২৯ এপ্রিল ২০২৪ / ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ২:১৬/ সোমবার
এপ্রিল ২৯, ২০২৪ ২:১৬ অপরাহ্ণ

প্রণোদনা দাবী, মওকুফ চাই ব্যাংক ঋণের সুদ

     

 

করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শহরের ব্যাবসা বানিজ্য। অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন উল্লেখ করে চিটাগাং মেট্টোপলিটন শপ অনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি চিটাগাং চেম্বার পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলম চৌধুরীর যৌথভাবে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। চিটাগাং মেট্টোপলিটন শপ অনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা ব্যাবসায়ীরা চোখে-মুখে অন্ধকার
দেখতেছি। ব্যবসার ভর মৌসুমে আমাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। পুরো বছর এই সময়টায় অপেক্ষায় থাকি। আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বলে শেষ করা যাবে না। ব্যবসা করতে পারছি না, মুনাফা হচ্ছে না, সেটা এক জিনিস। এখন আমাদের কোটি কোটি টাকার পুজি এবং দোকানে কাপড় গার্মেন্স কসমেটিক সহ ভিন্ন ভিন্ন দোকানের বিভিন্ন আইটেমের কী অবস্থা তা-ও আমাদের ব্যাবসায়ীদের অজানা। ঈদকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পণ্যে ভরে উঠেছিল চট্টগ্রাম মহানগরের দোকানগুলো। কোটি কোটি টাকার পণ্য তোলা হয় একেকটি দোকানে। বিপুল পরিমাণ
পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হয়। আমদানিকৃত পণ্যগুলোর কিছু দোকানে বা গুদামে পৌঁছেছে। কিছু রয়েছে পাইপ লাইনে।সবকিছু মিলে ব্যবসা যখন জমে ওঠার অপেক্ষায়, তখনই দেশে শুরু হয় করোনার সংক্রমণ। মরণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হয়। সরকারি নির্দেশনায় মার্কেটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। চারপাশে গেটে তালা দেয়ায় সরকারিভাবে যেসব দোকান খোলা রাখার কথা, এখানে সেসব দোকানও বন্ধ করে দিতে হয়।এখানে থাকা খাবারের দোকানগুলোতে তালা ঝুলছে।
নেতৃবৃন্দরা বলেন, দোকান বন্ধ রয়েছে প্রায় এক মাসের মত।এর মধ্যে ব্যবসার পুরো মৌসুম শেষ হতে চলেছে। কবে নাগাদদোকান/মার্কেট খোলা যাবে তা অনিশ্চিত। হাজার দোকানে কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মোবাইল, ঘড়ি,ইলেকট্রিক পণ্য, শিশুদের খাবার, গার্মেন্টস আইটেম, পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্টের দোকান, টেইলার্স, ক্রোকারিজ আইটেম, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যসহ হরেক রকমের পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি
হয়। প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব পণ্যই এখানকার মার্কেটগুলোতে পাওয়া যায়। দেশি পণ্যের পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানি করা হরেক রকমের পণ্যও আছে। এগুলো কবে বিক্রি করতে পারব, আদৌ বিক্রি করতে পারব কিনা, বিক্রি করার অবস্থায় থাকবে কিনা এটা অনিশ্চিত। শুধু নিশ্চিত হচ্ছে, আমাকে দোকানের ভাড়া গুনতে হবে। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। সুদ গুনতে হবে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হবে, ঈদের বোনাস দিতে হবে। তাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কোনো কর্মচারীকে বেতন না দেয়া বা বিদায় করা সম্ভব নয়। দুর্দিনে সবাইকে নিয়ে পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু আমাদের যে অবস্থা তাতে কাউকে সাহায্য করাটা কঠিন হয়ে উঠছে। আমাদের
ব্যাবসায়ীদের একেবারে অচেনা সমস্যা। এর আগে কোনোদিন এই ধরনের পরিস্থিতি হয়নি। এখন ব্যবসা দূরে থাক, পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
অহিদ সিরাজ স্বপন বলেন, তামাকুমন্ডি লেইন,রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরি বাজার সহ চট্টগ্রাম শহরে ৫০০ [পাচ}শতের অধিক ছোট বড় পাইকারি খুচরা মার্কেটে প্রায় ৫০ [পঞ্চাশ] হাজারের অধিক ব্যবসায়ীর চোখে ঘুম নেই। প্রায় ২ লাখের অধিক বেশি কর্মচারীর বেতন-ভাতা যোগাতে গিয়ে নতুন সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাবসায়ীদের দোকানগুলোতে অন্তত ২০ [বিশ] হাজার কোটি টাকার মাল মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক টাকাও বিক্রি হয়নি। কোনো ব্যবসায়ীর হাতে টাকা নেই। কী করে কী করবেন তা কেউ বলতে পারছেন না। চিটাগাং মেট্টোপলিটন শপ অনার্স সিয়েশনের অফিসে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চোখের পানি এবং কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কারো মাঝে স্বস্তি নেই।
করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ মুহূর্তে সবার আগে প্রয়োজন ব্যবসায়ীদের চলতি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।একই সঙ্গে ঋণের বিপরীতে সুদ আরোপ স্থগিত করে মূলঋণসহ আরোপিত সুদ একটি ব-ক অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে এক বছরের জন্য নিয়ে যাওয়া। তাহলে এর ওপর আর সুদ আরোপিত হবে না। ফলে
ঋণের অঙ্ক বাড়বে না। এর ফলে একদিকে ব্যাবসায়ীদের চলতি ঋণ যেমন খেলাপি হবে না, তেমনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজের আওতায় নতুন ঋণ সুবিধা পেতে সমস্যাও হবে না। কিন্তু এ ঘোষণা না এলে বেশির ভাগ ব্যাবসায়ী ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান চালুকরাই সম্ভব হবে না।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ ও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ নিঃসন্দেহে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সাহসী উদ্যোগ। এজন্য সরকারপ্রধানকে আমরাঅবশ্যই ধন্যবাদ জানাই এবং তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখানে কয়েকটি বৈশ্বিক প্রভাবের সরল অঙ্ক আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। প্রথমত, করোনা প্রভাবের কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে।একেবারে অপরিহার্য জিনিস ছাড়া মানুষ এখন তার ফ্যাশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদার লাগাম টেনে ধরবে। বাজেট কাটছাঁট করবে। এর ফলে বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগের মতো সহসা পণ্য উৎপাদনে অর্ডার বা কার্যাদেশ পাবে না। এছাড়া সেভাবে
চাহিদা না পেলে অনেকে ফ্যাক্টরি চালু করার ঝুঁকি নেবে না। কেউ কেউ চালু করলেও সীমিত আকারে করবেন। এই নেতিবাচক প্রভাব
শুধু রফতানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই পড়বে। প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মাথার ওপর এখন এই ‘করোনা খক্ষ’ ঝুলছে।বিষয়টি কঠিন মন্তব্য করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ভয়াবহ এই দুর্যোগ সামাল দেয়া ব্যবসায়ীদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার ঘোষিত প্রণোদনাই এই সংকট কাটাতে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করতে পারে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ চলতি মূলধনের যোগান দিতে ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য
সরকারের প্রতি আহ্ধসঢ়;বান জানান তিনি। একই সাথে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ মওকুফের আহ্ধসঢ়;বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুঁজি তুলে আনার ব্যাপারটি অনিশ্চিত। এই অবস্থায় যদি ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হয় তাহলে অনেক ব্যবসায়ীকে দেউলিয়া হতে হবে। বর্তমান সময়কে ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোর দুর্দিন বলে উল্লেখ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান তিনি।

 

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply