জঙ্গিবাদি সহিংসতামুক্ত শান্তিময় মানবিক বিশ্ব গড়তে কুরআন-সুন্নাহর প্রকৃত বাণী তুলে ধরার আহ্বান
ইসলামের নামে ত্রাস ও বিভীষিকা সৃষ্টিকারী জঙ্গিবাদি সহিংসতার বিপরীতে একটি উদার শান্তিময় ও মানবিক বিশ্ব গড়তে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে লালদীঘি মাঠে তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সুন্নি সম্মেলন শেষ হয়েছে। আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা (ওএসি) বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ১৭তম আন্তর্জাতিক সুন্নি সম্মেলনের শেষ দিনে দেশের দূর দূরান্ত থেকে লাখো জনতার ঢল নামে। গতকাল (২০ জানুয়ারি) শনিবার দুপুর ২টা থেকে সুন্নি সম্মেলন শুরু হয়। মাগরিবের নামাজের আগেই লালদীঘি মাঠ ছাপিয়ে পুরো এলাকা জনারণ্য হয়ে ওঠে। নারায়ে তাকবির, নারায়ে রেসালত ও গাউসিয়তের স্লোগানে স্লোগানে সম্মেলন এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। ওএসি সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনসারীর সভাপতিত্বে সুন্নি সম্মেলনের শেষ দিনে দেশি-বিদেশি উলামা মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন, ইসলাম মানেই শান্তি ও সম্প্রীতি। ইসলামের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষের জান-মাল বিপন্ন করার সুযোগ নেই। ইসলাম যেখানে আত্মহত্যাকে পর্যন্ত অনুমোদন দেয় না, সেখানে ইসলামের কথা বলে নির্দোষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। বক্তারা বলেন, যারা ইসলামের নামে বৈশ্বিক ত্রাস সৃষ্টিতে তৎপর তারা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, এরা মানবতার ঘোর দুশমন। এদেরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে প্রিয়নবীর (দ.) আদর্শ বাস্তবায়নে সুন্নি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা। সম্মেলনে বিদেশি আলোচক আল্লামা সৈয়দ নূরানী মিয়া আল আশরাফী আল জিলানী (ভারত) বলেন, সুন্নি মুসলমানরাই বিশ্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৈশ্বিক ত্রাসে লিপ্ত আইএস কোনো সুন্নি সংগঠন নয়, ওদের বড় পরিচয় ওরা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদি। যারা নিরীহ নিরপরাধ মানুষের ওপর বর্বরতা-নৃশংসতা চালায় তারা নিজেদেরকে কখনো ইসলামী দল বা গোষ্ঠী দাবি করতে পারে না। জঙ্গিবাদি সহিংসতামুক্ত শান্তিময় মানবিক বিশ্ব গড়তে ইসলামের নির্দেশনার আলোকে চলা এবং কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত বাণী বৈশ্বিকভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। বিদেশি আলোচক আল্লামা এহসান ইকবাল কাদেরী (কাঠমন্ডু, শ্রীলংকা) বলেন, মুসলিম বিশ্বের শাসকদের নতজানু ভূমিকার কারণে আজ মুসলিম বিশ্বে অশান্তি-হানাহানি জিইয়ে রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ আজ দানবীয় উন্মত্ততায় পুরো বিশ্বকে গিলে খাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বে সংঘাত-খুনোখুনির পেছনে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী কলকাঠি নাড়লেও মসনদ রক্ষার ভয়ে মুসলিম দেশের শাসকরা নির্লজ্জভাবে নীরব রয়েছে। আল্লামা এহসান কাদেরী বলেন, জনসম্পদ ও অগাধ প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলো কেন মোড়ল দেশগুলোর তাবেদারি করবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণ-নিপীড়ন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আল্লামা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ আইনুল হুদা (আমেরিকা) বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে আজ্ঞাবহ রাখতে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ও অনৈক্য সৃষ্টির জন্য ওহাবি-সালাফি-আহলে হাদিস-শিয়া-কাদিয়ানিসহ নানা ভ্রান্তবাদী গোষ্ঠীর প্রজনন ঘটাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী ইসলামী ও মুসলিম বিদ্বেষী জোট। এদের ঈমান আকিদা হননকারী তৎপরতার ব্যাপারে বিশ্বের সুন্নি উলামা-জনতাকে সোচ্চার হবার তাগিদ দেন তিনি। সভাপতির বক্তব্যে ওএসি সভাপতি আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনসারী বলেন, সমুদয় বাতিল ফের্কার অপতৎপরতা প্রতিরোধে সুন্নি উলামা-ছাত্র-জনতার ঈমানি জাগরণ আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ওএসির আন্তর্জাতিক সুন্নি সম্মেলন বৈশ্বিক সুন্নি জাগরণে অবদান রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্বাগত বক্তব্যে ওএসি সাধারণ সম্পাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মঈন উদ্দিন আশরাফী সমবেত সুন্নি জনতার প্রতি এবং সুন্নি সম্মেলন আয়োজনে নানাভাবে সহযোগিতাকারী সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। শনিবার সমাপনী দিনে বিদেশি আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভারতের কাছওয়াছা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন আল্লামা নুরানী মিয়া আল আশরাফী আল জিলানী, শ্রীলংকার প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা এহসান ইকবাল কাদেরী, আল্লামা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ আইনুল হুদা (আমেরিকা)। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ওএসির সাধারণ সম্পাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী। সুন্নি সম্মেলনে বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশিন উলামা মাশায়েখ, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, গবেষক ও সংগঠকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পীরে তরিক্বত অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ নুরুল মুনাওয়ার, ওএসির উপদেষ্টা শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী, পিএইচপি ফ্যামেলি’র চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সূফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, পীরে তরিক্বত আল্লামা সৈয়দ আবদুস শাকুর নক্সবন্দী, পীরে তরিক্বত আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান আলকাদেরী, গবেষক আল্লামা এম.এ. মান্নান, পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা এম.এ. মতিন, শায়খ আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, পীরে তরিক্বত আল্লামা কাজী ছাদেকুর রহমান হাশেমী, শিক্ষাবিদ সংগঠক এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, ড. আল্লামা মাহবুবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি হারুনুর রশিদ, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আহমদ হোসেন আলকাদেরী, আল্লামা কাযী সালেকুর রহমান আলকাদেরী, অধ্যক্ষ আল্লামা খায়রুল বশর হক্কানী, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন, আল্লামা আবুল আসাদ জুবাইর রেজভী, পীরে তরিক্বত আল্লামা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ্, আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল গফুর রেজভী, আল্লামা আহমদুল্লাহ ফোরকান খান কাদেরী, মাওলানা ইকবাল হোসেন আলকাদেরী। মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন ও উপাধ্যক্ষ আল্লামা জুলফিকার আলী চৌধুরী’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আল্লামা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, আল্লামা রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কালাম আমিরী, আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান সর্দার, অধ্যক্ষ আল্লামা ইসমাঈল নোমানী, মাওলানা আবুল হাসনাত, আল্লামা হাফেজ আনিসুজ্জমান, পীরে তরিক্বত মাওলানা মহিউদ্দিন লতিফি, পীরজাদা সামুনুর রশিদ আমিরী, শাহজাদা আবুল মকছুম বিল্লাহ সম্পদ সুলতানপুরী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ তৈয়ব খান, আল্লামা শহিদুল হক হোসাইনী, আল্লামা সৈয়দ ইউনুছ রজভী, সংগঠক মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিকী, সাংবাদিক আ ব ম খোরশিদ আলম খান, এইচ.এম. মনজুরুল আনোয়ার চৌধুরী, শাহজাদা মাওলানা আবদুল কাদের চাঁদমিয়া, মাওলানা ইমরান হাসান কাদেরী, মাওলানা সোহাইল উদ্দিন আনসারী, মাওলানা হারুনুর রশিদ চৌধুরী, ছাত্রনেতা এইচ.এম. শহিদুল্লাহ, শায়ের মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী প্রমুখ। সালাত-সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি কল্যাণ কামনায় মুনাজাত করা হয়।