১ মে ২০২৪ / ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ১০:১৬/ বুধবার
মে ১, ২০২৪ ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

ঈদ যাত্রা নিরাপদ হউক

     

মাহমুদুল হক আনসারী
মুসলীম সমাজে ঈদ উদযাপন বিরাট একটি সংস্কৃতির অংশ। পবিত্র রমজান মাসের এক মাস সিয়াম সাধনার শেষে ঈদ নামক খুশিই হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। যারা রমজানের রোজা পালন করবেন, তাদের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত খুশীই হলো পবিত্র ঈদ। ঈদ অর্থ খুশি আনন্দ। মুসলমানদের ঘরে ঘরে পাড়া মহল্লায় , সমাজে সম্মিলিত ভাবে পবিত্র ঈদ পালিত হয়। ঈদকে সামনে রেখে সাধ্যমতো নতুন জামা কাপড় ক্রয় করা হয়। নিজের জন্য পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীর জন্য সাধ্যমতো নতুন কাপড় চোপড় ক্রয় করার মধ্যে ঈদ আনন্দ উপভোগ করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে সরকারী বেসরকারী মুসলীম জনগণ ঘরবাড়ী যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নিকটাত্মীয়দের জন্য বাজার করা ইতিমধ্যে চলমান আছে। মার্কেট দোকান সব খানেই উপছেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সরগরম মার্কেট বাজার, সব পক্ষের মধ্যে বাড়তি মূল্য চাইতে দেখা যাচ্ছে। দোকানদাররা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মূল্য চাইতে দেখা যাচ্ছে। দোকানদাররা ক্রেতাদের নাগালের বাইরে মূল্য হাতাচ্ছে। কাপড় চোপড়ের দোকানে কোনো ন্যায্যমূল্যর দেখা মিলছেনা। যা ইচ্ছে দাম হাতিয়ে নিচ্ছে। দোকানির নিকট ক্রেতারা অসহায়। নতুন কাপড় চোপড়ের বাস্তব মূল্য কী সেটি ক্রেতা সাধারণ বুঝতে পারছেনা। দ্রব্যেমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সব জিনিসপত্রের সাথে কাপড় চোপড়ের মূল্য অনেকভাবে বেড়ে গেছে। তবুও যাদের সামর্থ্য আছে নতুন জামা কাপড় চাই। পরিবার সন্তানদের জন্য নতুন কাপড় কিনতেই হবে। এটা ঈদ আনন্দ ঈদের একটি খুশি। নতুন কাপড় পরে আত্মীয়স্বজনদের সাথে খুশীর ভাগাভাগী করতে হবে। আবহমান কাল থেকে মুসলিম দুনিয়ায় ঈদের খুশী চলে আসছে। ধনী, গরীব , এতিম , মিসকিন , ফকির সকলেই সম্মিলিতভাবে সামর্থ্যের মধ্যে ঈদুল ফিতর নামক খুশীর দিন উদযাপন করে। ঘরে ঘরে আনন্দ সেমাই সিন্নি, পোলাও বিরানীর মু-মু গন্ধের বাহারী ধরনের খানার আয়োজন প্রস্তুত হয়। একে অপরের সাথে কৌশল, মুলাকাত সালাম বিনিময় করে।
একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করে। পুরো বছর কেউ কারো সাথে দেখা না হলেও কমপক্ষে ঈদের দিন হলেও একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। সালাম বিনিময় করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ বাস্তবে ধর্মপরায়ন। যার যার ধর্ম সে পালন করে। ধর্মীয় ভাবগা¤ভীর্যের মধ্যে সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আদায় করে। এদেশে ধর্মপালন ও রক্ষণা বেক্ষণে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রনোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য সরকারের পক্ষে হতে সাধ্যমতো বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দুর্বল শ্রেণীর মানুষগুলোকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ঈদ, পূঁজা খুশীর দিনের জন্য সাহায্য করা হয়। বলা যায় অত্যন্ত আন্তরিক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সব ধর্মের আনন্দ উৎসব নিরাপত্তার মধ্যে পালিত হয়। কেউই কারো ধর্মীয় উৎসবের দিনে হাঙ্গামা বিশৃংখলায় জড়ায়না। আইন শৃংখলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ধর্মীয় উৎসবে সাহায্য করে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে আন্তধর্মীয় সৌহার্দ্য দেখতে পাওয়া যায়। দেশের ধর্মীয় মানুষগুলো একে অন্যের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যথেষ্ঠ মিল মুহাব্বত, ভালোবাসা এদেশের পাড়া মহল্লায় বিরাজমান আছে। আমাদের ধর্মীয় কালচার, আচার অনুষ্ঠানের সব ধর্মের মানুষ আনন্দচিত্তে পালন করছে। এতে দেশের মানুষ খুবই খুশী। ধর্মীয় দিবসে বাঙালী জাতি একত্রে মিলিত হয়ে যায়। আনন্দ ভাগাভাগি করে। ধর্মপালনে দেশের মানুষকে ঐক্য, শৃংখলা থেকে দুরে নিয়ে যায়নি। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় মিলন সংলাপ ভালোবাসা চলমান রয়েছে। এটা বাংলাদেশে থাকবে। ধর্মীয় উগ্রবাদী মনোভাব এ জাতি মনে প্রাণে পোষণ করেনা। নামাজ, পুজা প্রার্থনা সবকিছু থাকবে। যার যার ধর্ম তিনি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে পালন করবে। সেখানে কোনো ধরনের কারো আপত্তি থাকার কারণ নেই। ধর্মপালন হবে। আমাদের মধ্যে শান্তি শৃংখলা অক্ষুণœ থাকবে। পরস্পর পরস্পর আন্তরিক ও মানবিকতা বজায় থাকবে। ধর্মের মূলবাণী,আর ঈদের খুশী হলো ঐক্য ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। সৃষ্টির মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং জাতীয়ভাবে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা। ধর্ম যেনো আমাদেরকে ঐক্য বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে যতœবান হতে হবে। সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ধর্মের নামে যেনো বিশৃংখলা ও ধর্ম, নীতি নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ না করি। ধর্মের শান্তি ঐক্য শৃংখলা রক্ষা করি। ঈদে ঘরমূখী হাজার হাজার মানুষ গণ পরিবহণ বহন করবে। বাস,লঞ্চ, ট্রেন, বিমানের মাধ্যমে দূর পাল্লার যাত্রীগণ তাদের নিজ নিজ ঘরমূখী যাত্রা করবেন। প্রতিবছর ঈদ আসলে সে সময় ঘরমূখী মানুষের যাত্রার ভোগান্তি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে।
অনেকভাবে যাত্রীগণ ভোগান্তির শিকার হন, ঠিকমতো টিকেট পান না। পেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়। পথে পথ দুরপাল্লার গাড়ী থামিয়ে যাত্রী উঠা নামা করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। যাত্রীদের সাথে দূর্ব্যবহার সেটা সব সময়ের একটি অভিযোগ ন্যায্য ভাড়া দিয়েও যাত্রীর অধিকার ভালো ব্যাবহার পাওয়া যায়না। গণপরিবহণ যাত্রীদের বিরোদ্ধে এটা নিয়মিত একটি অভিযোগ। রাস্তায় হাইওয়ে এবং টহল পুলিশের অন্যায়ভাবে যাত্রীদের তল্লাশীর নামে হয়রানী চোঁখে পড়ার মতো দেখা যায়। পরিবহণ শ্রমিক থেকে অবৈধ চাঁদা দাবী ও আদায় নিত্য নৈমত্তিক আপত্তিকর দৃশ্য দেখতে হয়। ফলে যাত্রীদের নিকট থেকে গণপরিবহনের পক্ষ হতে ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। দূরপাল্লার যাত্রায় সক্রিয় পুলিশ টহল টিম এ ধরনের অনৈতিক চাঁদা আদায় করার দৃশ্য খুবই নেক্কারজনক ঘটনা।
আইন শৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা থাকা চায়। রাস্তা ঘাটে যেকোন ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় তাদের সহযোগীতা যাত্রীগণের ন্যায্য অধিকার ও প্রাপ্য। কিন্ত ভিন্ন চিত্র তার বিপরীতে দৃষ্টিগোচর হয়। এসব চিত্র ও অনৈতিক পরিস্থিতি বন্ধ করা হউক। অহেতুক পরিবহণে হয়রানী বন্ধ করতে হবে। ঈদ সহ সারা বছর গণ পরিবহন ও রাস্তাঘাটের গণপরিবহনে তল্লাশীর নামে হয়রানী বন্ধ করা হউক। সব ধরনের চাঁদাবাজী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ চাই। অন্যায়ভাবে তল্লাশীর নামে ষ্টেশনে ষ্টেশনে হয়রানী বন্ধ করতে হবে। দিনের বেলায় অবৈধ পন্যবাহী গাড়ীর নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে দেখতে চাই। পরিবহণ মালিকদের অন্যায়ভাবে ভাড়া বৃদ্ধির কৌশল থামিয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিটি জেলার জন্য গান পরিবহনের ব্যাবস্থা রাখতে হবে। নেশা সেবন করে গাড়ি ড্রাইভিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ড্রাইভার হেলপারদের পরিচয় থাকতে হবে। দূরপাল্লার ক্ষতবিক্ষত রাস্তার জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করতে হবে। ঈদ যাত্রার নিরাপদ ব্যবস্থাপনাকে সুশৃংখলভাবে এখন থেকে কার্য্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রেইনের যাত্রায় অগ্রীম টিকেট প্রাপ্তী সহজ করতে হবে। বগি ও সিটের পরিচর্যা করতে হবে। ছিড়া পাটা সিট পরিচ্ছন্ন ও মেরামত করতে হবে। বগির বাইরে ও ভিতরে সিট নং বগি পরিচিতি স্পষ্টভাবে দেখা যায়না। বয়স্ক নারী শিশুদের জন্য পরিস্কার অক্ষরে বগি ও সিট পরিচিতি সংস্কার করা দরকার। টিকেটবিহীন যাত্রী পরিবহণ ট্রেইনের মধ্যে এখনো দেখা যায়। একশ্রেণীর ট্রেইন কর্মচারী তাদেরকে সাহায্য করে নগদ অর্থের বিনিময়ে। ষ্টপিজ ছাড়া অনেকগুলো অনুমোদনবিহীন ষ্টেশনে ট্রেইন থামিয়ে অর্ধেক যাত্রী উঠানামাতে দেখা যায়। তাদের জন্য চা বিক্রেতা শ্রমিকরা সিট তৈরী করে বসার ব্যবস্থা করে দেয়। ট্রেইনে অধিক হারে সিটবিহীন যাত্রী পরিবহনের কারণে বাস্তব সিটধারী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। ফেরীওয়ালা, ফকির ও ছিনতাইকারী কর্তৃক অনেক সময় যাত্রীগণ সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। টয়লেটে পানি থাকেনা। টিকেট বিহীন যাত্রীগণ টয়লেট ঘেষে বসে পড়ে।
হকার ব্যবসায়ী ও ফকিরদের ট্রেইন যাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। টিটি এবং ট্রেইনের সুপারভাইজাররা যাত্রীদের সাথে অসৌজন্য আচরণ করতে দেখা যায়। প্রকৃত টিকেট বিহীন যাত্রীদের ভাড়া অর্থের বিনিময়ে নিরাপদে পার করে দেয়।
ঈদ আনন্দ ভাবগাম্ভীরভাবে উদযাপন করতে ঘরমুখী মানুষের সব ধরনের ভোগান্তির একটা সুপরিকল্পিতভাবে নিস্তার চাই। রোড দূর্ঘটনা থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে ড্রাইভার শ্রমিকদের ন্যূনতম প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। মাদক ও নেশাগ্রস্থভাবে ড্রাইভিং ও পরিবহণ চালানো যাবেনা। ঘরমুখী মানুষের নিরাপদ যাত্রার জন্য এখন থেকে রাস্তাঘাটের উপযুক্ত সক্ষমতা তৈরী করতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনীর অযৌক্তিক বাড়াবাড়ি বন্ধ করতে হবে। পরিবহনখাত থেকে চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হবে। ঘরমুখী মানুষের যাত্রা এবং কর্মক্ষেত্রে ফেরত আসার নিরাপদ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কর্মসূচী এখন থেকে গ্রহণ চায় সাধারণ জনগণ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply