৯ মে ২০২৪ / ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:০৯/ বৃহস্পতিবার
মে ৯, ২০২৪ ২:০৯ পূর্বাহ্ণ

ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্টায় যাকাত

     

মাহমুদুল হক আনসারী
ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্টায় মুসলিম বিশ্বে যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম।যাকাত প্রধান করা সামর্থবান মুসলমানদের উপর অবশ্যই কর্তব্য।নামাজ রোযা যেভাবে একটি পালনীয় আবশ্যকীয় ইবাদত, অনুরূপভাবে সামর্থবান মুসলমানদের জন্য সম্পদের উপর বছরে একবার নির্দিষ্ট হারে পূর্ণ হিসেব করে যাকাত প্রধান করা অবশ্যই কর্তব্য ইবাদত।মুসলীম বিশ্বে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য্ অপরিসীম।ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্টায় এ যাকাতের গুরুত্ব বলে লিখে শেষ করা যাবে না।স্বভাবতই প্রতি বৎসর মাহে রমজান আসলেই যাকাত আদান প্রদানের কথা গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়ে থাকে।কারণ রমজান মাসে অতিরিক্ত কতিপয় ইবাদত বন্দেগী মুসলীম সমাজে প্রচলিত আছে।তন্মধ্যে রোযা একটি অন্যতম পালনীয় কর্তব্য ইবাদত।সব শ্রেণীর মানুষের জন্য রোযা পালনীয় হলেও যাকাতের বিষয়টা ভিন্ন।যাকাত দেয়ার মতো সামর্থবান মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র বছরে একবার নির্দিষ্ট পরিমাণে যাকাত আদায় করতে হয়।যাকাত অর্থ সম্পদকে পরিচ্ছন্ন করা,বিপদমুক্ত করা।সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। যাকাত প্রদানে প্রদানকারীর সম্পদ বিশুদ্ধ হয়, এবং একটি ফরজ ইবাদত পালন হয়।যাকাত নামক এ ফরজ অবশ্যই পালনীয় নির্দেশ যারা মানবে না তাদের সম্পদের আয় উন্নতির উপর ক্ষতির অপার সম্ভাবনার কথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার বলা হয়েছে।এসব ধর্ম গ্রন্থে নামাজ ও রোযার পাশাপাশি যাকাত প্রদানের কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।বলা হয়েছে যারা সামর্থ থাকা সত্তেও যাকাত প্রদান করবে না তাদের জন্য কঠোরতম শাস্তি অপেক্ষা করছে।বাংলাদেশসহ মুসলীম বিশ্বে ঠিক কী পরিমাণ যাকাত প্রদানে সক্ষম ব্যাক্তি প্রতিষ্টান রয়েছে, তার হিসেব না থাকলেও তবে এ পরিমাণ সংখ্যায় কম নয়।মুসলীম বিশ্বে ধনী রাষ্ট্র অনেক আছে।ধনী ব্যাক্তি প্রতিষ্টানের সংখ্যাও কম নয়।কিন্তু সঠিকভাবে হিসেব নিকেশ করে যাকাত প্রদানের সিস্টেম নেই বললে ভুল হবে না।ধরা যাক বাংলাদেশের কথা।বাংলাদেশ মুসলীম সংখ্যা গরিষ্ট একটি জনবহুল দেশ।এখানে ধনী গরিব মিলিয়ে প্রায় সতেরো কোটির মতো মানুষের বসবাস।শতকরা ছিয়াশি পারসেন মুসলমান।এ মুসলীম সংখ্যার মধ্যে বড় একটি অংশ যাকাত প্রদানের সামর্থ রাখে।তাদের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে, হাজার হাজার লাখো কোটি টাকা সারা বছর ব্যবসার মধ্যে রানিং হচ্ছে।তাদের ব্যবসায় প্রচুর পরিমাণ লাভ হতেও দেখা যাচ্ছে।ব্যবসার মাধ্যমে তাদের উন্নতি অগ্রগতি হচ্ছে।আবার অনেক মুসলমানের ব্যাপক অর্থ নির্দিষ্ট জায়গায় গচ্ছিত আছে।সব মিলিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি গ্রাম মহল্লা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা শহরে সামর্থবান যাকাত দাতার সংখ্যা কম নয়।কিন্তু সিস্টেম ও শৃংখলা না থাকার কারণে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় করার বিধি বিধান বাধ্যতামূলক না থাকাতে যাকাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারি সেবা হতে সমাজ ও দুস্থ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।বাংলাদেশের মতো অনুন্নত,গরীব অভাবী দেশে যাকাত গ্রহণ ও প্রদানে শৃংখলা থাকলে মা্ত্র কয়েক বছরের মাথায় এ দেশে দুস্থ, ছিন্নমূল, অভাবী মানুষ দেখা যাবে না।মূলত: যে উদ্দেশ্যে যাকাত আদান প্রদানের নির্দেশ রয়েছে সেটা এখন মুসলীম বিশ্বের কোথাও বাস্তবায়ন এবং প্রতিষ্টা নেই।যাকাত নামক এ ইবাদতের বাস্ত গুরুত্ব মুসলীম সমাজে দেড় হাজার বছর পরও প্রতিষ্টা হয়নি।যাকাত প্রদানের সিস্টেম শৃংখলা মুসলীম দেশে এখনো বাস্তবায়ন হয় নি।মুসলীম বিশ্বের কতিপয় দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাকাত আদায় করার কথা শোনা গেলেও সেখানেও সঠিকভাবে যাকাতের সুফল দেখা যায় না।