২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ৯:৪৩/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৯:৪৩ অপরাহ্ণ

লামা-আলীকদম সড়ক সংস্কারে জনস্বার্থ উপেক্ষিত

     

মো.কামরুজ্জামান
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে লামা-আলীকদম সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লামা বাজার থেকে বিএডিসি মসজিদ পর্যন্ত সাতশ্ মিটার, লাইনঝিরি থেকে ছাগল খাইয়া, শীলেরতুয়া দরদরাঝিরির পয়েন্ট থেকে দু’ উপজেলার বর্ডার শিবাতলী, আলীকদম চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে জয়নাল চেয়ারম্যানের মুড়ির ফ্যাক্টরী পর্যন্ত ও ইয়াংছা ভেলী ব্রিজ এর পূর্বপার থেকে আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়কে এই পাঁচটি পয়েন্ট প্রতি বর্ষায় কয়েক ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। বিগত বর্ষায় কয়েক দফা এর ভয়াবহতা অনুধাবন করে নিরাপদ উচ্চতায় সড়ক সংস্কারের জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জেলা মাসিক সভায় প্রস্তাবাকারে সড়ক ও জনপদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। জানাগেছে, বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগ চলতি অর্থ বছরে এর জন্য দশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। দু’ উপজেলার জনগণনের বুকভরা আশা ছিল; এই অর্থ বছরে সড়কটি সংস্কারের সময় প্রথমে নীচু পয়েন্টগুলো উঁচু করা হবে। লামা পৌরশহরসহ লামা-আলীকদম দু’ উপজেলাবাসীর দু:খ লাগবের, এমন প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক মঞ্চ থেকেও এসেছিল। কিন্তু জনগণের সেই ‘আশার গুড়েবালি’ জনস্বার্থে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি রহস্যজনক কারণে বাস্তবায়ন হয়নি; দুর্ভোগ-দুর্গতি লেগে থাকলো।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বান্দরবান রোড্স এন্ড হাই’র নির্বাহী প্রকৌশলীর অবহেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। এনিয়ে বান্দরবান জেলা মাসিক সমন্বয় সভায় কথা উঠলে, সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী যুক্তিসঙ্গত কারণ উপস্থাপন করতে পারেননি বলে সভা সূত্রে জানাগেছে। এছাড়া লামা-আলীকদম-ফাঁসিয়াখালী ৪৪ কি:মিটার সড়ক সংস্কারের নামেও ফাঁকিবাজি করেছে বান্দরবান সওজ। একতৃতীয়াংশ সড়ক যেনতেনভাবে সংস্কার করে দায়সারা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। জেলা মাসিক সমন্বয় সভা সূত্রে জানাযায়, সড়কের ৪৪ কি:মিটার সংস্কার কাজ শুরুর প্রথম থেকে সড়কের নীচু উল্লেখিত পাঁচটি পয়েন্ট বর্ষার আগে উচুঁ করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ সেটা না করে সড়কের অন্য পয়েন্টে কিছু অংশ সংস্কার করে। লামা পৌরসভাসহ এই দু’উপজেলার নেতৃবৃন্দ জানান, নির্বাচনী বছর হিসেবে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষকে ভোগান্তির কবল থেকে রক্ষা না করে বান্দরবান সওজ কর্তৃপক্ষ রাজাকারি চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। তারা বলেন, সরকার যে মুহুর্তে জানস্বার্থ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করে চলছেন; ঠিক সেই মূহুর্তে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের উল্টো চিন্তা, জনস্বার্থ ও সরকারের মূল চেতণা বিরোধী বলেও স্থানীয়রা মনে করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জুন-জুলাই মাস এলে কয়েক ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে লামা-আলীকদম-ফাঁসিয়াখালী সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একই সময় ব্যবসায়ীদের মূল্যবান মালামাল ও অফিসিয়াল নথিপত্র নিরাপদ স্থানে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা থাকেনা। নীচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে সিট মহলের দৃশ্য ধারণ করে। এই কারণে স্থানীয়ভাবে সড়কের উল্লেখিত পাঁচটি পয়েন্ট উচুঁ করার দাবী উঠে। দুর্ভোগের কবল থেকে কিছুটা হলেও রক্ষার জন্য সরকার দলের নেতৃস্থানীয়রা সওজ-এর মাধ্যমে উদ্যোগ নেন। লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, ‘বান্দরবান সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলীর অবহেলায় চলতি অর্থবছরে সড়কের নীচু পয়েন্টগুলো উঁচু করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জেলা মাসিক সভায় বলা হয়েছে’। লামা পৌর মেয়র মো: জহিরুল ইসলাম জানান, সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা চলতি অর্থ বছরে সংস্কার করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা কথা দিয়ে রাখেনি, স্বার্থন্ধতার পরিচয় দিয়েছে। এর ফলে জনদুর্ভোগ কমেনি। মেয়র বলেন, বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী গুরুত্বসহকারে দেখছেন এবং খুব দ্রুত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ নিবেন।
বিগত কয়েক বছরের জলমগ্নতার সরেজমিন বাস্তবতানুযায়ী, লামা উপজেলা পরিষদের সম্মুখ থেকে বিএডিসি মসজিদ পর্যন্ত সাতশো মিটার সড়ক গড়ে তিনফুট উঁচু করা হলে প্রতি বছর কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে শুধু শহরবাসীরা। এছাড়া লাইনঝিরি থেকে ছাগল খাইয়া আনুমানিক তিন শ্ মিটার তিন ফুট উঁচু, শীলেরতুয়া দরদরাঝিরির পয়েন্ট থেকে দু’ উপজেলার বর্ডার শিবাতলী পর্যন্ত তিন শ্ মিটার, আলীকদম চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে জয়নাল চেয়ারম্যানের মুড়ির ফ্যাক্টরী পর্যন্ত- এক শ্ মিটার ও ইয়াংছা ভেলী ব্রিজ এর পূর্বপার থেকে আর্মি ক্যাম্প পর্যন্ত এক শ্ মিটার সড়কের এই পাঁচটি পয়েন্ট গড়ে একই উচ্চতায় সংস্কার করা হলে নিরাপদ উচ্চতা নিশ্চিত হয়ে জলমগ্নতার কবল থেকে রক্ষা পাবে।
এছাড়া শহর অভ্যান্তরে নিচু সব ক’টি গলি গড়ে ২-৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। চারদিকের সড়ক সমুহ ডুবে যাওয়ায়, পন্যসামগ্রী নিরাপদ স্থানে পরিবহন করতে না পারায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয় ব্যবসায়ীরা। একই সাথে কয়েকশো পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম বিপর্যস্থ হন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গলিগুলোকে ২-৩ উচুঁ করা প্রয়োজন। অপরদিকে লামা হাইস্কুল সড়ক, কাটা পাহাড় থেকে লামামুখ সড়ক, একই সড়কের পয়েন্ট থেকে সাবেকবিলছড়ি সড়কের কিছু অংশ ও কলিংগাবিল-রাজবাড়ি সড়কের কিছু অংশও উঁচু করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক জলবায়ু প্রকল্প থেকে সরকার এসব ব্যায় বরাদ্দ দেয়ার দাবী জানান স্থানীয়রা।
বর্ষায় যোগযোগ সুরক্ষায়; সড়ক ও জনপদ, এলজিইডি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভার সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর হাশু হস্তক্ষেপ কামণা করেছেন লামা-আলীকদমবাসী।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply