১৯ মার্চ ২০২৪ / ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ / সকাল ১১:২৩/ মঙ্গলবার
মার্চ ১৯, ২০২৪ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নয়

     

এ কে এম জাকারিয়া

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নয়।মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ মানুষের দ্বীন হচ্ছে ইসলাম, তাই সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর স্বীকারের প্রেক্ষিতে বিজাতীয় সংস্কৃতি থার্টিফার্স্ট নাইটসহ কোন ইসলাম বিরোধী কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সরকারিভাবে থার্টিফার্স্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেয়া এবং সরকারিভাবে থার্টিফার্স্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা।
ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালনঃ
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ, অপরিবর্তনীয় ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক “সূরা আলে ইমরানের” ১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলেন, “নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।”
আল্লাহ পাক “সূরা মায়িদার” ৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আরো ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।”
আল্লাহ পাক তিনি দ্বীন ইসলামকে শুধুমাত্র পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও নিয়ামতপূর্ণ করেই নাযিল করেননি সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে মনোনীতও করেছেন। তাই দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খানা ছহীফা এবং মানব রচিত মতবাদ যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্‌ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, এর কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছ? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্‌ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহ্‌মদ, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্‌ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্‌ ইত্যাদি)
থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস:
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। ১লা জানুয়ারি পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার [খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক, দুশ্চরিত্র (যার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল] পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। ইরানে নববর্ষ বা নওরোজ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত।
সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
বাদশাহ আকবরের ফরমান অনুযায়ী আমীর ফতেহ উল্লাহ্‌ শিরাজী উদ্ভাবিত বাংলা ফসলি সাল চালু হয় ১০ মার্চ ১৫৬৩ সালে। ইংরেজ আমলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হলেও রাজস্ব আদায়ে ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলা সাল তথা ফসলী সন বেশি ব্যবহার করা হতো।
বর্ষবরণের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুভূতি যোগটা সে শুরু থেকেই ছিলো বা বর্ষবরণকারীরা ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকেই তা করতো। অথবা বর্ষবরণকে তাদের বিশেষ ধর্মীয় আচার বলে বিশ্বাস করতো। মজুসী বা অগ্নি উপাসকরা এখনো বর্ষবরণকে সরকারিভাবেও ব্যাপক জাঁকজমকভাবে পালন করে থাকে। একে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ মনে করে এবং একে নওরোজ বা নতুন দিন বলে অভিহিত করে।
ফসলী সনের নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় শরিয়তের ফায়সালাঃ
হযরত ইমাম আবু হাফস কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলে তা বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
আজকে অনেক মুসলমান থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করছে। ইংরেজি নববর্ষ, ফসলী সনের নববর্ষসহ বিভিন্ন নববর্ষ পালন করছে। আর এতে করে তারা বিজাতি ও বিধর্মীদের সাথেই মিল মিশ রাখছে। তাদেরই অনুসরণ অনুকরণ করছে।
কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ ৫৫) আর নববর্ষ পালনের দ্বারা সে কাফিরদেরই অনুসরণ-অনুকরণ করা হয়।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে যে, সব নববর্ষের প্রবর্তকই বিধর্মীরা। তাই ইসলাম নববর্ষ পালনকে কখনোই স্বীকৃতি দেয় না।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারি (নববর্ষ) পালনের বৈধতাঃ
সংবিধানের ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সে প্রেক্ষিতে দেশে ইংরেজি ভাষাসহ বিভিন্ন উপজাতীয় ভাষার ঊর্ধ্বে যেমন রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা ও প্রাধান্য তেমনি সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা স্বীকারের প্রেক্ষিতে অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর উপরে ইসলাম ও মুসলমানের মর্যাদা ও প্রাধান্য স্বীকৃত হওয়া আবশ্যক এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও অনেক বেশি হওয়া কর্তব্য। যা মূলত প্রচলিত সংবিধানেরই ব্যাখ্যা।
মূলকথা হলো- সংবিধানের ২ নম্বর ধারায় বর্ণিত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর স্বীকারের প্রেক্ষিতে বিজাতীয় সংস্কৃতী থার্টি ফাস্ট নাইটসহ কোন ইসলাম বিরোধী কাজ গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশের সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেয়া এবং সরকারীভাবে থার্টি ফাস্ট নাইটসহ সকল ইসলাম বিরোধী কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা অর্থাৎ মুসলমানদেরকে ইসলাম পালনে বা ইসলামের উপর ইস্তিক্বামত থাকার ব্যাপারে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করা।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply