২০ এপ্রিল ২০২৪ / ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৩:০৪/ শনিবার
এপ্রিল ২০, ২০২৪ ৩:০৪ অপরাহ্ণ

আর্থিক শৃংখলা পরিবার থেকে  রাষ্ট্র  

     

মাহমুদুল  হক  আনসারী
অর্থ ছাড়া  ব্যাক্তি পরিবার  সমাজ চলে  না। ব্যাক্তি সমাজ  রাষ্ট্র বেঁচে থাকতে  অর্থের প্রয়োজন। অর্থ  উপার্জনের জন্য মানুষ  দৈনন্দিন  জীবনে নানা পেশায় নিয়োজিত  থেকে  অর্থ সংগ্রহ  করে  থাকে। ব্যাক্তি পরিবার সমাজ ও  রাষ্ট্রকে সচল রাখতে হলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে অর্থের ভূমিকা  সর্বাগ্রে। অর্থ  না হলে পরিবারের  ভরণ পোষণ শিক্ষা চিকিৎসা অন্ন বাসস্থান  কোনোটাই  সম্ভব  হয় না। অর্থের জন্য মানুষ  মানুষের  প্রতি বিমাতা সুলভ  আচরণও করতে দ্বিধাবোধ করে না। জীবনে বেঁচে  থাকতে  হলে অর্থের বিকল্প নেই। শিক্ষা  দিক্ষা স্কুল কলেজ সব ক্ষেত্রেই অর্থ  ছাড়া  ব্যাক্তি পরিবার  সমাজ চলে  না।আবার  অর্থ কোনো কোনো  ক্ষেত্রে জ্ঞানী গুণীদের বাসায়  অনর্থের মূল।সুষম অর্থ  যেমন দরকার তেমনিভাবে অযাচিত অতিরিক্ত  অর্থ মানুষ  ও সামাজিক জীবনে  ধ্বংস  ডেকে  আনে। অতিরিক্ত  অর্থের লোভ লালসার কারণে মানুষ অনৈতিক  কাজে নেমে পড়ে। অতিরিক্ত  চাহিদা পূরণ  করতে  মানুষ  পশু  সুলভ আচরণ  ও করতে মানুষ  দ্বিধাবোধ করে না।যাদের  অতিরিক্ত  অর্থ  উপার্জন  করার মতো মাধ্যম  রয়েছে তারা প্রতিদিন সে মাধ্যম  ব্যবহার করে অবৈধ  অর্থের পাহাড়  গড়ছে।মুষ্টিময় এসব দুর্নীতিবাজ  লোভী অনৈতিক  মানুষগুলোর কারণে সমাজে আর্থিক শৃংখলা ভঙ্গ  হয়। তারা অবৈধ  অর্থের পাহাড়  গড়ে  সে অর্থ  দিয়ে  গাড়ী  বাড়ি  জমি জমা ছেলে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় কাড়ি কাড়ি অর্থ  খরচ  করে  থাকে।তাদের  হাতে অবৈধ  সম্পদের পাহাড়। অবৈধ অর্থ  জোগাড় করতে মাদক ইয়াবা চোরাকারবারী এবং মানুষ  পর্যন্ত খুন করতে তারা  দ্বিধাবোধ করে না।তাদের হাতে সমাজের বেশি  সংখ্যক মানুষ অসহায়  হয়ে পড়ে। তারা বাজার  মার্কেটে পণ্য মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অবৈধ  আয়ের  কারণে যএতএ যে সে ভাবে অর্থ খরচ  করতে  তাদের  গায়ে লাগে  না।তাদের হাতে সমাজের নিরীহ  মানুষ অসহায়। বাজারে যেকোনো  পণ্যের দ্বিগুণ তিনগুণ অর্থ  দিয়ে তারা পণ্য  ক্রয়  করতে  পিছপা হয় না।এক্ষেত্রে  বৈধ  আয়দারী মানুষ ও সমাজ তাদের  হাতে একধরনের জিম্মি  হয়ে  পড়ে। এসব অবৈধ অনৈতিক মানুষগুলোর কারণে সমাজে  অার্থিক শৃঙ্খলা  ভঙ্গ হয়। রাষ্ট্রের  পরিবার  থেকে  প্রশাসনের সব ক্ষেএে অনিয়ম দুর্নীতি লেগেই থাকে।একজনের  দেখা আরেকজন আর্থিক  অনিয়ম  করতে সাহস  পায় এবং  এগিয়ে  যায়।ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এবং  হচ্ছে।পরিবার  এবং  রাষ্ট্র যদি তার আয়কে সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পিত পরিকল্পনায় ব্যায় না করে তাহলে  সে পরিবার ও রাষ্ট্র আর্থিক সংকটে পড়বে এবং  দেউলিয়া হতে বেশী সময় লাগবে না।আমাদের সমাজে মানুষ  আয়ের জন্য যেমন  ভালো মন্দ চিন্তা  করে তেমনি খরচের বেলায় ও পরিবার পরিজনের  জন্য নিয়ম নীতি ছাড়া খরচ  করা হয়। রাষ্ট্রীয় অর্থকে শৃঙ্খলাপূর্নভাবে খরচ  করতে হলে অবশ্যই সেখানে  বাজেট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট চিন্তা ও পদক্ষেপ রাখতে হবে। আজকে আমরা  দেখতে পারছি বিশাল অঙ্কের বাজেট হয় রাষ্ট্রে।এ বাজেটে  দিয়ে  জনকল্যানে উন্নয়ন অগ্রগতি  করা  হয়। বাজেটের অর্থ কোন  কোন খাতে কাদের মাধ্যমে কী পদ্ধতিতে খরচ হবে সেটার নিয়মনীতি থাকলেও অনেকগুলো ক্ষেত্রে তা মানা হয় না।রাজনৈতিক ছএছায়ায় বাজেট  পরিকল্পনা  কয়া হলেও  সেক্ষেত্রে  রাজনৈতিক  সুযোগ সুবিধায় আথিক বাজেট  ব্যায় করতে দেখা যায়।উন্নয়নের বাজেট অর্থ  রাজনৈতিক নেতাদের  পকেটে বেশিরভাগ ডুকে পড়ে।সেক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের যেভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল সমাজ তা দেখে না।লাখ কোটি টাকার বাজেট  পরিকল্পনা প্রতিবছর বাস্তবায়ন  হলে ও যে  পরিমান টেকসই উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেভাবে  উন্নয়ন  হচ্ছে না।একটি নির্দিষ্ট  শ্রেনীর  কাছে অর্থ  জিম্মি হয়ে পড়ছে।তাদের  হাতে পুরো  সমাজ অসহায়। রাষ্ট্রের কর্নধার যারা তারাও কোনো কোনো ক্ষেএে তাদের  হাতে জিম্মি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওইসব  গোষ্ঠীর কাছে রাষ্ট্র বাধাপ্রাপ্ত হয়। একদিকে অবৈধ ভাবে অর্জিত হাজার হাজার  কোটি টাকার মালিক অপরদিকে নিঃস্ব  অসহায়  ছিন্নমূল কোটি কোটি মানুষের  সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।এই অসম প্রতিযোগীতা আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে।অসহায়  দরিদ্র মধ্যবিত্ত মানুষের  চাহিদা মতো  প্রয়োজন  মিটে না।তাদের  চাহিদা  মিটাতে প্রয়োজনতিরিক্ত অর্থ  প্রয়োজন হয়।সেক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে আর্থিক শৃঙ্খলা রাখা যায় না।প্রয়োজনের কারণে অনেক সময় অসহায়  মানুষ অনৈতিক  কাজে  জড়িয়ে  যায়।রাষ্ট্রকে অবশ্যই শৃঙ্খলাপূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থা গঠন করার জন্য চেষ্টা করাতে হবে। দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে  হবে। লোভী অনৈতিক ব্যাক্তি ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।অবৈধ  অর্থ কালো টাকা বাজেয়াপ্ত  করতে হবে।রাষ্ট্রের কোষাগারে নিয়ে আসতে  হবে।আর্থিক শৃঙ্খলা না থাকলে সে পরিবার ও সমাজ কোনো অবস্থায়  ঠিকে থাকতে  পারে না।আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে কোনো  কোনো  সেক্টরে  দুর্নীতির হরিলুট হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্টান দেশের সম্পদ দুর্নীতির  মাধ্যমে একটি শ্রেণীর কাছে পুঞ্জিভূত হচ্ছে।অথচ বিদেশী ঋণের  সাহায্যে দশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। এ ঋণের বোঝা  সতের কোটি  মানুষের মাথার উপর।তারা জানে না আসলে আজকে জন্ম নেয়া শিশুর  উপরও কী পরিমাণ ঋণ চেপে আছে।এক্ষেত্রে দুর্নীতির  মাধ্যমে  যারা উশৃঙ্খল অর্থ  উপার্জন  করেছে তারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করে দেশের আমজনগণের অধিকার ধ্বংস করছে। রাজনৈতিক  সরকার রাজনৈতিক  নেতাদের সুযোগ  করে দিয়ে অর্থের লুটপাট ধারাবাহিকভাবে  চালাচ্ছে। ফলে দেশের কোনো সেক্টরেই অর্থের  শৃঙ্খলা পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের  দুর্নীতির খবর চোখে পড়ে।ব্যাংক লুট থেকে  শুরু করে টেন্ডারের নামে লুটপাট অনিয়ন্ত্রিত। সরকারের  উচ্চ পর্যায়ের আমলাদের  নিকট কোনো  আর্থিক শৃঙ্খলা  নেই।বড় বড় আমলারা শত শত কোটি টাকার  মালিক।অবৈধ  শিল্পপতিদের নিয়ম বহির্ভূত সুযোগ  করে  দিতে তাদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে  নেয় এসব দুর্নীিতবাজ আমলারা।বলতে গেলে দু্র্নীিতবাজ আমলা দেশের সম্পদ লুটপাটকারী শিল্পপতিদের কাছে অসহায়  সমাজের  নিরীহ  মানুষ। এসব বিষয় রাষ্ট্র যদি চিন্তা না করে তাহলে কোনো দিন ও আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না। আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য অবশ্যই রাষ্ট্রের সমস্ত সেক্টরে দুর্নীতির বিরোদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিকল্পিত অর্থ নির্দিষ্ট সেক্টরে খরচ করে টেকসই  উন্নয়ন  বাস্তবায়ন  করতে হবে। উন্নয়নের বাজেট রাজনৈতিক কারণে রাজনৈতিক  পকেটে লুটপাট  বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নের সমস্ত  অর্থ সুশৃঙ্খলভাবে নির্দিষ্ট উন্নয়নে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সুষম বণ্টন  করতে হবে। তাহলে উন্নয়ন ও  হবে।দুর্নীতি  বন্ধ হবে। জনগণ সেক্ষেত্রে সুফল ভোগ করবে।জনগণের  প্রত্যাশা রাষ্ট্রের সকল স্তর থেকে দুর্নীতির উৎসব বন্ধ করতে হবে। লুটপাট করে অর্থ আত্মসাতের দায়ভার  আমজনগণ নেবে না। ঋণের বোঝায় জনগণকে বেচা বিক্রি  না করে সঠিক মূল্যয়নের মাধ্যমে  দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত  হলে সেখানে  কোনো  আর্থিক অনিয়ম থাকবে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রের সমস্ত আর্থিক  প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ  করে অবশ্যই আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে  আনতে জনগণের অন্তরের দাবী। আসুন আর্থিক শৃঙ্খলা  মেনেই যেন উন্নয়ন  কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সেটাই জনপ্রত্যাশা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply