২৯ এপ্রিল ২০২৪ / ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৭:৫১/ সোমবার
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ৭:৫১ অপরাহ্ণ

দেবীদ্বারে গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স’র দুই কর্মকর্তা উধাও

     

এ.টি.এম সাইফুল ইসলাম মাসুম
গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ’র নামে দেবীদ্বারে শাখা খুলে জেলা ও উপজেলার দুই কর্মকর্তা কয়েকশত গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহনপূর্বক কোম্পানীতে জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাত করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন ও মানব বন্ধন করেছে অর্ধশতাধিক প্রতারিত ও ভোক্তভোগী গ্রাহক। মঙ্গলবার দুপুরে দেবীদ্বার ‘হাজী আবদুল হামিদ চিল্ড্রেন গ্রেস স্কুলে ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় মানব বন্ধন করে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ২০০৩ সালে দেবীদ্বার নিউমার্কেট সামাদ ম্যানশনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ দেবীদ্বার শাখায় কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাশার ও দেবীদ্বার উপজেলা কার্যালয়ের মোঃ জসীম উদ্দিন সহ দুই কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৮১ জন মাঠ কর্মী’র সহযোগীতায় প্রায় ৩হাজার ইসলামিক ডি. পি. এস ও একক বীমা সহ বিভিন্ন মেয়াদে করা বীমা গ্রাহকদের কোম্পানীর পাশ বই ও দলিল প্রদানপূর্বক কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এবং গত বছরের শুরুতেই অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ওই সময় অনেক বীমা গ্রাহকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত অফিসে ভীড় জমাতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে গত বছরের প্রথম দিকে অফিস ফেলে পালিয়ে গেলেও ওই অফিস অদ্যাবধি আর খোলা হয়নি। ফলে যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়নি তারাও সময়মতো বীমার কিস্তি পরিশোধ করতে এসে অফিস খুঁজে না পেয়ে জেলা কার্যালয়ে যায়, ওখানে তাদের কোন তথ্য না থাকায় ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে যায়, প্রধান কার্যালয়ে তাদের নামে পলিসির কোন টাকা জমা না থাকায় ওরা কান্নায় মুসড়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান এ, কে, এম সফিকুল আলম কামাল ও বিশিষ্ট সালিসদার হাজী মোঃ বশির উল্লাহ মোল্লার নেতৃতে এক সালিস ডাকা হয়। সালিসে অভিযুক্তরা গ্রাহকের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় এবং ওই দুই কর্মকর্তা মোঃ আবুল বাশার ও মোঃ জসীম উদ্দিন লাপাত্তা হওয়ায় গ্রাহদের মাঝে টাকা না পাওয়ার চরম আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দেয়।
গ্রাহকরা জানান, কিছু গ্রাহকের নামে প্রথম কিস্তির টাকা প্রধান কার্যালয়ে জমাদান পূর্বক তাদের মূল দলিল ও পাশ বই প্রদান করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। পরবর্তীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া নিজেদের ছাপানো রসিদ ও দলিলের মাধ্যমে গৃহীত টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করে। যার প্রমান গ্রাহদের দেয়া পাশ বই, রসিদ ও দলিল পত্রাদি।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহকরা জানান, আমরা হতদরিদ্র, আমাদের মধ্যে এমন অনেক গ্রাহক আছেন যারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে, ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের আশায় এবং জমাকৃত টাকার দ্বিগুণের আশায় ভিক্ষাবৃত্তি ও জাকাতের টাকাও জমা দিয়েছেন। আজ দ্বিগুন থাক দূরের কথা আসল টাকারও অস্তিত্ব নেই। কোম্পানীর নামে অফিস, কাগজপত্র, দলিল ও রসিদ ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেছে। এখানে তারা বিশ্বস্ততা অর্জন করে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেছে। রসিদগুলোও একটি অপরটির সাথে মিল নেই, যা নিজেরাই তৈরী করে ওই রসিদে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
গ্রাহক ইব্রাহীম খলিল নিজামী জানান, আমি আমার নামে ও আমার মায়ের নামে ২টি (ডিপিএস) বীমা করি। পরবর্তীতে জসীম উদ্দিনকে আটক করার পর সে কুমিল্লা শহরের রানীর বাজার একটি মোদী দোকানে নিয়ে যায়। ওই দোকানদারের তথ্য মতে দোকানের চৌকির নিচ থেকে ওই পোকায় খাওয়া দু’টি বস্তা বের করে এনে আমার একটি পাশ বই খুঁজে পেলেও মা’য়ের নামের পাশ বইটি পায়নি। পরে আমাকে নগদ ৪০ হাজার ৫শত টাকা দিয়ে বাকী টাকা পরবর্তীতে দেয়ার কথা বললে ছেড়ে দেই। প্রকৃত অর্থে গ্রাহকদের কোন টাকা প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়নি। ওই টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছে। ইতিমধ্যে গ্রাহকের জমাকৃত সমুদয় টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ না করায় আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাথে অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। এ ঘটনার প্রতিকার না হলে এতে সরকারও ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক বীমার প্রতি সাধারন মানুষের আস্হা হারিয়ে ফেলবে।
গ্রাহক নাজমা আক্তার জানান, ক্ষুদ্রবীমা (ডিপিএস)’র নামে ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ জেলা ও দেবীদ্বার শাখার কর্মকর্তা দেবীদ্বার পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের মৃত আঃ হামিদ খলিফা’র দুই পুত্র মোঃ আবুল বাশার ও মোঃ জসীম উদ্দিন’কে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করেছি।
গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ’র মাঠ কর্মী মোঃ মমিনুজ্জামান বলেন, গ্রাহকদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় স্থানীয় অফিস ও অফিসের কর্মকর্তাদের না পেয়ে ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে যাই। ওখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেবীদ্বার শাখা নামে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ’র নামে কোন কার্যালয় নেই। তাই দেবীদ্বার শাখার ইনচার্জ মোঃ জসীম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় কুমিল্লা কার্যালয়ে কর্মরত তার বড় ভাই আবুল বাশারকে সমস্ত টাকা বুঝিয়ে দেয়। তার বড় ভাই জেলা কার্যালয়ের আবুল বাশারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় আমি গ্রাহকদের সমস্ত টাকা বুঝিয়ে দেব। তবে গ্রাহকের টাকা কোথায় জমা দিয়েছে সে ব্যপারে কোন সদত্তোর দিতে পারে নাই।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতারিত বীমা গ্রাহক মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরকার’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গ্রাহক আঃ বাতেন, মোঃ শাহজালাল, মোঃ আলাউদ্দিন, মোঃ মমিনুজ্জামান, রুজিনা আক্তার, হাছিনা আক্তার, নাছরিন আক্তার, হাছেনা বেগম, নাজমা আক্তার , শিল্পী আক্তার, খাদিজা বেগম, কুহিনুর আক্তার, আমেনা বেগম, আবুল খায়ের, শিল্পী বেগম, সাইফুল ইসলাম, আফরুজা বেগম, হনুফা মিনুয়ারা, নিলুফা ইয়াছমিন, লাইলী আক্তার, মনোয়ারা বেগম,  সালেহা বেগম, মিনুয়ারা বেগম প্রমূখ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply