১৯ এপ্রিল ২০২৪ / ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:৫৮/ শুক্রবার
এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে

     

আজহার মাহমুদ

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সেরা সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন মানুষকে। পৃথিবীতে ভাল মন্দ সব ধরনের মানুষ রয়েছে। নানান পেশার মানুষ রয়েছে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করা এই জগতে। সকল মানুষ যেমন এক নয়, তেমনী সকল মানুষের মনুষ্যত্বও ঠিক নয়। মানুষের মধ্যে কেউ রয়েছে ধনী, কেউবা আবার গরীব। কারো আয়ের উৎস সৎভাবে আবার কারো আয়ের উৎস অসৎভাবে। সকলেই কোনা না কোনো পেশায় জড়িত। কেউ ড্রইবার, কেই আবার শিক্ষক, কেউ ভিক্ষুক, আবার কেউ মন্ত্রি বা  মেয়র। কারো পেশা সাংবাদিকতা, কারো আবার ব্যবসা। সবগুলোই কিন্তু এক একটা পেশা। আমারা সকলেই কোনা না কোন পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে আমাদের ভেতর যদি মনুষ্যত্ব থাকে তবে আমরা সেই পেশাটা সৎ ভাবে ব্যবহার করবো। মানুষের পেশা তুলনা করলে দেখি, কারো পেশাকে সম্মান দেওয় হয় আবার কারো পেশাকে অসম্মান করি আমরা। আমরা কিছুক্ষনের জন্য ভুলে যাই যে সেও একজন মানুষ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকেলকে একই মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তার কাছে সকলের মান একই। একজন ড্রাইবারের শরীরে যে রক্ত মাংস রয়েছে একজন মন্ত্রির শরীরেও সেই ধরনের রক্ত মাংস দিয়ে গঠিত। কারণ আমরা সকলে মানুষ। যত ভেদাভেদ সবকিছু আমরা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি। একজন গ্যরেজের ছেলে যদি টাকার অভাবে পড়া লেখা করতে না পারে এবং বাধ্য হয়ে গ্যরেজের মেকানিকের পেশা বেছে নেয় সেটা কি তার অপরাধ? তাই বলে কি সে মানুষ নয়? এজন্য কি সকলের সামনে তাকে অপদস্থ এবং ছোট করবো । আমাদের কাছে কিছু কিছু পেশাকে ছোট করে দেখার স্বভাব এখনো যায় নি। আমরা সবসময় নিজেদেরকে সম্মানের আসনে বসিয়ে রাখি আর সমাজের নিম্ন শ্রেনীর পেশাকে অসম্মানের আসনে বসিয়ে রাখি। আমাদের যখন জুতো ছিড়ে যায় আমরা তখন ঠিকি দৌড়ে মুচির দোকানে গিয়ে জুতো সেলাই করে নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু পরোক্ষনে আমরা সেই মুচিকেই সমাজে ছোটভাবে দেখি। আমরা স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত থেকে বাসাই যখন ফিরি তখন আমরা ঠিকি কোনো না কোনো গাড়িতে করে আসি। আর ভাড়া দেওয়ার সময় অনেকে আবার তাদের সাথে ঝগড়া করতেও দ্বিধা করিনা। এমনও অনেকে রয়েছে যারা কয়েকটা টাকার গরমে তাদের গায়ে হাত তুলতেও চিন্তা করিনা। অথচ তারা না থাকলে আমাদের কি হতো তা আমরা ভেবে দেখি না। আবার তাদেরকেই অসম্মান করতে আমাদের একটুও অসস্থি হয়না। আমরা যারা নিজেদের অতিরিক্ত সম্মানি ভাবছি, আমরা হয়তো ভুলে যায় যে সমাজের এধরনের মানষ ছাড়া আমরা নিজেরাই অচল। সকলেই পেটের জন্য কোনো না কোনো কাজ করছে। আমাদের প্রয়োজন সেটা যাই হোক না কেনো তার সে কাজকে সম্মান করা। আমি নিজেকে উচ্চতায় বসিয়ে রাখলে কখনো সম্মনি হতে পারবো না। সম্মানী হতে হলে নিচেও আসতে হয়। নিচের মানুষদেরও সম্মান দিতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে সম্মান দিলে আমরা সম্মান পাবো। আমাদের মনে রাখতে হবে সকলেই আমরা মানুষ। মানুষ শুধু আমরা না, মানুষ গ্যরেজের কাজ করা ছেলেটাও। একজন চায়ের দোকানের কাজের ছেলেটারও একটা সপ্ন থাকে। হয়তো তার সপ্নটা সপ্নই থেকে যায়, কিন্তু সেও একজন মানুষ। আমাদের সমাজের বিত্তবানরা সবসময় গরীব, খেটে খাওয়া মানুষদের ছোট করে দেখি। আমাদের ভেতর মনুষ্যত্ব বলতে যে বিষয়টি রয়েছে সেটি আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। আমরা তাদের ঘৃনার নজরে দেখি এবং অসম্মান করি। মানুষ হিসেবে এটাই তাদের কী প্রাপ্য? প্রশ্নটা থেকেই গেল। কোনো এক কবি বলেছেন, মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন জীবনের জন্য। সেই কবির কথা আজ আমরা ভূল প্রমানিত করছি। এখন মানুষ আর মানুষের জন্য নেই।  এটাইেএখন আমাদের জন্য বাস্তবতা। আসলেই বাস্তবতা বড়ই নির্মম। বাস্তবতাকে অস্বিকার করার সাধ্য কারো নেই। বাস্তবে মানুষের প্রতি মানুষের নেই কোনো দয়া, নেই কোনো মায়া। যা আছে তা দিয়ে কিছুই হবে না। আমরা অন্যকে দেখিয়ে না দিয়ে নিজেদের নিজেরাই প্রশ্ন করি, তবেই আমরা আমাদের ভেতর থেকে সঠিক উত্তর উপলদ্ধি করতে পারবো। আমাদের ভেতরের যে মনুষ্যত্ব রয়েছে আমরা সেটাকে একসময় বিলিন করে দিব অমানুষের রাজ্যে। আমাদের ভেতর থাকবেনা কোনা মনুষ্যত্ব। হারিয়ে যাবে মানবতা। তখন ভুলে যাবে সকলে মানুষ মানুষের জন্য এ কথা। তাই আমাদের ভেতর জাগিয়ে রাখতে হবে নিজেদের মনুষ্যত্ব। পরিষ্কার করতে হবে নিজেদের বিবেক।  মনুষ্যত্ব ছাড়া যেমন মানুষ হওয়া যায়না তেমনি বিবেকহীন ব্যাক্তিও মানুষ হতে পারে না। তাই বিবেক এবং মনুষ্যত্ব্ এই দুটো ঠিক রেখে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জয় হবে মানুষের এবং মনুষ্যত্বের।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply