে আক্রান্ত মানুষগুলোর যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ডাক্তার নার্স সেবিকারা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর কাতারে অনেক ডাক্তার নার্স যাত্রী হয়েছে। তবুও করোনা মহামারীর চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও চিকিৎসকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কতোদিন পর্যন্ত এ মহামারীকে সাথে নিয়ে মানবজাতিকে সংগ্রাম করতে হবে তা মোটেও হিসেব করা যাচ্ছেনা। ফলে এখন বিশ্বের অর্থনীতি রাজনীতি শিল্প মিল কারখানা অনেকটা বন্ধ। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী অলস সময় পার করছে। তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। উৎপাদনমুখী কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শ্রম বাজারে ধ্বস নেমে এসেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশ তাদের শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছে। কী হবে লাখ লাখ এসব কর্মজীবি মানুষের ভবিষ্যৎ বলা মুশকিল। বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানা কয়েকমাস বন্ধ রাখার পর কিছু কিছু শিল্প কলকারখানা পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। লকডাউন দেশব্যাপী অব্যাহত আছে। এর মধ্যেই শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে। আশংকা আর উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কোনো উপায় না দেখে মালিকপক্ষ শ্রমিক ও তাদের অর্ডার ঠিক রাখার জন্য এসব পোশাক কারখানা খুলেছে। সরকারের প্রণোদনা যা দেওয়া হয়েছে। শিল্পখাতের জন্য তা দিয়ে মোটেও এসব পোশাক শিল্প বেশিদিন খোলা রাখা সম্ভব হবেনা। তবুও সাহস করে অনেকেই পোশাক কারখানা খোলেছে। কিন্তু করোনার মতো ভয়াবহ এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষা করে এসব কারখানা না চলার যথেষ্ট অভিযোগ আছে। ফলে ইতিমধ্যে অনেক পোশাক শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। শিল্পঞ্চলের মানুষগুলো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
একদিকে লকডাউন অন্যদিকে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের চলাফেরা রোগটিকে আরো এগিয়ে আনছে। লকডাউনের মধ্যে সীমিত আকারে দোকান মার্কেট কাঁচা বাজার খোলা রাখার সরকারী নির্দেশ থাকলেও কিছু কিছু মার্কেট বাজার খুলেছে। এখানে মানুষের প্রচুর আসা যাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার কারণে মহামারীর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা থেকে যায়। তবুও এসব দোকান মার্কেট কাঁচাবাজার না খুলে কোনো উপায় নেই। তবে একেবারে লন্ডভন্ড হয়েছে এবারের ইফতার সংস্কৃতি। প্রতিবছর রমজান মাসে রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি এ দেশে দীর্ঘদিনের। ছোটবড় সকল রাজনৈতিক দল এ সংস্কৃতির সম্পৃক্ত।
রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো রমজান মাসে ইফতার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতো। মহামারী করোনার লকডাউনে এখন রাজনীতি ও দলীয় কর্মসূচী নেই বললেই চলে। করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষদের সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করছে। রাজনৈতিক কতিপয় দল সম্ভাব্য সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে মহামারীর কারণে ইফতার সংস্কৃতি একেবারেই এবারের মতন লন্ডভন্ড হয়ে রাজনীতিতে ব্যাপক একটি চালু কর্মসূচীর আঘাত করেছে। ফলে লাখ লাখ রাজনৈতিক কর্মী সমর্থক ইফতারে অংশগ্রহণ করতে পারছেনা। এ কারণে রাজনীতি যেভাবে স্থবির হয়েছে ইফতার আগ্রহী মানুষগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রমজানের আনন্দ উচ্ছাস পাওয়া যায় ইফতারের সময়। বড় জামায়েত ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইফতারের আয়োজন সেটা এক ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে। সেখানে ধনী গরীব বিভিন্ন বয়সের মিলন ঘটে। কিন্তু মহামারী করোনায় আবহমান কালের ইফতার সংস্কৃতি পর্যন্ত লকডাউন করে দিয়েছে। হয়তো দেশ মাটি মানুষ এবং রাজনৈতিক দল বেঁচে থাকলে আগামীতে ইফতার সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারবে জনগণ। ইফতারের মতো রোজাদারদের ইফতারের আয়োজন করতে না পেরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনেক সংগঠন মনক্ষুন্ন অবস্থায় ব্যথিত। তবুও কিছুই করার নেই। মানতে হবে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি। অন্যথায় এ মহামারীর আক্রমণ ও প্রাদুর্ভাব কোনো অবস্থায় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা। আসুন মহামারী থেকে নিজে পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সরকারের সবগুলো নির্দেশনা বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চাই।