মুসলীম বিশ্ব একটি জাতি, একটি গোষ্ঠী। একে অপরের সাথে ঈমান আমলে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।সুখ দুঃখে একে অন্যের সাথি।ভাই ভাইয়ে দেশে দেশে যোগাযোগ সহযোগিতা আন্তরিকতা ভালোবাসা দেখানো অন্যতম বিষয়।পৃথিবীর মুসলমান সে যে দেশেই বাস করুক না কেনো তার সুখে দুখে খবর রাখা অপর মুসলমানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।কিন্তু বাস্তবে মুসলীম বিশ্ব কী দেখছি।সামর্থবান মুসলীম বিশ্ব দুর্দশাগ্রস্ত অভাবী মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না।তাদের অট্টালিকা সম্পদ প্রয়োজন অপ্রয়োজনে নষ্ট করছে।কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে অর্থ মুসলমানদের বিরোদ্ধে খরচ করতেও দেখছি।সে ক্ষেত্রে ইসলামের বাণী মূল্যবোধ সামাজিক ন্যায় নীতির কথা চিন্তা করা হয় না।পৃথিবীর মুসলীম অধ্যুষিত অনেক গুলো রাষ্ট্র বর্তমানে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মজলুম।তাদের পাশে দাড়ানো সামর্থবান রাষ্ট্র সমাজ ও ব্যাক্তির উপর অবশ্যই কর্তব্য।এ কর্তব্যের কথা গুরুত্ব সহকারে মুসলীম বিশ্ব পালন করলে পৃথিবীর মুসলমানদের অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।মুসলীম বিশ্বের অথবা অমুসলীম দেশের অধীনস্থ অনেক গুলো মুসলীম অঞ্চলে মুসলমানরা কঠিনভাবে নির্যাতন ও নিষ্পেষণের শিকার।প্রতিদিন কোনো না কোনো দেশে ইমানদার মুসলমান নর নারী শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।তাদের উপর মানবতা বিরোধি মানবাধিকার লঙ্গন করা হচ্ছে।পৃথিবীর অনেক গুলো দেশে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় দশ লাখের উপর রোহিঙ্গা শিশু নারী পুরুষ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত হয়েছ।তারা উদ্বাস্তু অসহায় নির্যাতিত মজলুম মানবতা।বাড়ি ঘর জমি জমা ব্যবসা বাণিজ্য ইজ্জত অবরু সবকিছু শেষ করে নিশ্চিহ্ন হয়ে এখন তারা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন যাপন করছে।তাদের ইজ্জত স্বাধীনতা মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্ব বিবেক এগিয়ে আসলেও যেভাবে মুসলীম বিশ্বের এগিয়ে আসার কথা ছিলো কিন্তু সেভাবে আসতে দেখছিনা আমরা।যাকাতের মর্মবাণী ইতিহাস ঐতিহ্য সেখানে ভূমিকা রাখতে পারে নি।বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম মানবতাবাদি একটি দেশ।দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবদরদী একজন শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধান।তাই তিনি মানবতার কল্যাণে শান্তির দূত হিসেবে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।মানবতার কল্যাণে তাঁর ভূমিকা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।বাংলাদেশ এখনো অভাব ও দারিদ্রমুক্ত না হলেও বাংলাদেশ অতিথি পরায়ন দেশের অন্যতম।তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ ও মানবতার কারণে আজ দশ লাখের অধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন।যতদিন তাদেরকে এখানে থাকতে হবে কীভাবে তাদেরকে সুন্দরভাবে রাখা যায় সেসব বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ও চেষ্টার ত্রুটি নেই।কিন্তু এ দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশ সরকারের একার নয়।পৃথিবীর সমস্ত মুসলীম বিশ্বের সমর্থবানদের দায়িত্ব রয়েছে। দু একটি দেশের প্রশংসিত ভূমিকা দেখা গেলেও অনেক গুলো দেশের উল্লেখ যোগ্য কোনো তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নেই। রোজার মাসে, যাকাত প্রদানের মাসে বিত্তবান ব্যাক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির পাশে দাড়ানো যাকাতের অন্যতম দাবি। সারা পৃথিবীর যেখানেই মুসলমানরা অর্থনৈতিক ভাবে নির্যাতিত নিষ্পেশিত, সেখানেই সামর্থবান মুসলিম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কতিপয় লোক দেখানো যাকাতের কর্মসূচি পালন না করে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্টায় বিশ্বে যাকাতকে প্রতিষ্টা করতে হবে। আজকের দুনিয়ায় মজলুম মুসলিম বিশ্বে এটা এখন অন্যতম দাবি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply