১৬ মে ২০২৪ / ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:০১/ বৃহস্পতিবার
মে ১৬, ২০২৪ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

ছোটদের মূল্যায়ন করতে পরীক্ষার মুখে শিক্ষকরা

     

প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের সমাপনী পাসের ক্ষেত্রে শিখন যোগ্যতার ভিত্তিতেই ফলাফল তৈরি করা উচিত বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এই ক্ষেত্রে ক্ষুদে শিক্ষার্থীর অন্তত তিনমাসের পড়ালেখাকে আমলে নিয়ে তার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করাও জরুরী বলে মত তাদের।

আর পাসের বিষয়টি মূল্যায়নের ভিত্তিতে করা হলে সেক্ষেত্রে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ড. রাশেদা কে চৌধুরী। তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টার মতে, শিক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কারচুপির সুযোগ রয়েছে। তাই এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে।

তবে করোনা মহামারির মধ্যে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানজনিত সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোনো ধরণের পরীক্ষা নেয়ারই বিপক্ষে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের মতে, সরকারের উচিত ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সবাইকে পাস করিয়ে এটি উপহার হিসেবে দেওয়া। এতে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও মনে করছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অন্যতম এই চিন্তকের।

করোনা মহামারি বিবেচনায় নিয়ে এবছর প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে পাসের ক্ষেত্রে মূল্যায়ণের ভার শিক্ষকদের ওপরই রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন।

বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হলে তাতে এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে কি-না জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, ‘এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, আমরা তাদের দায়িত্ব দেব। শিক্ষকরা যেভাবে প্রশ্ন করবেন সেভাবেই হবে, স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্ত দেবেন।’

কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা না নিয়ে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নিতে গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরুর পর থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় বসতে হত অন্য বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে।

দেশের প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় ছয় মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অবশেষে এই পরীক্ষা বাতিল করা হলো।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী যা বললেন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার। তার বদলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। অতএব আমরা পিইসি পরীক্ষাটা নিচ্ছি না, এ বছর স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষাগুলো নেব।’

‘মাধ্যমিকের আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়’

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রাথমিক সমাপনীই নয়, মাধ্যমিকের আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা উচিত নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে এই ধরণের পরীক্ষা নেই। আমাদের এখানেও থাকা উচিত নয়।’

‘তবে যদি সৃজনশীলতা থাকত তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষায় পাসের জন্য সবাই মুখস্ত করছে। অন্যদিকে পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ টিউশন ফি দিতে হচ্ছে। ফলে শিশুরা শিক্ষিত হচ্ছে না, পাসের জন্য মুখস্ত করছে। তাই শুধু ৫ম নয়, ৮ম শ্রেনীর পাবলিক পরীক্ষাও বন্ধ করে দেয়া উচিত।’

শিশুদের পাবলিক পরীক্ষার বদলে সৃজনশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বলা হয় পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এটা ভুল ধারণা। কারণ যে শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হয় তাদের আত্মবিশ্বাস তো ধ্বংস হচ্ছে। রাষ্ট্র তো এটা করতে পারে না।’

মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে গ্রামের এবং বন্যায় আক্রান্ত শিশুরা সংসদ টিভি দেখার সুযোগই পায়নি। সেক্ষেত্রে তাদের মূল্যায়ন করা তো কঠিন হয়ে যাবে। আবার অনেক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সর্বত্র রাজনীতিকরণ ও টিউশন না করাসহ বেশকিছু কারণ হতে পারে। তাই চোখ বন্ধ করে এবছর সবাইকে পাস করিয়ে দেয়া উচিত। সবাই খুশি হবে। উপহার হিসেবে দেওয়া উচিত। এতে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না।’

‘মূল্যায়ণটা খুব স্ট্রংলি মনিটর করতে হবে’

তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই মূল্যায়নটা খুব স্ট্রংলি মনিটর করতে হবে। কারণ শিক্ষকদের নিয়ে এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই মূল্যায়নে কারচুপির সুযোগ নিয়ে। সে ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি যাতে না হয় সেজন্য শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রশাসনকে অবশ্যই নজরদারি করতে হবে। যাতে যে পদ্ধতিতেই মূল্যায়ন হোক না কেন অর্থাৎ শ্রেণীভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষা কিংবা শ্রেণিকক্ষের ভিতরেই বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়ন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষকদের আলাদা করে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই।’

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিকের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষকই প্রশিক্ষিত। কিন্তু প্রশিক্ষণটা কাজে লাগাচ্ছে কি-না সে বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার। তবুও শ্রেণীভিত্তিক মূল্যায়নের দক্ষতা যদি থেকেও থাকে সেগুলো যথাযথভাবেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে কিনা সেটি ভেবে দেখা উচিত।

‘শিক্ষার্থীর শিখন যোগ্যতা খেয়াল রাখতে হবে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. তারিক আহসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মূল্যায়ণের ভিত্তিতে পরবর্তী শ্রেনীতে উন্নীত করতে গেলে একটা একাডেমিক বছরে একজন শিক্ষার্থীর যে ধরনের শিখন যোগ্যতা দরকার সেটা সে পাচ্ছে না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।সবটুকু পড়তে ক্লিক করুন

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply