বিএনপির রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার আর মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেট এখন একাকার। এদের দুই এর অশুভ আঁতাত দেশের মানুষকে নিঃস্ব করে ফেলছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলের নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে একদলীয় রাজ্যাভিষেকের পর নতুন করে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার, জ্বালানী, ব্যাংক, অর্থনীতি, আইন-আদালত, শাসন-প্রশাসন, বিচার-আচার, টাকা-পয়সা, ব্যবসা বানিজ্য-সর্বত্রই চলছে বেপরোয়া অরাজকতা ও নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের লুটেরা সিন্ডিকেট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় এখন বাজারের উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিদিন মানুষের পকেট থেকে এরা শতশত কোটি টাকা বাড়তি হাতিয়ে নিচ্ছে। মানুষের এখন জান বাঁচানো দায়। ডামি সরকার লোক দেখানো হাঁকডাক দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বাজারের নিয়ন্ত্রকরাই এখন সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও চরমভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারী গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদের তাদেরও কিছু কারসাজি আছে।” উনার এ ধরণের কথা বলার অর্থ তার স্বেচ্ছাতন্ত্র পচে গলে বিকৃত হয়ে গেছে। এ সমস্ত বক্তব্য বিকারগ্রস্ত মনেরই বহিঃপ্রকাশ। এ কারণে হাস্যকর মিথ্যাচার করছেন। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে সীমাহীন। নিজেদের ব্যর্থতা, লুটপাট-চুরি-চামারি করে সেই অপকর্মের দায় নির্লজ্জের মতো বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার অভ্যাস তাদের পুরানো। বিএনপি যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে, তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। এরপরেও বিএনপি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেছে? সরকার প্রধান হয়ে যখন অসাধু ব্যবসায়ীদের কনট্রোল করতে পারছেন না, তখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থতার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর অপপ্রচার চালাচ্ছেন আপনি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, ‘ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। একটু ফ্যান চাইত’। শেখ হাসিনা অসংখ্য মিথ্যা কথা বলেন কিন্তু তার এই কথাটা সত্য। গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার বিনাভোটের সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, টাকাপাচার, আর আওয়ামী বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দেশে আবারো ১৯৭৪ এর অবস্থা বিরাজমান। দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পেটের ক্ষুধার জ্বালায় শুরু হয়েছে সন্তান বিক্রি করার হিড়িক। ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পূর্বে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে ‘ডামি প্রধানমন্ত্রী’ জানিয়েছিলেন। গতকালও এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি, বরং ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করছে তারা এর জন্য দায়ী, এখানে তাদেরও কিছু কারসাজী আছে।” ৭ জানুয়ারী ডামি নির্বাচনের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় নতুন পৈশাচিকতায় আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সেটিরই আলামত। এহেন বক্তব্য কান্ডজ্ঞানহীন, সুপরিকল্পিত ও মনোরোগের বর্ধিত প্রকাশ।