২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ১২:৩৮/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কোটি টাকার সম্পত্তি থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকীতে; নৈপথ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি

     

 লক্ষীপুরের রামগতির থানার অন্তর্গত ৬নং চর আলগী ইউনিয়নের সুফির বাজারে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তথা ‘সুফির বাজার ফোরকানিয়া ও হাফেজিয়া মাদরাসা’ কিছু লোভী ও স্বার্থান্বেষী লোকের কারণে দীর্ঘ একযুগ পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। অনেক কষ্টে পূণরায় চালু করার পরও সেই অর্থ-সম্পদ লোপাটকারীদের কারণে আবারও তা বন্ধ হবার উপক্রম। জানা যায়, ১৯৬৮ইং সালে ‘শেখ সাহেব হুজুর’ নামে একজন বিখ্যাত বুজুর্গ ব্যক্তি সুফির বাজারের এই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসাটির কারণে এলাকায় শিক্ষা-দীক্ষার বেশ প্রভাব পড়ে। মানুষ জ্ঞানের দিকে ধাবিত হয়। এলাকার লোকজন বিশেষভাবে ঝুঁকে পড়ে মাদরাসার দিকে। মাদরাসার আয়-উন্নতির জন্য এগিয়ে আসে সবাই। সকলের স্বতস্ফূর্ত অনুদানে মাদরাসার ফান্ড বেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। জানা যায়, সেই সময় জনসাধারণ স্বতস্ফূর্তভাবে মাদরাসার আয়-উন্নতির জন্য যে জমিগুলো অনুদান দেন, তা প্রায় ৩/৪ একর। এছাড়া মাদরাসার নিজস্ব কেনা জমির পরিমাণও ছিলো প্রচুর। শিক্ষা-দীক্ষায় বেশ সুনাম করে এগুতে থাকে মাদরাসাটি। এখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে অনেক বড় বড় আলেম ও শিক্ষাবিদরা বর্তমানে লক্ষীপুর, নোয়াখালিসহ দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। একসময় মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ‘শেখ সাহেব হুজুর’ মদিনা শরিফে হিজরত করে চলে যান। বলা হয়ে থাকে, তৎকালিন মাদরাসা-কমিটির স্বার্থান্বেষী মনোভাবের কারণেই তিনি মাদরাসাটি ছেড়ে মদিনা শরিফ চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে মাদরাসার পড়ালেখার মানসহ আর্থিক বিষয়েও বেশ টানাপোড়ার সৃষ্টি হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ঠিকভাবে বেতন-ভাতা না দেয়ার কারণে কোন শিক্ষকই মাদরাসাটিতে বেশিদিন টিকে থাকতো না। কোন রকম নড়বড়ে খুঁটির মতোই ছিলো মাদরাসাটি সর্বশেষ ২০০৬ সালে মাদরাসাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশেষ সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত কমিটিতে যারা ছিলো তারা মোটামোটি মাদরাসার উন্নয়নের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। কিন্তু অপর আরেকটি মহল সয়-সম্পত্তির লোভে দীর্ঘদিন থেকে মাদরাসার কমিটিতে আসার জন্য চেষ্টা করে আসছিলো। কোনভাবেই সফল হতে না পেরে বিদ্যমান কমিটির সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তৎকালিন চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মাদরাসার কমিটিতে আসার চেষ্টা করে। চেয়ারম্যানও স্বীয় স্বার্থে ভোটার বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে কমিটিতে দাখিল করে এবং তাদের হাতে মাদরাসার কাগজপত্র তুলে দেয়। ২০০৬ সালের এই গোপন কমিটি মাদরাসার উন্নয়নের কাজ না করে দেদারসে মাদরাসার জমি-জমা নিজেদের নাম করে বিক্রি করতে উঠে-পড়ে লেগে যায়। তারা কমিটিতে আসার পরেই মাদরাসার শিক্ষা-কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। তাদের অবহেলার কারণে দিনদিন তা অবনতির দিকেই এগুতে থাকে। তারা এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। বরং কেউ আন্তরিকভাবে মাদরাসা ও মাদরাসার শিক্ষা-কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য এগিয়ে এলে, তাকেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। যথাসাধ্য কাউকেই মাদরাসার প্রশাসনিক বিষয়ে ভাবতে দিতো না। কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা কমিটিতে এসে মাদরাসার অনেক অনেক জমি বিক্রি করে খেয়ে ফেলে; সেটা ধামাচাপা দিতেই তাদের এই হীন কর্মকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে। চর আলগী ইউনিয়নের অন্তর্গত সুফির বাজারের শতাধিক দোকান মাদরাসাটির জায়গায় অবস্থিত, মাদরাসার আবাদী জমির পরিমাণও প্রায় ৪ (চার) একর। কিন্তু বাজারের দোকান-ভাড়া ও আবাদী জমির আয়-ব্যয়ের কোন হিসাবই নেই। সম্পূর্ণ ধোঁয়াশায় নিমজ্জিত কয়েক একর সম্পত্তির কোটি কোটি টাকার হিসাব। অনুমাণ করা হয় মাদরাসার সম্পদ ও জমি-জমার আনুমানিক মূল্য বর্তমান হিসেব অনুযায়ী প্রায় পাঁচ (পাঁচ) কোটি টাকা। তদুপরি ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাদরাসাটি পুরোপুরি বন্ধ থাকে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে তৎকালিন জমিদাতার একজন উত্তরসূরী হাফেজ আব্দুল্লাহ আল গাজী তা পূণর্গঠনে উদ্যোগী হন। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নতুন একটি অবকাঠামো দাঁড় করানোর প্রয়াস পান। তার বিশেষ প্রচেষ্টায় আবারও প্রায় দু’শ শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছে। কিন্তু তার এই চেষ্টা-প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে সেই কুচক্রী মহলটি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে মাদরাসার বিশাল সয়-সম্পত্তির লোভে পড়েই তারা এমনটা করছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীসূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাদরাসায় একটি সাধারণ সভা ডাকা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ সিরাজ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইসহাক নগরীসহ বাজার-সভাপতি/সেক্রেটারি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-রাজনীতিবিদ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় চেয়ারম্যানসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বারবার তাকাদার পরও মাদরাসার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সেক্রেটারি ও তার সহযোগী আরও কয়েকজন সদস্য উপস্থিত হননি, বরং আড়ালে থেকেছেন। সাধারণসভার পরে মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি দরখাস্ত করা হয়। এতে এতোদিন যাবত মাদরাসা ভোগ-দখলকারীদের হাত থেকে উদ্ধারের আবেদন করা হয়। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন সাহেবকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত সেক্রেটারি ও তার সহযোগীরা ইউপি চেয়ারম্যানকে পাত্তাই দেইনি, তার কোন ডাকে সাড়া না দিয়ে বেপরোয়া ভাব প্রদর্শন করেছে। উল্টো উক্ত সেক্রেটারি দাবী জানিয়েছে যে, মাদরাসার ফান্ড তার কাছে ৭০, ০০০ (সত্তুর হাজার) টাকা ঋণী। অথচ তার ব্যাপারে মাদরাসার ৪০ শতাংশেরও বেশি জমি অবৈধভাবে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বাজারের বেশ কয়েকটি ভিটায় সে অবৈধ দখলে নিয়েছে বলে অনেকে প্রমাণ দিতে চেয়েছে।
মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদ ও এলাকাবাসী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে যারাই উদ্যোগী হয়ে কাজ করছেন, তাদের সাথে অশোভনীয় ও উদ্ভট আচরণ করে যাচ্ছে চিহ্নিত এই মহলটি। এলাকার সচেতন মহল প্রতিষ্ঠানটিকে একটি আদর্শ শিক্ষাঙ্গণ হিসেবে ফিরে পাবার জন্য প্রশাসন, মিডিয়া ও রাষ্ট্রের প্রতি বিশেষ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, প্রশাসন মিডিয়া এবং রাষ্ট্র যদি এ বিষয়টির সঠিক সমাধানে উদ্যোগী হয় তাহলে সুফির বাজারসহ পুরো চর আলগী ইউনিয়নে শিক্ষার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কারণ চর আলগী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সুফির বাজারেই কেবল একটি মাদরাসা গড়ে উঠেছে, যা এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা এ ছাড়া আশপাশে আর কোন প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নেই। তাই বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনায় গুরুত্ত্বারোপ চায় সুফির বাজারসহ পুরো চল আলগী ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply