২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৪:১৭/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৪:১৭ অপরাহ্ণ

লামা পৌর শহরে শব্দ দূষণের মাত্র বেড়ে চলছে

     

মো,কামরুজ্জামান, লামা (বান্দরবান)
লামা পৌর শহরে পরিবেশ দূষণের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে শব্দ দূষন। সরকারের সংশ্লিষ্ট আইনের কোন বালাই নেই এই উপজেলার ক্ষেত্রে। তামাক চাষ, ব্রীকফিল্ড, পাহাড় কর্তন, পানি ও মাটি দূষণসহ লামা উপজেলার সর্বত্রয়ই বলা যায় কোন না কোন ভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সে সাথে পাল্লা দিয়ে পৌর শহরের স্পর্সকাতর স্থানগুলোতে হচ্ছে জগণ্য রকমের শব্দ দূষন।
এর ফলে পথচারি, নারী-শিশু, বয়:বৃদ্ধ, ছাত্র-ছাত্রী, চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগিরাসহ সর্ব সাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। এসব নিয়ন্ত্রণে দেশে রয়েছে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা। কিন্তু নাগরিকদের অসচেতনতা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে এসব আইনের প্রয়োগ হচ্ছেনা।
১৯৯৭ সালে সরকার শব্দ দূষণের গুরুত্বটি বিবেচনায় রেখে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে নিরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা ও বানিজ্যিক এলাকা।
এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায়-৭০, শিল্প এলাকায়-৭৫, নিরব এলাকায়- ৪৫, আবাসিক-কাম বাণিজ্যিক এলাকায়-৬০ ডেসিবেল। রাতের জন্য সর্বত্রয়-১০ ডেসিবেলের কম শব্দসীমা।
এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নিরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব স্থানে মোটর গাড়ির হর্ণ বাজানো বা মাইকিং করা স¤র্পূর্ণ নিষেধ।
এরপর ২০০৬ সালে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা প্রনয়ণ করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা হলো ৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকার জন্য শব্দসীমা যথাক্রমে; সর্বোচ্চ ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায়-৬০ ও ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায়-৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে আইনে সাব্যস্ত করা হয়েছে ।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের ইট বা পাথর ভাঙ্গার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবেনা। অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজানো যাবেনা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবেনা। এই বিধির আওতায় স্কুল কলেজ-হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চারদিকে ১০০ গজের মধ্যে কোন প্রকার হর্ণ বাজানো যাবেনা। আরো বলা হয়েছে কোন উৎসব সামাজিক রা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, এমপ্লি­ফায়ার বা কোন যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০ টার পর কোন ভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবেনা।
কিন্তু লামা পৌরশহরে এই বিধিমালা মানছেন না কেউ। এই আইনের ফাঁকগলে চলছে ঘোটা উপজেলা ব্যাপি জনসাধারণের সহ্যসীমার বাহিরে পরিবেশ ও শব্দ দূষণ। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর ঘেঁসে বাস ও জীফ ষ্ট্যান্ড। একই স্থানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাণি সম্পদ-চিকিৎসা কার্যালয়, শহর ও উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় গণপূর্ত ভবন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সরকারি খাদ্যগুদাম।
এসব প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে বাস-জীফ সমুহ রাত-দিন যানবাহনের কারণে অ-কারণে হাইড্রলিক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে । এছাড়া পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিজ্ঞ সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ও সরকারি সকল দপ্তর সমুহ। অন্যদিকে শহরে প্রবেশের প্রধান সড়ক ঘেঁেসআবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা রয়েছে। এসব অফিস আদালত ও আবাসিক এলাকায় বানিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ওয়েল্ডিং সপ, মাইকিং হাউজ ইত্যাদি।
এসব প্রতিষ্ঠানের মাত্র ২০-৫০ গজের মধ্যেই উল্লেখিত সরকারি দপ্তর সমহের অবস্থান। এসব ওয়েলল্ডিং সপ ও মাইকিং হাউজের মাত্রারিক্ত শব্দে অফিস আদালত ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণের শিকার হন। মাইকিং (শব্দ যন্ত্র) ও ওয়েল্ডিং মেশিনের বিকট শব্দ আশ-পাশের মানুষের শ্রবনযন্ত্রে মারাত্বক প্রভাব ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানাগেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের গড়ে শব্দের মাত্রা-১৫০-২৫০ ডেসিবেল পর্যন্ত হয়। এর ফলে জনসাধারণের চলাচল, আবাসিক এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় বিঘœ হওয়ার পাশাপাশি তাদের শ্রবণশক্তি হ্নাশ পাচ্ছে। এর উপর তথাকতিথ নাক,কান ও চোখের ডাক্তারের প্রচার, শব্দযন্ত্র’র আওয়াজ বিষিয়ে তুলেছে সবাইকে।
এ ব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আরএমও, ডা. শফিউর রহমান মজুমদার জানান, একজন সুস্থ্য মানুষ ৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ শুনার সহনীয় ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রর পাশেই ১২০-২০০ ডেসিবেল শব্দ হয়। তিনি বলেন, অতিমাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে মানুনেষ অন্তকর্ণ ডেমিজ, শ্রবন শক্তি হ্নাশ, রোগিদের প্রেসার বেড়ে যাওয়া, স্নায়ু দুর্বলতা বৃদ্ধি ও গর্ভবতীদের ব্রুণবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় শব্দ দূষনের বিষয়টি নজরে আনার দাবী তুলেছে স্থানীয়রা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply