২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৮:০৬/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৮:০৬ অপরাহ্ণ

এসএসসি পরীক্ষা ও কতিপয় প্রস্তাব

     

মাহমুদুল হক আনসারী
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের স্বাগতম। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আরম্ভ হবে। সারাদেশে একযোগে এ পরীক্ষা আগামী ১ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানা যায়। কোমলমতি শিশুদের এ সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক সকলেই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন। প্রশ্নফাঁস একটি নিয়মিত সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কোচিং সেন্টার কর্তৃপক্ষ অভিভাবক সকলেই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।ইতিমধ্যে পরীক্ষার ৩ দিন পূর্বে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এসেছে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে ৩০মি. পূর্বে প্রবেশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোবাইল ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস বেশী উদ্বিগ্ন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক। নিয়মিত ছাত্রছাত্রী পরীক্ষার্থী পড়ালেখা করে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। নিয়মিত ক্লাস ও অধ্যায়ন পর্ব নির্দিষ্ট বছর শেষ করে পরীক্ষার মাধ্যমে তারা ভালো ফলাফল আশা করে থাকে। পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস হওয়ার মতো মারাত্মক শিক্ষা মরণব্যাধিতে ভোগছে সারাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ১ম শ্রেণী থেকে বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত এ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারী বেসরকারী নিয়োগ পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁসের ব্যাধি ধরা পড়ছে। প্রশ্নফাঁস চক্রের অনৈতিক মেধাবিধ্বংসী এ চক্র শিক্ষা প্রশাসনের উপর থেকে নিচে পর্যন্ত সম্প্রসারিত বলে মনে হচ্ছে। শিক্ষাবোর্ড শিক্ষামন্ত্রী সমাজের শিক্ষিত সচেতন অভিভাবক মহল এ বিষয়ে এখন অনেকটা সোচ্চার। উদ্বিগ্ন আর উৎকণ্ঠার মধ্যে সুশিল সমাজ প্রতিরোধও সমাজ সচেতনতার কথা বলছে। প্রশ্নফাঁস চক্রকে প্রতিরোধ ও কঠোর শাস্তির কথা বলা হচ্ছে। এ চক্রের হাত এতোযে সম্প্রসারিত, খোদ প্রশাসনও তাদের খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রশ্ন যারা তৈরী করেন এবং প্রস্তুত করেন, যাদের মাধ্যমে প্রশ্ন বিলি বন্টন হয়, তারা যদি এ জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে কীভাবে এ অনৈতিক কাজ বন্ধ করা যাবে সেটায় প্রশ্নের উপর বড় প্রশ্ন। সরকারের এতোগুলো গোয়েন্দা বিভাগ আছে, তাদের চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে সমস্ত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয় সেটা সচেতন অভিভাবক মহল বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থী কোনোভাবেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেনা। প্রশাসনের কতিপয় বক্তব্য আর পরীক্ষার কয়েকদিন আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিলেই কী প্রশ্নফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে? প্রকৃত প্রশ্নফাঁস ষড়যন্ত্র যেখান থেকে শুরু সেখানেই এ চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে। আসল জায়গায় চিকিৎসা না করে ডাল পালা নিয়ে প্রতিরোধ করলে এর সুফল কতটুকু হবে সেটাও অভিভাবক মহলের প্রশ্ন। জাতিবিধ্বংসী ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা প্রতিবন্ধক এ ব্যাধি থেকে যে করেই হউক শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে হবে। তাদের আগামী শিক্ষা জীবনকে মেধা বিকাশে পরিস্কার করতে হবে। নজরদাবী করতে হবে প্রশ্নের তৈরী সংরক্ষণ বিলি বন্টনে। এ কাজে যারা নিয়োজিত তাদের কড়া নজরদারী রাখা চাই। যাদের মাধ্যমে বিলি বন্টন তাদেরকে রাষ্ট্র ও অভিভাবকদের গভীর উৎকণ্টা সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। এ অপরাধের শাস্তি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সব ধরনের প্রশ্নফাঁস চক্রান্ত ও যোগাযোগ মাধ্যম কঠোর নজরদারীর মধ্যে রাখতে হবে। এ প্রশ্ন প্রস্তুত ও বিলি বন্টনের সাথে সম্পৃক্তদের নির্দিষ্টভাবে দায়িত্বের প্রতি সতর্ক করতে হবে। সবকিছু ঠিকভাবে সু-শৃংখল ও পরিচ্ছন্নভাবে রেখে যেনো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। তাদের যেনো পরীক্ষাভীতি ও প্রশ্নফাঁসের কোনো কোনো সময় গুজব থেকে রক্ষা করা হয়। সব ধরনের সার্বিক নিরাপদ প্রস্তুতি যেনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের থাকে। সেটায় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক মহলের দাবী। ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক যেনো কোনো অবস্থায় প্রশ্নফাঁস চক্রের শিকার না হন। এ ধরনের যে কোনো সংবাদ পাওয়া মাত্র প্রশাসনের সহযোগীতা নিতে হবে। কোনো অবস্থায় এ অনৈতিক কর্মকান্ডে কোনো গোষ্ঠীকে সহযোগীতা করা যাবেনা। সামাজিকভাবে শিক্ষক ছাত্র অভিভাবক সচেতন মহলকে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অতিরিক্ত কড়াকড়ি ও জটিল কঠিন প্রশ্ন তৈরী করে ছাত্র-ছাত্রীদের যেনো উৎকণ্টায় পড়তে না হয় সেটাও সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখতে হবে। প্রশ্ন পরীক্ষাকেন্দ্র এবং কেন্দ্র পরিদর্শকদের নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করা চাই। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও সম্পন্ন করা অভিভাবক মহলের দাবী। সব ধরনের গুজব ও অপপ্রচারের বিরোদ্ধে কঠোর হতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে পরিদর্শকদের কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ পরীক্ষার্থীদৈর জন্য করুণ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব মহলকে ছাত্র-ছাত্রীদের সমানভাবে কাউন্সিলিং করার দাবী অভিভাবকদের। কেন্দ্রে কখনো কখনো কতিপয় শিক্ষক অনৈতিকভাবে কিছু কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীকে অনৈতিক সুবিধাদেয়ার কথা ও শুনা যায়, এসব চরিত্র যেনো না দেখতে পাওয়া যায় সেটার ও নজরদাবী রাখতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে কোচিং সেন্টারের পক্ষ হতে তাদের সেন্টার ও কোচিং বাণিজ্যের লিপলেট হেন্ডবিল প্রচার করতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে গাড়ী পার্কিং অভিভাবকদের ঝট তৈরী করা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সব ধরনের কোচিং সেন্টারের পোষ্টার লিপলেট প্রচারপত্র বিলি পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশ থেকে বন্ধ করা চাই। শহর গ্রামে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পরে পরিবহণ সংকটে পড়ে। পরীক্ষার সময় পরিবহণের মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয় করে পরীক্ষার্থীদের যেনো পরিবহণ সংকট না হয় সেটাও প্রশাসনকে দেখতে হবে। রাস্তার অহেতুক যানজট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকা চাই। যথাযত সময়ে পরীক্ষা শেষ ও ফলাফল মূল্যায়ন ফল ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে। ফলাফল নির্ণয় যেনো কোন ধরনের কারচুপী ও অনৈতিক মূল্যায়ন না হয়, সঠিক পদ্ধতি ও খাতার যথাযত মূল্যায়নের মাধ্যমে যেনো ফলাফল ঘোষণা হয়। সেটায় পরিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের দাবী। সব ধরনের সমস্ত নিরাপত্তা সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার দাবী রাখে দেশবাসী। সমস্ত ধরনের প্রশ্নফাঁস ষড়যন্ত্র থেকে ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক মহল যেনো চীরদিনের জন্য মুক্তি পায় রাষ্ট্রের কাছে সে আশায় রাখে সচেতন মহল। আসুন সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও অনৈতিক শিক্ষা বিধ্বংসী কর্মকান্ডকে একযোগে প্রতিরোধ করি। সকল পরীক্ষার্থীদের প্রতি অজস্র ভালোবাসা আর সফলতা থাকলো।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply