২৫ এপ্রিল ২০২৪ / ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:২৯/ বৃহস্পতিবার
এপ্রিল ২৫, ২০২৪ ৯:২৯ অপরাহ্ণ

ভালো মন্দের সমাজ

     

মাহমুদুল হক আনসারী
ভালো কর্মের আদেশ অসৎ কর্মের প্রতিরোধে দুনিয়ার প্রথম থেকে একদল ভালো মানুষ নিয়োজিত ছিলো। ভালো মন্দ দেখিয়ে দিয়ে বলার মতো সমাজে মানুষ না থাকলে সমাজ দিন দিন আরো রসাতলে যাবে। সংবাদপত্র থেকে শুরু করে সমস্ত প্রচার মাধ্যম সমাজের ভালো মন্দের আয়না হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম সারা দুনিয়ায় সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করছে। রাষ্ট্র সমাজ ব্যক্তি পরিবারের সামাজিক উন্নয়ন ও ভালো মন্দ লেখা লেখির ম্যাধমে সমাজকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করে থাকে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন সমাজের অপকার উপকার জাতির সম্মুখে তুলে ধরে আসছে। অনলাইন, টিভি চ্যানেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক সহ সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম সমাজ ও মানবতার বিবিধ কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদের খতিব ইমামগণ হচ্ছেন সমাজ সংস্কারক। তারা সমাজের মসজিদ সমূহে নামাজ পড়ার পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে আবহমানকাল হতে ভূমিকা রাখছেন। সমাজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি, অসংগতি, বাল্যবিবাহ মাদক, যৌতুক, সুদ,ঘুষ,অশ্লীল গান বাজনা নৃত্য তথা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে খতিব ইমামগণ জুমার পূর্বে খুৎবায় বক্তব্য রেখে থাকেন। তাঁদের বক্তব্য উপদেশ অবশ্যই কোরআন ও হাদীসের আলোকে হয়ে থাকে। মুসল্লীগণ অত্যন্ত মনযোগ ও আন্তরিকতার সাথে শুনে থাকে। খতিব ও ইমামদের উপদেশ বয়ান বক্তব্য শ্রুতাগণ অনুসরণ অনুকরণ করবে কি করবেনা, সেটা মুসল্লীদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। কিন্তু তাদের বক্তব্য উপদেশে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে কেউ প্রতিবাদ করেনি। খতীবগণ সম্পূর্ণভাবে ইসলামের আলোকে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত উপস্থাপন করেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে মসজিদের ইমামদের সামাজিক সার্বিক উন্নয়নে দেশের লাখ লাখ ইমাম খতীবদের প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত কয়েক লাখ ইমাম খতীবকে আত্মসামাজিক উন্নয়ন ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ইমামগণ সমাজে নানা ক্ষেত্রে সমাজ সংস্কারে নিরলসভাবে অবদান রাখতে দেখা যাচ্ছে। তাদের অবদানে প্রতিবছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়ে থাকেন। তাদের সম্মান মর্যাদা সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে খাটো করে দেখার মতো নয়। তাদের ত্যাগ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সুবিধা অসুবিধা, খেয়ে না খেয়ে সুযোগ ও সুবিধার দিকে না তাকিয়ে সমাজ সংস্কারে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে তাঁরা। তাদের উপর নবী রাসূলের উত্তরসূরী হিসেবে মহান সে দায়িত্ব অর্পিত হয়ে আছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় তাঁরা কতিপয় দুষ্ট প্রকৃতির মানুষের বাধাপ্রাপÍ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ অনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মসজিদের খতীব ইমামদের নানাভাবে হুমকি বাধা এবং চাকরী পর্যন্ত হারাতে হচ্ছে। ২ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং এমন ধরনের একটি খবর পত্রিকার কাগজে দেখে শান্তি প্রিয় মানুষ রাগ ও ক্ষোভে ফেঁসে উঠেছে। বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী এলাকায় খতীব মাওলানা ছৈয়দ নূর(৫৫) সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তির আক্রমণে শারীরিকভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। ঐ খতীব ১ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পূর্বে খুৎবায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘সৎ কর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের নিষেধের’ উপর আলোচনায় অশ্লীল নাচ গান থেকে মুসল্লীদের সতর্ক করেছেন। এ বক্তব্যের সূত্র ধরে স্থানীয় এক মুসল্লী ইমামকে মারধর করেছে বলে পত্রিকায় সংবাদ হয়েছে। শারীরিকভাবে প্রহার করেছে। এ সংবাদ সমাজের জন্য খুবই ন্যাক্ষারজনক একটি ঘটনা । ইমাম খতীবগণ সমাজের সম্মানের পাত্র। ইমামগণ সমাজের ন্যায়ের প্রতিক হিসেবে ভাল মন্দের দিক নির্দেশনা পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে উপস্থাপনা করে থাকেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসব বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করে থাকেন। ইমামদের সব আলোচনা মুসল্লীদের ভালো লাগা না লাগা সেটা মুসল্লীদের দায়িত্ব। আলোচনা ভালো না লাগা অথবা মন মতো না হলেও ইমামকে আক্রমণ করা জঘন্য ধরনের অপরাধ বলে মনে করেছেন সমাজ বিশ্লেষকগণ। এভাবে যদি সমাজে ন্যায় অন্যায় বলা ও দেখিয়ে দেয়ার মতো মানুষ না থাকে তাহলে সমাজে অপরাধ ও অন্যায়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ন্যায় অন্যায় বলা ও সমালোচনার কারণে কিছুটা হলেও সমাজের এ ধরনের আলোচনার প্রভাব পড়ছে। কিছুটা হলেও সমাজ ইমাম খতীবদের আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। দৈনন্দিন মানব জীবনে খতীব ইমামদের বক্তব্য আলোচনা সামগ্রিকভাবে উপকারে আসছে। কতিপয় দুষ্ট মানুষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব ভালো মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করছে। এ লক্ষণ খুবই জঘন্য এবং নিন্দনীয়। সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আত্মসামাজিক প্রশিক্ষণের আলোকে ইমাম খতীবগণ সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখছে। ইমামদের উপর হামলা অর্থ ইসলাম ধর্মের আদর্শের উপর হামলা হিসেবে এটাকে ধরে নেয়া যায়। রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব তারা পালন করছে। ইসলাম ও নবী রাসূলের উত্তরসূরী হিসেবে ইমামগণ এ দায়িত্ব পালন করছে। সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এসব মানুষের উপর যদি এভাবে হামলা ও আক্রমণ করার মতো দুঃসাহস দৃষ্টতা দেখাতে থাকে তাহলে সমাজে ন্যায়নীতি বলতে কিছুই থাকবেনা। ন্যায় অন্যায় তুলে ধরে বক্তব্য রাখতে ভালো মানুষগুলো তাদের কণ্ঠ বন্ধ করে দেবে। এটা সমাজের জন্য খুবই খারাপ দিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। সমাজের মুষ্টিময় দুষ্ট লোকের জন্য গোটা সমাজ চুপ থাকতে পারেনা। এ ধরনের জঘন্য সমাজ বিধ্বংসী অসৎ লোকদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। রাষ্ট্র ও স্থানীয় প্রশাসনকে এসব বিষয় কঠোর হাতে দমন করতে হবে। প্রকাশ্যভাবে শাস্তি দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ইমাম খতীবদের ক্ষতিপূরণ ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যথায় এ মসজিদ থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলবে। আইনী সবধরনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে মসজিদ কেন্দ্রীক ইমাম খতীবদের পাশে এখনই রাষ্ট্রকে আসতে হবে। আজকে খতীব ইমামদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না থাকার সুযোগে খারাপ প্রকৃতির মানুষগুলো এ দৃষ্টতা দেখাচ্ছে। মুসলীম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে কোনো ভাবেই এসব কর্মকান্ড সহ্য করা যায়না। অবিলম্বে ্ওই দুষ্ট লোকদের বিচার করে রাষ্ট্রকে সামাজিক শৃংখলা রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন সমাজ ও রাষ্ট্রকে সঠিকপথে পরিচালনা ও শান্তি শৃংখলা রক্ষায় মসজিদের খতীব ইমামদের নৈতিক সমর্থন প্রদান করি। তাদের সঠিক বয়ান বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচারে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করি। তবেই সমাজের আগামী প্রজন্ম সঠিকভাবে পথ নির্দেশনা পেতে পারে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply