১০ মে ২০২৪ / ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:২১/ শুক্রবার
মে ১০, ২০২৪ ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

২০০৭ এর মতো বিএনপি’র ঘাড়ে বন্ধুক রেখে সুশীলরা ষড়যন্ত্র করছে না তো ?

     

মো. আবদুর রহিম

২০০৭ ও ২০০৮ দুই বছর ছিল সেনা সমর্থিত এক এগার সরকারের সুশীলদের জমানা। সেই জমানায় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের উপর চালানো হয় খড়গ। নতুন নতুন দল গঠনের মহোৎসব আর দুর্নীতির নামে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের নতুন খেলা। সেই দু’বছরে সরকারের উপদেষ্টা নামের সুশীলরা দেশকে সামনে নিতে ব্যর্থ হয়। সবশেষে শেখ হাসিনার আন্দোলনে মাথা নত করে নির্বাচন দিয়ে ‘ছেড়ে মা কেঁদে বাচি’। এই ছিল তাদের হাল হকিকত। দেশ ছেড়ে, কেউ পালিয়ে জীবন বাঁচায়, কেউ আত্মগোপনে থেকে ষড়যন্ত্রের চোরাবালিতে অবস্থান নেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ মহা উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। ২০২০ থেকে মহামারি করোনা ভাইরাস, বন্যা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে কঠিন এক পরীক্ষা ফেলে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার এক মহা সাহসী সরকার। বিচক্ষণ-দৃঢ়তা মহাসাহসী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে ৩টি কৌশল গ্রহণ করেছিল। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি। ২০০৯ এর পূর্বে প্রতিদিন দৈনিক ১৬ থেকে ২০ ঘন্টার লোডশেডিং ছিল। শেখ হাসিনা’র সরকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। লোডশেডিং এর মহাসংকট থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছিল বর্তমান সরকার। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে গ্যাস ও জ¦ালানি সংকটের কবল থেকে মুক্তির জন্য জার্মানি জ¦ালানি এবং বিদ্যুতের জন্য আবার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্রের ঘোষণা দেয় তখন আমাদের দেশের সুযোগ সন্ধানি কিছু পন্থি মাতম তুলেছিল। তারা বলছিল সুন্দরবনের সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ নিয়ে কেউ কেউ মহাকাণ্ড ঘটানোর মত রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদে উঠেছিল। সবচেয়ে দারুণ খবর হলো এখন তারাই বলছেন, আমাদের কয়লা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া দরকার। তখন বলছিলেন, কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ বিপন্ন করবে পরিবেশ। এখন বলছেন কয়লা কেন মাটির নিচে পুতে রেখেছে। সরকার বড় পুকুরিয়া কয়লা উত্তোলনের আবার সক্রিয় হয়েছে। ইতোপূর্বে জ্বালানি ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় সমালোচনা হলো গ্যাস উত্তোলনে অনীহা। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ৫টি গ্যাস কূপ খনন করতে ৫০০ কোটি টাকা লাগে। এ অনুসন্ধানে যদি গ্যাস পাওয়া না যায় এ আশংকাতো থেকেই যায়। সুতরাং ঝুঁকি নিতে হিসাব কষতে হয় কারণ টাকাটা তো জনগণের। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার গ্যাস অনুসন্ধানে যথেচ্ছে ক’প খনন করে সেই সময় কিছু পন্থিজন ব্যাপক সমালোচনা করেন। তারা বলেন যথেষ্ট যাচাই-বাছাই না করে গ্যাস অনুসন্ধান এক ধরনের দুর্নীতি। তারাই বর্তমান সংকটে সরকারকে সমালোচনা করে যাচ্ছে। বর্তমান সংকটে সবচেয়ে বেশি আতংক ছড়ানো হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জুলাই ২০২২ খ্রি. জাতিকে আশ্বস্থ করে জানালেন, ‘বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী ৬ থেকে ৯ মাস খাদ্য আমদানি করা যাবে। শেখ হাসিনার শাসন আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গর্ব করার মতো অবস্থানে পৌঁছে। এ রিজার্ভ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি এবং সামর্থ্যরে প্রতীক। বাংলাদেশের রিজার্ভ দুই বছর ধরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপর ছিল। সম্প্রতি তা ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। অর্থনীতিতে বলে একটি দেশের রিজার্ভ দিয়ে ৩ মাসের ব্যয় মেটানো যায় তা স্বস্তিদায়ক। বর্তমানে থাকা রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ আগামী ৫ মাসের আমদানী ব্যয় মেটাতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে সব দেশের রিজার্ভেই নিম্মমুখী প্রবণতা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে চীনে। গত ৭ মাসে চীনের রিজার্ভ ৩ হাজার ২৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ হাজার ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। জাপানের রিজার্ভ ১ হাজার ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৩০০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এ হিসাবে সুইজারল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান সহ বহু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ডলারের রিজার্ভ কমেছে। ডলার নিয়ে বিশ^জুড়ে হাহাকার। প্রায় সবদেশের মুদ্রার মান নিম্নমুখি। বাংলাদেশ তো বিশ্ব পরিস্থিতির বাইরে থাকার কোন সুযোগ নেই। তবে আমাদের দেশের পাচারকারী দুর্নীতিবাজরা যদি মুদ্রা পাচার থেকে বিরত থাকতো, যদি তারা দেশপ্রেমিক হতো তাহলে হয়তো দেশ আরো ভালো অবস্থানে থাকতে পারতো। কালো টাকা ও মুদ্রা পাচার রোধে সক্রিয় থাকার পরও এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না। অর্থ পাচার বন্দে নজর দারি বাড়ানো অপরিহার্য্য। বর্তমান সংকটে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ‘হিসেবি গৃহস্থের’ পথ ধরতে দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারি ব্যয় কমানোর নানা পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি নাগরিকদের ‘হিসেবি গৃহস্থের’ পথ ধরতে বলেন। প্রধানমন্ত্রির নির্দেশ হলো ‘সঞ্চয় করতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ঢালাওভাবে ব্যবহার না করে কৃচ্ছিসাধন করতে হবে, অপচয় বন্ধ করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমানো, আমদানিকৃত বিলাসদ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। কারণ দেশে ভালো চিকিৎসা হয়।’ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত জিনিস বিশ্ব থেকে আমাদের আমদানি করতে হয়, যেমন জ্বালানী তেল, গম, ভোজ্য তেল, এলএনজি প্রত্যেকটিার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাহাজের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯টি পণ্য আমদানির হিসেবে দেখা যায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৮ দশমিক বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে-যাবে। তবে সাবধান থাকতে হবে এ কারণে যে, বিশে^র উন্নত দেশগুলোও বর্তমান পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছে। সুখবর হলো এরপর বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রেখে পরিস্থিতি দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে সামাল দিয়ে যাচ্ছে। একটি রাষ্ট্র, একটি সমাজ, একটি পরিবার নানা কারণে হঠাৎ সংকটে পড়তে পারে। করোনার পর বন্যার পর, যুদ্ধ বাংলাদেশকে সংকটে ফেলেছে। দেশের সংকটে দেশপ্রেমিক শুভাকাক্সক্ষীরা সরকারে পাশে দাঁড়ান, সৎ পরামর্শ দেন। আর মতলববাজ ষড়যন্ত্রকারীরা সংকটে কষ্ট দেখে আনন্দ পায়, হাততালি দেয়, সর্বনাশ ডেকে আনে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি একটি বৈশি^ক সংকটের বাস্তবতা। এ সময় ২০০৭ এর মতো বিএনপি’র ঘাড়ে বন্দুক রেখে কথিত সুশীলরা ষড়যন্ত্র করছে কিনা বিষয়টি দেশপ্রেমিক সকলকে সজাগ থাকতে হবে। লেখক: সাধারন সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply