২৯ এপ্রিল ২০২৪ / ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১:৪৩/ সোমবার
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ১:৪৩ অপরাহ্ণ

আওয়ামী লীগের সামনে ৩ কঠিন চ্যালেঞ্জ

     

উৎপল দাস অতিথি প্রতিবেদক

টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে দ্বাদশ নির্বাচনের আগেই তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সে তিনটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা, নির্বাচনী আসনগুলোতে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী নিশ্চিৎ করা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ তিন চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও শেখ হাসিনার নেত্বতেই আবারো সরকার গঠন করার সম্ভাবনা জোরালো হবে। তখন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি-জামায়াতের কোনো ষড়যন্ত্রই কাজ করবে না। তবে এই তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ কতটুকু সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল তিনজন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আবারো জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবে।
তিন চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের পাতাকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এই মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। কারণ করোনা পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পৃথিবী জুড়েই একটা মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তেলের দাম বেড়েছে, তাই আমদানি করতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ৫  কোটি মানুষকে (১ কোটি পরিবার) স্বল্পমূল্যে খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এছাড়াও নানা ধরনের ভাতা, ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা বিশ্বাস করি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অচিরেই শেষ হবে এবং আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবো।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু কথার কথা। পৃথিবীর কোথাও নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিৎ হয়েছে এমন উদাহরণ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে গণতন্ত্র বিশ্বাস করে এমন অনেক দেশেই সব দলের অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি। জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্যেও এমন নজির নেই। তবে আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেসব দলই, যাদের জনগণের উপর আস্থা আছে। দলটিকে বিশ্বাস করতে হবে, জনগণ তাদের ভোট দেবে; তাহলেই নির্বাচনে আসবে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে যেন সব রাজনৈতিক দল আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বিরাট রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব সৃষ্টি করা আমাদের দলের উদ্দেশ্য। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আমাদের দলের ১০-১২ জন ভালো ক্যান্ডিডেট আছে। তারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্চাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ করতে করতে নিজেদের তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের মতো গণতান্ত্রিক দলে একের অধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকে ঐকবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে আনবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ একই বিষয়ে বলেন, এখানে চ্যালেঞ্জের তেমন কিছুই নেই। নির্বাচনে কোন দল আসবে না আসবে সেটা সেই দলের বিষয়। এটা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা সরকারি দল হিসাবে চাই সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এখন নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার যেমন একটি রাজনৈতিক দলের আছে, তেমনি না নেয়ার অধিকারও আছে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না, বিশেষ করে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নির্বাচন করার সক্ষমতা নেই, তারা নির্বাচনে আসবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে যাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সক্ষমতা আছে, তারা নির্বাচনে আসুক সেটা আমরা চাই। আমরা বিশ্বাস করি, সব রাজনৈতিক দলই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে।
তিনি আরো বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী এটা আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দলের জন্য বড় কোনো বিষয় নয়। কারণ আওয়ামী লীগের ভেতরে অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল নেই, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। এ প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় প্রার্থীরা একে অপরের বিরোধিতা করলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনটা ঘটার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ টিকতে পারবেন না। সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
হানিফ আরো বলেন, দব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ করোনাকালীন দুই বছরের মহাদুর্যোগের পর গত এক বছর ধরে রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো পৃথিবীতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশও পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। তাই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টসাধ্য হলেও সরকার সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট আন্তরিক।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ তো আন্তজার্তিক বাজারের সাথে সম্পৃক্ত। এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখারা জন্য স্বল্পমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচী পালন করছে সরকার। দ্রব্যমূল্য বাড়লেও গ্রামের মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে আছে। হ্যাঁ, হয়তো গরিবরা কেউ দুধে ভাতে নেই, তবে কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। পুরো দেশেই বিভিন্ন ভাতার মাধ্যমে সরকার দেশের গরিবদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকায় আমরা প্রতি আসনেই কমপক্ষে ৩-৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব হচ্ছে, তৃণমূলে প্রতিনিধি অথবা কর্মী সভা থেকে শুরু করে দলের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকলে সেটি মিটিয়ে ফেলা। দলীয় নেতারা বিভেদ ভুলে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসেন, পাশাপাশি জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের অর্থ-সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল, সেটাও জনগণকে জানানো। এটাই আমাদের মূল কাজ। আশা করছি, সেটা করতে আমরা সফল হবো।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে এস এম কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই তিনিও চান সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু কোনো দল যদি নির্বাচনে জয়ী হবে, এটা আশ্বাস পাওয়ার পর নির্বাচনে আসতে রাজি হয় বা জনগণের কাছে যদি তাদের কোনো জবাবদিহিতা না থাকে তাহলে তাদের তো জোর করে নির্বাচনে আনা সম্ভব নয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply