২৯ এপ্রিল ২০২৪ / ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:২৫/ সোমবার
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ১২:২৫ অপরাহ্ণ

৪৫ ভোগ্যপণ্যের ৩৭টিতেই ভেজাল

     

দেশের বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য ভেজালে ভরে গেছে। এতে মেশানো হচ্ছে নানার ক্ষতিকারক দ্রব্য। ফলে বাজারে ভেজালমুক্ত পণ্য পাওয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট ৪৫টি ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ৩৭টিতেই ভেজালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব পণ্যের একাধিক নমুনা ল্যাবরেটরিতে নিয়ে পরীক্ষা করে। পরীক্ষাকৃত সব ভোগ্যপণ্যে ২৬ শতাংশ ভেজালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ভেজাল পাওয়া ৩৭টি পণ্যের মধ্যে ৭টিতে শতভাগ ভেজাল রয়েছে।তবে বাকি ৮টি পণ্য শতভাগ ভেজালমুক্ত।

অবশ্য যেগুলোতে শতভাগ ভেজালযুক্ত বা মুক্ত পাওয়া গেছে, সেসব ভোগ্যপণ্যের অল্প সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শতভাগ ভেজাল পাওয়া পণ্যগুলো হলো— ছানা, এর ৩টা নমুনা পরীক্ষা করে শতভাগ ভেজাল পাওয়া গেছে। বনস্পতির দুটি, মেওয়া একটি, লাড্ডুর দুটি, জেলি দুটি নমুনা ও ভেজিটেবল অয়েলের ৮টি বোতল পরীক্ষা করে শতভাগ ভেজাল পেয়েছে।

৭টি ভোগ্যপণ্য শতভাগ ভেজালমুক্ত পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে, মেথির ৩টি নমুনা, সাগুদানার ২২টি, তিলের তেল চার বোতল, বাতাসার দুটি, বেভারেজ ১৯টি, গুড়া দুধ ১৭টি ও ৩টি নিমকি পরীক্ষা করে ভেজাল পাওয়া যায়নি। তবে ময়দা ১১৯টি ব্রান্ডের প্যাকেট পরীক্ষা করে শতভাগ ভেজালমুক্ত পেয়েছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির এক কর্মকর্তা  বলেন, ‘সব ভোগ্যপণ্য একেবারে খারাপ পাই, এমন নয়। কিছু ভালোও পাই। তবে যেগুলো শতভাগ খারাপ বা ভালো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সেগুলোর নমুনা কম পরীক্ষা করা হয়েছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাজারে ভেজালমুক্ত ভোগ্যপণ্য পাওয়া এখন ভাগ্যের ব্যাপার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ভেজাল পরীক্ষা করা বা সরকারকে জানিয়ে দেয়া। আর বাজারে ভেজালরোধ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)।’

পাবলিক হেলথের পরীক্ষায় দেখা গেছে, চালে ৪. ৫ শতাংশ ভেজাল, ডাল ও ছোলায় ৩.৭ শতাংশ ভেজাল, আটা, গম ও ভুট্টায় ২.২ শতাংশ ভেজাল, সুজিতে ১০.৪ শতাংশ ভেজাল, বেসনে ২২.৮ শতাংশ, সেমাইতে ৬৮.৫ শতাংশ ভেজাল, হলুদে ২৭.৭ শতাংশ, মরিচে ৪৪.৫ শতাংশ, ধনিয়ায় ৪৭.৬ শতাংশ, জিরায় ২ শতাংশ, গরম মসলায় ২০ শতাংশ, সরিষার তেলে ৩০.৭ শতাংশ, সয়াবিন তেলে ৬৮ শতাংশ, পামতেলে ৪৪.৫ শতাংশ, নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলে ৩.৫ শতাংশ, চা-পাতায় ২.১ শতাংশ, চিনিতে ১.৩ শতাংশ, গুড়ে ৭২.৬ শতাংশ, মধু বা লিকুইড গ্লুকোজে ৬৬.৭ শতাংশ, ড্রিংকসে ৩.৬ শতাংশ, চাটনি বা আচারে ৩৩.৩ শতাংশ, জুস বা শরবতে ১০.৫ শতাংশ, লবণে ২৫.২ শতাংশ, শুঁটকি মাছে ২০ শতাংশ, তরল দুধে ২০ শতাংশ, মিষ্টি ২২৪টি পরীক্ষা করে দেখে ২২৩টার মধ্যে ভেজাল, যার অর্থ ৯৯.৬ শতাংশ ভেজাল, ঘিতে ৫০ শতাংশ ভেজাল, বিস্কুটে ২৫.৯ শতাংশ, চকলেট বা লজেন্সে ৬৩.৬ শতাংশ ভেজালের উপদান রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথের পাবিলক এনালিস্ট মাজেদা বেগম বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্যাম্পল বা ডাটাগুলো সংগ্রহ করে দেয়। পরে আমরা সেগুলো পরীক্ষা করে থাকি।’

কি ধরনের ভেজাল মেশানো হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারাবছর বিভিন্ন প্যারামিটারে এগুলো পরীক্ষা করা হয়। একটা একটা ভোগ্যপণ্যে এক এক ধরনের ভেজাল বা রাসায়ানিক দ্রব্য মেশানো পাওয়া যায়।’

বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, ‘ভেজাল পণ্যরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।’

তবে বিএসটিআই’র ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের ভেজালরোধে সবকিছুতে আসলে বিএসটিআই’র ভূমিকা থাকে না। তাদের কিছু দুর্বলতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসটিআই’র সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। তাদের জনবল বড়াতে হবে এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের তদারকি জোরদার করতে হবে।’

ভেজালরোধে খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অনেক বেশি বলেও জানান গোলাম রহমান।- পরিবর্তন

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply