বাবা-মা’রা কেমন আছে?
আজহার মাহমুদ
“বাবা-মা” এই দুটি সম্পদ যার আছে তার পৃথিবীতে অভাব আছে বলে মনে হয় না। এমন নেয়ামত আমরা পৃথিবীতে আর খুজেঁ পাবো না। অথচ এই নেয়ামতের কদর আমরা করছিনা। আমরা যেনো এই নেয়ামতকে পায়ে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। বাবা-মা যখন সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পৃথিবী। হারিয়ে যায় মানবিক গুণাবলী। সমাজ ও প্রকৃতিকে জয় করার মতো আর কোনো অস্ত্র থাকে না মানুষের হাতে। অনেকে বলে থাকেন, পেশিশক্তিই পারে পৃথিবী জয় করতে। কিন্তু বিপরীত চিন্তার মানুষরা বলে, না। পেশিশক্তি যা করে তার স্থায়িত্ব নেই। সবকিছুই সাময়িক। আর ভালবাসার জয় চিরস্থায়ী। একটি মানুষের মনকে জয় করে, অন্যটি দখল করে মানুষের দেহ। মন জয়ের জন্য প্রয়োজন মানবিক বোধের অনুশীলন আর দেহ জয়ের জন্য প্রয়োজন পাশবিক শক্তি। এখানেই প্রশ্ন। মানবিক হব, না পাশবিক! মানুষ নাকি পশু? যারা পশুত্বকে বরণ করেছে, তারাই পারে বাবা-মাকে অবহেলা করতে।তারাই পারে অমানুষের মতো বাবা-মাকে কষ্ট দিতে। অথচ শিশুকাল থেকে কৈশোর উত্তীর্ণকাল পর্য্ন্ত এই বাবা-মা কখনো তাদের সন্তানকে বোঝা বলে মনে করার কথা ভাবনায়ও আনেননি। কিন্তু এখনকার সন্তানরা পেরেছে এবং পারছে। পারছে বলেই আজ সরকারকে এসব বাবা মাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। নতুন করে প্রণয়ন করতে হচ্ছে বাবা-মায়ের ভরণপোষণের বিধিমালা। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, বিষয়টি ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ দেওয়া যেতেই পারে। সন্তানরা যখন তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন না, তখন কাউকে না কাউকে দ্বায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার এসেছে। এটি একটি বিরাট ভূমিকা সরকারের। একটি বিধিমালার খসড়া তৈরী করছে সরকার। বিবেকবোধ হারিয়ে সন্তানরা যখন ভুল পথে পথ পরিক্রমণের চেষ্টা করবে, তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকার সেচ্ছায় নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে জাগিয়ে তোলার যে চেষ্টা করছে-তার জন্য আবারও অভিনন্দন জানাই সরকারকে। তবে এ কথাও সত্য, সরকারের একার পক্ষে সমাজের কাঁধ থেকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা এই ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। মানবিক বোধের মানুষগুলোকে একতাবদ্ধ হয়ে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং নতুন সূর্যের মতো নিজেকে আলোকিত করে, সে আলো সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে মাজা সোজা করে দাড়াতে হবে। সমাজ আলোকিত না হলে পশুদের সমাজব্যবস্থাই এগিয়ে যাবে। আমাদের বাবা-মাও থেকে যাবেন অবহেলিত, নিপিড়ীত এবং অসহায়। যা কখনো কোনো সভ্য মানুষের কাম্য হতে পারে না। তাই সেইসব অবহেলিত, নিপিড়ীত এবং অসহায় বাবা-মায়ের পাশে দাড়ানো আমাদের সকলের একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে, তাদের কষ্ট গুলোর সামান্যতম হলেও দূর করার চেষ্টা করা আমাদের উচিৎ। তাই আসুন মানবিক দৃষ্টি দিয়ে হলেও এসকল বাবা-মায়ের পাশে সন্তান হিসেবে আমরা দাড়ানোর চেষ্টা করি।