১৬ মে ২০২৪ / ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:৪৩/ বৃহস্পতিবার
মে ১৬, ২০২৪ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আইপিএল নিয়ে জুয়ার আসর বন্ধ হোক

     

আজহার মাহমুদ
সমাজের নানা অনিয়ম, অসংগতি, বিশৃংখলা, সমস্যার সৃষ্টি হয় অপকর্মের মাধ্যমে। তেমনি একটি অপকাজ হচ্ছে জুয়া। জুয়া বলতে আমরা বুঝি টাকা দিয়ে একজন অন্যজনের সাথে চ্যালেন্জ ধরা। আর এই জুয়ার আসর বৃদ্ধি পায় আইপিএল এলে। আইপিএল বলতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। এটি খুব জনপ্রিয় একটি ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ। পৃথিবীর সকল ক্রিকেট ভক্ত এই খেলা গুলো দেখে। তার ব্যতিক্রম বাংলাদেশেও নাই। বাংলাদেশের মানুষ এই লিগটি দারুণ উপভোগ করে, তবে সমস্যা হচ্ছে এই লিগ এলে জুয়ার আসরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন ছোট বড় চয়ের দোকানে ভিড় জমে যায় জুয়াড়িদের। এই অপকর্মের ফলে সমাজের নতুন প্রজন্মের বেড়ে উঠতে বড় একটি সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে অভিবাবকদের। যেখানেই যাবেন এই জুয়া দেখতে পাবেন। অনেকে জুয়ায় তার টাকা সব হারিয়ে, নিজের ঘরের টাকা চুরি করে এনে আবার জুয়া খেলে। এটা একটা মারাত্বক ক্ষতিকর নেশা। এই নেশায় যারা একবার জড়িয়ে পড়ে তারা আর ফিরে যেতে পারে না। বড়ই লোভনীয় একটি নেশা এটি। আমার কেনো যেনো মনে হয় আমাদের দেশে ক্রিকেটের ভক্তের চেয়ে ক্রিকেট নিয়ে জুয়া ধরার ভক্তই অধিক। এই জুয়া শুধু যে আইপিএল এলেই হয় তা কিন্তু নয়। এটি আমাদের দেশে সচারচর দেখা যায়। কেউ ফুটবল বিশ্বকাপে, কেউ ক্রিকেটে, কেউ কার্ড খেলে, কেউ আবার পয়সা ঘুরিয়েও জুয়া খেলে। হরেক রকম ভাবে জুয়া খেলার পন্থা থাকলেও মূলে কিন্তু টাকা। একজনের পকেটের টাকা অন্যজনের পকেটে চলে যাওয়া। আর এই নেশায় মগ্ন হয়ে অনেকে টাকার জন্য মানুষের কাছ থেকে ছিনতায় এবং চুরি ডাকাতি করার মতো বড় অপরাধের দিকে ঝুকে পড়ে। কেই নিজের বাবার পকেট থেকে, কেউ মায়ের অলংকার, কেউ নিজের স্ত্রীর গহনা, কেউ বন্ধুর পকেটের টাকা চুরি করে হলেও জুয়ার আসরে যাবেই। আসলে এই জুয়ার মূলে হচ্ছে বেকারত্ব। বেকার ছেলেরাই এই নেশায় বেশী আসক্ত। আজকাল দেখা যায় শিক্ষিত স্কুল কলেজের ছাত্ররাও এই জুয়ার নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন প্রশাসনের তদারকি। প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারণে এটি এখন খোলা রাস্তায় চলে এসছে। যার কারণে অনেক শিক্ষিত ছেলেরাও এই নেশায় চলে যেতে সময় লাগছে না। সামন্য লোভ থাকলেই এই নেশায় যাওয়া কোনো ব্যপার না। কিন্তু সুযোগ পাওয়া হচ্ছে মূল বিষয়। যারা এই জুয়ার আসরে তৈরী করে দিচ্ছে আমাদের প্রয়োজন তাদের সেই জুয়ার কারখানা ভেঙ্গে দেওয়া। অভিবাবকদের সচেতন হতে হবে সন্তান কোথায় যায় এবং কেনো যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে সন্তান কত টাকা নিয়ে যায় বাসা থেকে এবং কত টাকা নিয়ে আসে। আমাদের মাঝে অনেক অভিবাবকই আছেন যারা সন্তানকে অল্প টাকা দেন তবে সন্তান দিন শেষে বেশী টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে, তখন তারা সন্তানকে জিগ্যাস করেনা এতো টাকাকোথা থেকে সে পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলাযায় অনেক অভিবাবকও লোভী এবং সন্তানের যোগান দাতা হয়ে উঠে এই নেশায়। তাই সন্তানের সুফল এবং মঙ্গল কামনা করলে কখনোই এই ধরনের বিষয়ে সন্তানদের সুযোগ দিবেন না অভিবাবকগন। আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া জরুরী। তারপর আমরা আইন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা পাবো। প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবী প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, পৌরসভা সহ সকল অলিগলিতে তল্লাশী চালিয়ে এই জুয়ার আসর বন্ধা করা হোক। এই জুয়ার আসর যদি আজ বন্ধ না হয় তবে কাল অন্য একজন ছেলে সেই জুয়ার আসরে বসতে সুযোগ পাবে। এভাবে নষ্ট হয়ে পড়বে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। তাই প্রজন্মকে বাচাঁতে এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে জুয়া নামক এই ভয়নাক খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে সকল শ্রেনী পেশার মানুষদের। এই ভয়ানক নেশায় জড়িয়ে পডার অন্যতম কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। তাই বেকরত্ব দূরীকরণে এই সমস্যার সমাধান অনেকটাই কমে আসবে। জুয়ার এই নেশা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজন অধীক পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বাংলাদেশে যতজন বেকার রয়েছে তার ৫০ শতাংশ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তাই বর্তমান সরকারের কাছে আকুল আবেদন দেশে যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয় এবং বেকারত্ব দূর করা হয়। তবেই দেশে এই ধরনের জুয়ার নেশায় আর কোনো ছেলে নষ্ট হবে না।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply