১ মে ২০২৪ / ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৭:১১/ বুধবার
মে ১, ২০২৪ ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন করবেন অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার ?

     

মো. আবদুর রহিম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা আপনি কেন আপোষ করবেন ? আপনি কেন পরাশক্তির নিকট নত হবেন? আপনি কেন খুনি যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়, প্রশ্রয়দাতাদের নিকট আপোষ করবেন ?

আপনি ১৯৭৫ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কন্যা ও পরমানু বিজ্ঞানী স্বামীর হাত ধরে বাংলাদেশ থেকে জার্মানি সফরে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালির গর্ভে জন্ম নেয়া কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা, ফাস্ট লেডি শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, রোজী ও সুলতানা সহ আপনার পরিবার, দুই ফুফুর পরিবারের ১৮ জন সদস্য একরাতে নৃশংস খুন হওয়ার পর আপনার জীবনে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। সেই সময় দেশ-বিদেশের সকল আপনজন, রাজনৈতিক দলের বহু নেতা আপনার নিকট থেকে দূরে বহু দূরে চলে যায়। শিশু দুই সন্তান জয়-পুতুল ও বোন রেহানাকে নিয়ে ভারতে আশ্রিত ছিলেন। ৬ বছর যাবত দুঃসহ বেদনা সহ্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১ মে ১৯৮১ খ্রি. নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। ঝড়-বৃষ্টি জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে পিতা-মাতা ভাই-ভাবী সহ নিকট আত্মীয় স্বজন হারানোর বেদনা পাথর চাপা দিয়ে বঙ্গবন্ধু’র বাংলার দুঃখী মানুষদের মুখে হাসি ফুটাবার ব্রত নিয়ে আল্লাহর নামে পথচলা শুরু করেন। ১৯৮১ থেকে ২০২৩ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আপনি জেল, জুলুম, নির্যাতন বুক পেতে নিয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সহ ২১বার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে প্রাণে বেঁচে আছেন। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

১৯৮১ সালের পর নতুন সামরিক শাসক এরশাদরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ পর্যন্ত ৯টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আপনার সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচনে জালিয়াতি, কারচুপি, ভোটচুরি, ভোট ডাকাতি, ভূয়া ভোটার তালিকা, নির্বাচনি ফলাফল পাল্টে দেয়া, নির্বাচিতকে প্রভাবিত করা, এ সবই আপনার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা।

আপনার বল, সাহস, শক্তি, প্রেরণা সবই আপনার আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ তৃণমূলের নেতা-কর্মী। কর্মীরা জীবন বির্সজন দিয়ে আপনার চলার পথ পরিস্কার করেছে। আপনার কর্মীরা জীবন দিয়ে আপনার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। কর্মীরা জীবন দিয়ে সামরিক ও স্বৈরশাসকদের কবর রচনা করেছে। ১৯৮৬, ১৯৯১, ২০০১ এ তিন মেয়াদে আপনি ছিলেন বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় নেতা। ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এ চার মেয়াদে আপনি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনি ২০ বছরের সফল প্রধানমন্ত্রী এবং ১২ বছরের মহান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। বাংলাদেশের বয়স ৫২ বছর। এ সময়ের মধ্যে ৩২ বছর আপনি বাংলাদেশের পতাকা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা বহন করে চলেছেন। ৪২ বছর ধরে আপনি বঙ্গবন্ধু’র আওয়ামী লীগকে সভাপতির চেয়ারে বসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

৭৬ বছর জীবনে আপনি আপনার পিতার সময়েও মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কন্যা হিসেবে সম্মানের আসনে ছিলেন। আপনি আপনার পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন, কষ্টের জীবন, মন্ত্রীত্ব থাকার জীবন, প্রধানমন্ত্রী জীবন ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির জীবনাচার দেখেছেন স্বচক্ষে। আপনি আপনার মাতা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব এর কষ্ট, দুর্দশার জীবন্ত ও বাস্তব সাক্ষী। আপনি আপনার চাকুরীজীবী স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবন সঙ্গিনী। আপনি বৈজ্ঞানিক স্বামী, প্রত্যক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সন্তান জয় ও মনোবিজ্ঞানি পুতুলের মা। আপনার হাতের মুঠোতে সব অভিজ্ঞতা। আপনি ১৯৮১ থেকে ৪২ বছর চারণের মত বাংলার ৬৪ জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও গ্রাম নিজ চোখে দেখেছেন। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ, দুর্বিপাক সবই আপনার জীবনের গতিপথে স্বাক্ষী।

আপনি মানুষের আর্তনাদের স্বাক্ষী। ক্ষুধার যন্ত্রণা আপনি দেখেছেন, নগ্ন দেহের মানুষ দেখেছেন, গৃহহারা মানুষ, ভূমিহীন মানুষ, রোগ-বালাই, দুর্ঘটনার কষ্ট আপনার অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে। আপনি ধনী-দরিদ্র সবারই আপনজন। আপনি বিচারহীনতার দৃশ্য দেখেছেন। বিচারপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়ার অভিজ্ঞতা আপনার। জঙ্গীদের সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস, বোমা, গ্রেনেড হামলার ঘটনা, বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা সবই আপনার নিকট দৃশ্যমান। আপনি জীবনের মায়াত্যাগ করে সত্য প্রতিষ্ঠা, বিচার প্রাপ্তির সুব্যবস্থা করেছেন। আপনি মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, জেল হত্যার বিচার, গ্রেনেড হামলার বিচার সহ সকল অন্যায়, জুলুম ও নির্যাতনের জন্য বিচার চাওয়া, বিচার পাওয়া, রায় কার্যকর হওয়ার সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জাতির পিতার এ বাংলা থেকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক উৎখাত করে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বে মডেল রাষ্ট্র হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বদনাম আর বাসন্তীর জাল পড়ানোর কুৎসিত কাহিনীর সমুচিত জবাব দিয়েছেন। বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নে রোল মডেল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের উন্নয়নে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বিশ^বাসীর চোখে বাংলাদেশকে এক ‘বিস্ময়’ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের দ্বার খুলে দিয়েছেন আপনি। বিশ^বাসী বাংলাদেশকে এখন সবাই সমীহ করে, বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশ ২০৪১ ও ২১০০ সালের ভীষণ পরিকল্পনা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে হাটঁছে। এ কারণে বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের শিকার। গুজব, মিথ্যাচার, নিষেধাজ্ঞা ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে ঘিরে ধরেছে। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র এখন খুবই গভীরে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্রে ঢালপালা বিস্তার করেছে। ঘরে বাহিরের শত্রুরা তৎপর। ১৭৫৭ সালের ন্যায়, ১৯৭৫ সালের ন্যায়, ১৯৯১ ও ২০০১ এবং ২০০৭-২০০৮ এর ন্যায় দেশ-বিদেশ গভীর ষড়যন্ত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভোর। আপনি শেখ হাসিনা সবার টার্গেট। আপনি মানবতার মা, দেশরত্ন আপনি বাংলার মানুষের মুক্তির ঠিকানা। সুতরাং আপনাকে ঘিরে সব ষড়যন্ত্র।

আমি মনে করি আপনার হারাবার আর কিছু নেই। বাংলার মানুষের অপ্রাপ্তির সবকিছু পূরণ করে দিয়েছেন। খুনি, ধর্ষনকারীর ফাঁসিতে জীবন গেছে। প্রতিশোধ, প্রতিহিংস্যা এখন আর আপনার বিবেককে সায় দেয়না। আপনার নিকট আইনের শাসন, সামাজিক সমতা, মানবাধিকারই মুখ্য বিষয়। আপনি বিষ খেয়ে হজম করতে পারেন। শত্রুকে ক্ষমা করতে পারেন, অপমান যে করেছে তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি উদার, আপনি মানবতাবাদী, আপনি গণতন্ত্রী। আপনার নিকট সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এক ও অভিন্ন। আপনি মানবকূলের দুনিয়ার দেবতাতুল্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন। সুতরাং প্রাপ্তি না প্রাপ্তির বেদনা আপনার নাই। সুতরাং জীবনের পড়ন্ত বেলায় আপনি আপোষহীন, আপনি দুরদর্শী, আপনি নির্ভীক; আপনি সাহসী, ও বিচক্ষণ। আপনি কেন করবেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত? ‘চির উন্নত থাকবে আপনার শির’ এগিয়ে চলুন বঙ্গবন্ধু কন্যা, মানবতার মা, দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply