২১ মে ২০২৪ / ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:২৪/ মঙ্গলবার
মে ২১, ২০২৪ ৫:২৪ অপরাহ্ণ

স্বরণ: আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু

     

আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ আরব আমিরাত থেকে

উত্তাল সাগরের বিপরীত স্রোতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঘোর অমানিশার অন্ধকার সময়ে আমার প্রয়াত নেতার নির্দেশে ১৯৮১ সালের একটি অনুস্টানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মি হিসাবে যোগদান করেছিলাম। হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব ক্ষমতার মসনদে অধিস্ঠিত হয়ে হোটেল শেরাটনে যাওয়ার জন্য শ্রদ্ধাভাজন এডভোকেট শাহাদৎ হোসেন সাহেবের মাধ্যমে দাওয়াত পেলাম।সেই দাওয়াত নামা প্রত্যাখান করে ব্যাংকিং জগতে চাকুরীর সুবাদে চট্রগ্রাম,পটিয়া,আনোয়ারা,(বটতলী) এবং ঢাকায় যখন যেখানে ছিলাম দলের নীতি,নৈতিকতা,আদর্শ সমুন্নত রেখে আমার প্র‍য়াত নেতার অর্পিত দায়িক্ত পালনে কোথাও কার্পণ্য করিনি। কিন্তু চাকুরির কারনে মিটিং,মিছিলে নিয়মিত হাজির হতে পারিনি বলে আপনাদের অনেকের সামনে হয়তো অদৃর্শ্য। সবাই বলে বাবু ভাই আর আমি বলি, “বাবু ভাই একটি নাম ছিলেন না,”উনি ছিলেন, একজন রাজনীতিবীদ বানানোর দক্ষ কারিগর এবং একটি প্রতিস্ঠান”। বাবু ভাই একজন বীর মুক্তিযুদ্ধা,মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,গরীব দুঃখী মানু্যের পরম বন্ধু।তাঁর আলোয় আলোকিত হয়েছিলেন,”আনোয়ারা তথা চট্রগ্রামের অন্ধকার অলি,গলি এবং রাজপথ”।

বাবু ভাই বনেদী পরিবারের সন্তান হয়ে দেশে শিল্পপতিদের ব্যবসায়ী সংগঠনের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করার পরও একজন শিল্পপতি হিসাবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন না, দেশের মানু্যকে ভালবাসতেন বলে একজন রাজনীতিবীদ হিসেবে পরিচয় দিতে বেশী  পছন্দ করতেন।

   ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আমি চলে আসলাম আরব আমিরাতের দুবাই শহরে।আসার কিছুদিন পর যোগদান করলাম দুবাই বঙ্গবন্ধু পরি্যদ এর একজন সদস্য হিসেবে।আজ আরব আমিরাত তথা দুবাইয়ের কয়েকটি সংগঠনের শিরোভাগে নিজের নাম লিপিবদ্ধ থাকলেও আমি নিজেকে “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন ক্ষুদে কর্মি হিসাবে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

মনে পড়ে ২০০৭ সালের শুরুতে বাবু ভাই দুবাই আসলে অস্কার রেস্টুরেন্টের হল রুমে মাঝারি পরিসরে সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।আর সন্ধায় ১ ঘন্টার বেশী সময় ধরে আলাপচারিতা হয়।কথার ফাঁকে বললেন নুর মোহাম্মদ শুন,” আগামী নির্বাচনে আমাকে দল থেকে মনোনয়ন দিবে আর যদি আমি  এমপি  হতে পারলে আমাকে মন্রী বানাবে বলে নেত্রী কথা দিয়েছে”।যথা সময়ে অনুস্ঠান শেয হল একদিন পর তিনি চলে গেলেন।

১/১১ এর মাস দুয়েক পুর্বে বিকাল ৪.২৫টার  সময় হাতের ছোট্র মোবাইলটি বেজে উঠল অপর প্রান্ত থেকে 00-44……… কল রিসিভ করতেই বললেন,”তুই হডে? বললাম,আইত দুবাই। তিনি বললেন,আগামী সপ্তাহ আই আবুধাবী আইস, শুন…।আনোয়ারার পোয়াছা লইয়ারে আবুধাবী চলি আইছ, পশ্চিম পটিয়ার ছালের লয় যোগাযোগ গরিছ’।নির্ধারিত সময়ে আবুধাবী সালাম স্ট্রীট,”রেইন বো হোটেলে” বিশাল সম্বর্ধনা দেওয়া হল,তিনি দেশে চলে গেলেন।৩ সপ্তাহের ব্যবধানে ১/১১ এর ঘূর্নিঝড় শুরু হল। পরে অনেক… ইতিহাস। বাবু ভাইয়ের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পুরণ করার জন্য  তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর  প্রথম পুত্র ” আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ” সাহেবকে নেত্রী মনোনয়ন দিয়ে এবং তাঁর সততা,দক্ষতা এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা দেখে কম সময়ের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী  তাকে প্রতি মন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করেন।মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো শুকরিয়া আজ তিনি বাংলাদেশের মহান সাংসদের একজন পুর্ন মন্ত্রী (ভুমি মন্ত্রনালয়ের) দায়িক্ত পালন করে যাচ্ছেন।

‘৮০ দশকের শুরু থেকে যত নেতার সংস্পর্শে গিয়েছি সবারেই মাঝে বাবু ভাই ছিলেন অন্যতম।কারণ আগেকার দিনে নেতা ছিল খুব কম,কর্মি ছিল বেশী, এখনকার সময়ে নেতার সংখ্যা কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে কর্মি বিলুপ্তির পথে আর আদর্শিক নেতার নীতি,নৈতিকতা ও আদর্শ শুন্যের ধার প্রান্তে । ২০১২ সালের ৪ঠা নভেম্বর সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেদ হসপিটালে ইন্তেকাল করেন বাবু ভাই এবং ৭ নভেম্বর ৩টি জানাজা শে্যে পারিবারিক কবরস্হানে দাফন করা হয়।তাঁর এই ৮ম মৃত্যুবার্যিকীতে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply