কুড়িগ্রামে দুই দফা বন্যায় কৃষিতে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষতি
নুরবক্ত আলী,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে দুই দফা বন্যায় কৃষকের এখন মাথায় হাত। গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পানিতে ডুবে থাকা রোপা আমন, বীজতলা, সবজি ক্ষেতসহ অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় কোরবানির ঈদ নিয়ে দুশ্চিতায় তারা
একদিকে, সরকারের পুনর্বাসন না পেলে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে আনা যেমন সম্ভব নয় তেমনি অধিকাংশ জমি পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এবারের বন্যায় জেলার ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৫ জন কৃষকের ৫০ হাজার এক হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে বন্যায়। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৭৭ হেক্টর ফসলি জমি। এতে ৪৭০ কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদের দুই চোখে শুধুই অন্ধকার। সরকারিভাবে পুনর্বাসন ও ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার উদ্যোগ না নিলে হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়ে গেলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় কৃষকরা। ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক নেপাল চন্দ্র রায়সহ অনেকেই জানান, দ্বিতীয় দফার বন্যা পানিতে এক সপ্তাহের বেশি ধরে জমির আমন ধান তলিয়ে আছে। আবার অনেক জমির ধান একেবারেই পচে গেছে। এবারের বন্যায় কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে পানি কমার পর হয়তো সামান্য কিছু জমির ধান হতে পারে। সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন, আলমগীর, তৈয়ব আলী, পচা মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টি পানি আর পাহাড়ি ঢলে ধরলা নদীর পানি যেভাবে প্রবেশ করেছে তাতে ফসল টিকানো নিয়ে সংশয় রয়েছে। এনজিও আর ধারদেনা করে কোনো রকমে জমি আবাদ করেছি। বন্যা এসে সেটাও শেষ করে দিল। পানি নামলেও এসব আমনের কি হবে আল্লাহ জানে। রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তোফাজ্জল হোসেন ও সামাদ আলী বলেন, বন্যা শুরুর আগে বৃষ্টিপাত থাকায় সেচের মধ্যে তেমন খরচ হয়নি। কিন্তু তেল, সার, কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় জমি চাষে বাড়তি খরচ হয়েছে। আবাদের পেছনে খরচ করায় হাতে তেমন টাকা-পয়সা নেই। তার ওপর বীজ সঙ্কট থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছে। কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে নেবেন উত্তর জানা নেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। সামনে ঈদ আসায় পরিবারগুলোর কি হবে তা নিয়ে কিছুতেই হতাশা কাটছে না তাদের। কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রোপা আমন, বীজতলা এবং শাক সবজিসহ সদর উপজেলায় ৫২ হাজার ৭২৫ জন কৃষকের ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৯৭ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা, উলিপুরে ৪০ হাজার ৩৭০ জন কৃষকের ৭ হাজার ৩০ হেক্টরে ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, চিলমারীতে ২৪ হাজার ৮৮০ জন কৃষকের ৪ হাজার ৩২০ হেক্টরে ২১ কোটি ২৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, রৌমারীতে ২০ হাজার ৩২০ জন কৃষকের ২ হাজার ৭৮৫ হেক্টরে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, রাজিবপুরে ৬ হাজার ৯০ জন কৃষকের ৫৫৫ হেক্টরে ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৮ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ভূরুঙ্গামারীতে ৩৪ হাজার ১৯৫ জন কৃষকের ৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, নাগেশ্বরীতে ৮৮ হাজার ৮১৫ জন কৃষকের ১০ হাজার ১৪০ হেক্টরে ১২৩ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, ফুলবাড়িতে ৫০ হাজার ৬৪৫ কৃষকের ৫ হাজার ৩৪০ হেক্টরে ৫২ কোটি ৪৯ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং রাজারহাটে ২৪ হাজার ৯০০ কৃষকের ৩ হাজার ৩৭৬ হেক্টরে ২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি চলতি রোপা আমন ৯৯ হাজার ৮৭৭ হেক্টরের মধ্যে বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি, ১ হাজার ৯৩ হেক্টর বীজতলার মধ্যে ৭০৫ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয় এবং শাক সবজি ২ হাজার ৩১৫ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৪১৬ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মকবুল হোসেন বলেন, বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলে এই ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের বন্যার পরবর্তী রবিশস্য আবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।