মাহমুদুল হক আনসারী
সহনশীলতা মানুষের চরিত্রের অন্যতম একটি মহৎ গুন । সহনশীলতা অর্থ সহ্য করার ক্ষমতা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেনিজের আবেগ ইচ্ছেকে দমন করা , শক্তি থাকা সত্বেও প্রতিশোধ পরায়ন না হ্ওয়া। ধৈর্য্যশীল থাকা , রাগ নিবারণ করা সহনশীলতার পরিচয় । সমস্ত নবী রাসুল সহনশীল ও ক্ষমাশীল ছিলেন । মহান আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ও ধৈর্য্যশীল হ্ওয়ার জন্য তার বান্দাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন । সহনশীলতা একটি অনুপম আদর্শ । মানবজীবনে শান্তি শৃঙ্খলা এবং উন্নতির জন্য সহশীল হ্ওয়া প্রয়োজন। পবিত্র হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন মানুষ যখন জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহন না করে ক্ষমা করে দেয় তখন আল্লাহ পাক সেই মানুষটির মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন । সূরা আনফালের ৪৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সহনশীলতা অবলম্বন করো কারণ আল্লাহ সহনশীলদের সাথে থাকেন ।
ইমাম গাজ্জালি (রাঃ) বলেন, ইমানের পর বিবেগের দাবি হলো মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা। প্রত্যেক সৎ ্ও অসৎ লোকের প্রতি অনুগ্রহ করা, সকলের সাথে হাসি খুশি থাকা, বিনয়ি হ্ওয়ার কথা বলা হয়েছে । মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সাহাবিদের প্রশ্ন করেন তোমরা কী জানো? জাহান্নাম কার জন্য হারাম। সাহাবাগন বললেন আল্লাহ রাসূল ভালো জানেন। তখন রাসূল বললেন যে ভদ্র , নম্র, বিনয়ী আচরণ করে , সহনশীলতার পরিচয় দেয় তার জন্য জাহান্নাম হারাম। সহনশীলতার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।
ব্যক্তিগত পারিবারিক , সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় কাজ সম্পাদনে আমাদের সহনশীল হতে হবে । হিংসা বিদ্বেস ভুলে গিয়ে দেশ জাতির উন্নয়ন ব্যাক্তি ্ও পারিবারিক সকল স্তরে বিনয়ী থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিনয়ী মানুষকে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে পারিবারিক সামাজিক আচার আচরণে , ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, আন্তঃধর্মিয় সংস্কৃতি লালন পালন সহনশীল ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই । বাংলাদেশ বহুধর্ম গোত্র , অনুসারি ও অনুসরনের দেশ। এখানে ধর্মের পর্দা থাকলেও ধর্মীয় সম্পৃতি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিরল দৃষ্টান্ত বহন করে। ধর্ম মানুষকে সহনশীল ভদ্রতা পরমত অহিংস হ্ওয়ার শিক্ষা দেয়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, অন্যান্য উপাসনালয়ে নামাজ ইবাদত প্রার্থনা হবে। কেউ কারো উপাসনালয়ে হামলা আক্রমন প্রতিরোধ করবে না। নিজ নিজ ধর্ম ইবাদত প্রার্থনা আনন্দচিত্তে পালন করবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা এটাই। ধর্মীয় সংগঠন থাকবে। নিজ নিজ ধর্মের আচার অনুষ্ঠান প্রচার থাকবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। কাঁদা ছোড়া ছোড়ি অন্যের মতের ধর্মের আদর্শের আঘাত করবেননা। যার যার ধর্ম বিশ্বাস চরিত্র নিয়ে বলার থাকার অধিকার সবার আছে। যার যার ধর্ম বিশ্বাস অনুসরণ তার অধিকার। সাংবিধানিক ভাবে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম বিশ্বাস নিয়ে পালন করবেন। কাউকে বাঁধা দেয়া প্রতিরোধ করা, ধর্মান্তরিত করার কোনো সুযোগ কাউকেই দেয়া হয়নি। মন্দির গির্জা মসজিদ মাজারে আক্রমন হামলা প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি করা কোনো ভাবেই প্রচলিত আইন ও সংবিধান সম্মত নয়। ব্যাক্তি গোষ্ঠির ধর্মীয় চিন্তা চেতনার প্রতিফলন বাস্তবায়ন অনুসরণ অনুকরণের সাংবিধানিক অধিকার সকল ধর্ম গোত্রের জনগনের জন্য সমান ভাবে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় ধর্মীয় সম্পৃতি নষ্ট করার কতিপয় গোষ্টির চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র দেখছি। এটি বাংলাদেশের অব্যাহত সম্পৃতির জন্য মারাত্নক ভাবে হুমকি। এই দেশে যোগ্যতা অভিজ্ঞতার মানদন্ডে সকল নাগরিক রাষ্ট্রিয় ও জাতিয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে । সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে নিজস্ব ধর্মীয় দাবি দ্ওায়া নিয়ে কথা বলে আসছে। কেউ কাউকে কন্ঠরোধ করছে না। দেশে হাজার হাজার মসজিদ আছে। মন্দির গির্জা উপাসনালয় আছে। এইসব উপসনালয়ের সমর্থক অনুসারি সকলেই আপনাপন ধর্ম পালন করছে। কেউ কারো জন্য বাধা নয়। রাষ্ট্রিয়ভাবে সেই অধিকার সবার জন্য সমান ভাবে দেয়া আছে।
তবুও কেন ধর্মীয় হানাহানি বিভাজন রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির পায় তারা। কাদের ইঙ্গিতে কারা এইসব রাষ্ট্র বিরোধি জনগনের বিরুদ্ধে সম্প্রিতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে। রাষ্ট্রিয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। রাস্তা দখল করে সমাবেসের নামে উশৃঙ্খল কর্মসূচি পালন বাস্তবায়ন অনুমতি বন্ধ করতে হবে। জনগনের জীবন জীবিকার অধিকার নির্বিঘ্ন করতে হবে। কর্মজীবি মানুষের দৈনন্দিন রুটি রুজির পথ বন্ধ করার মতো কোনো কর্মসূচিকে অনুমতি দেয়া যাবে না। অপরাধিদের আইনের মাধ্যমে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনে একজন ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালনের নামে একটি গোষ্ঠি সেখানে মারকীয় তান্ডব চালাতে দেখেছি। তাদের হামলায় একজন আইনজীবির নির্মম ভাবে মৃত্যু হয়েছে। সেখানের পবিত্র মসজিদে ভাংচুর চালিয়েছে। শত শত আইনজীবির উপর হামলা করেছে। আদালত ভবনের বাইরে লালদিঘি আন্দরকিল্লা কতোয়ালি নিউমার্কেট পর্যন্ত এই তাণ্ডলীলা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ভয় ভিতি আতঙ্ক তৈরি হয়। বিপুল সংখ্যক পরিবহন প্রাইভেট গাড়ি ক্ষতি গ্রস্থ করেছে দুস্কৃতকারিরা। ২৭ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে উত্তেজনা ধর্মীয় সম্পৃতি বিনষ্ঠ হ্ওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ধর্মের নামে সন্ত্রাস লালন পালন কর্মসূচির নামে জনভোগান্তি মোটেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে রাস্তাঘাট দখল করে অধিকার আদায়ের নামে জনভোগান্তির কর্মসূচির অনুমতি ও পালন করা বন্ধ করতে হবে। ষড়যন্ত্র মূলক কর্মসূচির নামে দেশ ও জনগনকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। রাষ্ট্রিয় আইনশৃঙ্খলা সাংবিধানিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যায় আবদার অসাংবিধানিক কর্মসূচি পালনের নামে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রিয় শৃঙ্খলা জনগনের জানমালের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। গত কয়েক দিনের সব ধরণের হত্যাযজ্ঞ বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ি ব্যাক্তি গোষ্টিকে আইনের আওতায় এনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবি হত্যার ধর্মিয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বিচারের আওতায় দেখতে চায় দেশের শান্তি প্রিয় জনগন।