২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / দুপুর ১২:০০/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ১২:০০ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি

     

 

মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন

ভূ-গর্ভস্থ পানি হচ্ছে ”অদৃশ্য  সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব। পানির  প্রাথমিক ও সহজলভ্য মূল্যবান উৎস হচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানি। সীতাকুণ্ডে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা। মূলত নাগরিক চাহিদা পূরণ ও সেচ প্রকল্পে গভীর-অগভীর নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারনে নিচে নামছে  পানির স্তর। জাতীয়  পানি  নীতি ১৯৯৯ সহ সরকারের অন্যান্য নীতিমালা উপেক্ষা করে অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়নের প্রভাব আর ভূ-উপরিভাগের নদ-নদী, খাল-বিল ও পুকুর ভরাট সহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। পৌরএলাকায় হস্তচালিত নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। আর গভীর নলকূপগুলোতে উঠছেনা পর্যাপ্ত পানি। এমতাবস্থায় এবার উপজেলায় আগে ভাগেই খরা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সীতাকুণ্ড কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ডাঃ সজল কুমার শীল জানান, আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। ফলে পূর্ব সৈয়দপুরের অনেক এলাকায় চাষাবাদে ভূ-উপরিভাগের স্বাভাবিক পানি মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের উপর নির্ভরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর ইতোমধ্যে ৪ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এমনিতেই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে নলকূপে চাহিদা মতো পানি উঠে না। এবার ওই পানির স্তর কোন কোন এলাকায় এখনই ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে চলছে বোরো মৌসুম। বোরো আবাদ পুরোটাই সেচনির্ভর। নদী-নালা ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাওয়ার পাম্পে নদী-নালার পানিতে সেচ এখন নেই বললেই চলে। ফলে নদী-নালা ও খাল-বিলের পাড়েও বসেছে গভীর নলকূপ। খাবার পানিও উঠছে গভীর নলকূপে। সেচযন্ত্র দিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে মাটির নিচের পানির স্তরে চাপ পড়ছে। ফলে সুপেয় পানির উৎস যেমন কমছে, তেমনি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে কৃষিখাত। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অশনিসংকেত দেখছেন গবেষকরা। এমন এক শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গত ২২ মার্চ বুধবার পালিত হয় বিশ্ব পানি দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। দিবসটি পালনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। খাবার পানি সহ রান্না, গোসল ও চাষাবাদে পানির চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয় ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশে গভীর নলকূপ বসানো শুরু হয়। তখন মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে নলকূপ/টিউবওয়েল বসিয়েই পানি পাওয়া যেতো। আর এখন ১৬০ ফুট নিচেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। অথচ একযুগ আগেও ৬০-৭০ ফুট নিচে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যেতো। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক নিয়মে ভূ-গর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয়, তা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক ভাবে পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলণ ও অনাবৃষ্টির কারণে তা আর হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ পানির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণ করতে হরে।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply