২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / বিকাল ৫:৫৪/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৫:৫৪ অপরাহ্ণ

ধুলোবালির যন্ত্রণায় নগরবাসী

     

 

মাহমুদুল হক আনসারী

ধুলোবালির যন্ত্রনার শিকার নগরবাসী। নগরীর সবগুলো রাস্তা ধুলোবালিতে ভরপুর। শহরের বড় ছোট সবগুলো রাস্তায় নগরবাসী বের হলেই মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে রাস্তার ধুলো-বালির কারণে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এমনিতে সব শ্রেণীর মানুষের এখন জ্বর, সর্দি, কাশি ও নানা প্রকারের চামড়ার চুলকানির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। নগরীর সরকারি বেসরকারি সবগুলো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সর্দি, কাশি, ভাইরাস জ্বরের রোগির সংখ্যা বেশী। প্রতিটি পরিবারেই এসব রোগের রোগি বেশী। দৈনন্দিন কর্মকাজ, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল কলেজে যাতায়াত সবকিছু গণপরিবহনেই করতে হয়। সামর্থ্যবান স্বল্প সংখ্যক জনগণই নিজস্ব পরিবহনে যাতায়াত করে থাকে। ৯৫% মানুষের যাতায়াত গণপরিবহন। রাস্তায় বেরুলেই ধুলোবালির যন্ত্রণা অসহনীয়। একদিকে রাস্তার উন্নয়নের খোড়াখুড়ি, অন্যদিকে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে রাস্তার ধারে স্তুপ করে রাখা। সময়মতো তা সরিয়ে না ফেলা, চতুর্দিক থেকে আসা ধুলোবালু রাস্তায় এসে জমাট বাঁধা ইত্যাদি কারণে নগরবাসীর চলাচলে মারত্মক যন্ত্রণা। ধুলোবালুজনিত কারণে সব বয়সের নর-নারীর মধ্যে সর্দি-কাশি ও এলার্জিজনিত রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রায় রোগিদের ধুলোবালি থেকে নিরাপদে চলাচলের পরামর্শ দিচ্ছেন। কথা হচ্ছে কয়জন মানুষ ধুলাবালু তথা রাস্তায় বের না হয়ে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য মানুষকে বাসা বাড়ি থেকে বের হতেই হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল কলেজে না গিয়ে কোনো উপায় নেই। নগর উন্নয়নে অনেকগুলো প্রশাসন কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর নগরবাসীর ভালো-মন্দে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কাজ করে থাকে। কিন্তু ধুলো-বালির মারত্মক স্বাস্থ্য ক্ষতিকারক যন্ত্রণার বাস্তব নিস্তার কী সেটা নিয়ে ইতিপূর্বেও বহু লেখালেখি হয়েছিলো। অনেকগুলো পত্রিকায় সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিলো। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই যন্ত্রণা থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করতে পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছিলো। বাস্তবে শুষ্ক মৌসুমে ধুলা-বালির যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচী নগরবাসীর নজরে পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নগর ও নগরবাসীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিরাপদ জীবন-যাপনে উপদেশ পরামর্শ প্রদান করলেও বাস্তবে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে হয় না। প্রায় ৭০ লক্ষ নগরবাসীর নিত্যদিনের যন্ত্রণার সঙ্গী ধুলোবালি। মানুষের কাপড়-চোপড়, স্বাস্থ্য কিছুই পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন রাস্তার ময়লায় বাসা-বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। সমস্ত পরিবার ঘরে ঘরে এসব কারণে রোগের জন্ম হচ্ছে। হাজার কোটি টাকার বাজেটে নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বাস্তবে জনকল্যাণে কী পরিমাণ এসব অর্থ কাজে আসছে তাও ভাবতে হবে। শত শত স্বাস্থ্য কর্মী পরিচ্ছন্ন কর্মী রাস্তায় কাজ করতে দেখা যায়। আরো দেখা যায়, ড্রেনের ময়লা শুকিয়ে ড্রেনে ফেলতে। রাস্তার ময়লা রাস্তা থেকে ড্রেনে ফেলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তাদের দায়িত্ব শেষ করে থাকে। আসলে তাদের কী কাজ কী কর্তব্য কী দায়িত্ব এসব নার্সিং করার কেউ আছে বলে মনে হয় না। থাকলেও তিনি কর্মস্থলে থাকে না। নগর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় হাজারো অনিয়ম লক্ষ্যণীয়। ধুলোবালির সাথে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্ব কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে হবে। নগরবাসীর সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কথা আর বক্তব্য দিয়ে জনগণকে চুপ রাখা যায় না। বাস্তবে শহরের জীবন-যাপনে সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে। রাস্তা জনগনের চলাচলের জন্য অন্যতম মাধ্যম। এটাকে জন ও যান চলাচলে উপযোগী করে রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব কোনো অবস্থায় অবজ্ঞা করা যায় না। জনগণের টেক্সে রাষ্ট্র চলে। টেক্সের টাকা দিয়ে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। সুষ্ঠু এবং নিরাপদ জীবন পরিচালনার জন্যেই স্থানীয় প্রশাসন। জনগণের সুখ-দু:খ সমাধান দেয়ার জন্যেই নির্বাচিত প্রতিনিধি। সুতারাং প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ধুলা-বালির যন্ত্রণায় নগরবাসী নাকাল হয়ে পড়ে। এ যন্ত্রণা থেকে নগরীর প্রায় সত্তর লক্ষ মানুষ নিস্তার চায়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply