২৬ এপ্রিল ২০২৪ / ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সন্ধ্যা ৬:৪৯/ শুক্রবার
এপ্রিল ২৬, ২০২৪ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

লামায় নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ নিঁধন চলছে, পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

     

লামা সংবাদদাতা  
বিষ প্রয়োগে মাতামুহুরী নদীর মাছ নিঁধন থামচেনা (!)। মৌসুমের এই সময়টা আসলে একটি চক্র পানিতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ নিঁধনে মেতে উঠে। এর ফলে নদীর ছোট ছোট মলা-ডেলা, চিংড়িসহ নানান প্রজাতির মাছের বংশ নির্মুল হচ্ছে। তামাক ও বৃক্ষ উজাড়ের ফলে পানির উৎসা হারিয়ে মাতামুহুরী নদী প্রায় শুকিয়ে গেছে।
নদীতে বিষ প্রয়োগসহ এসব আত্মঘাতী কাজে জড়িত অনেকেই চিহ্নিত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ ধরণের অনেককে ধর পাকড় করা হয়েছিল। অনুসন্ধানে জানা যায়, নদীতে বিষ প্রয়োগ সরাসরি হচ্ছে আবার তামাক চাষীদের অসচেতনতা বশতও পানি বিষাক্ত হচ্ছে।
নদীর পাড়ে ৬০ ফুট জায়গা খালি রেখে তামাক চাষ করার সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না। এর ফলে মাতামুহুরী নদী ও এর শাখা খাল-ঝিরিগুলোতে দু’তীরের উর্বর পলিমাটি সমৃদ্ধ বিস্তৃত ভূমিতে তামাক চাষ করাচ্ছে কোম্পানীরা। নদী বা পানি দূষনসহ জলজ সম্পদ ধংসের বিষয়ে চাষীরা অসচেতন। কিন্তু তামাক কোম্পানীর লোকজন এসব ব্যাপারে সচেতন হয়েও নদী-খাল, ছড়া-ঝিরির তীরে কৃষকদেরকে উদ্ভুদ্ধ করছেন তামাক চাষে।
যার ফলে নদী-খাল ভরাটতো হচ্ছেই! একই সাথে তামাক ক্ষেতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ হচ্ছে। এসব বিষ ও রাসায়নিক সার মিশ্রিত পানি নদী বা ছড়াতে মিশে যায়। ফলে পানি দূষিত হয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিঁধনসহ মারাত্বক বিরুপ প্রভাব পড়ছে জলজ প্রাণির উপর।
অপরদিকে বছরের এই মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে একশ্রেণির মানুষ সরাসরি বিষ প্রয়োগ করে ছোট ছোট মলা-ডেলা মাছ নিঁধন করে চলছে। সম্প্রতি লামা উপজেলার চাম্পাতলী ও হাসপাতাল পাড়া গ্রামের কয়েকজন নদীতে বিষ প্রয়োগের বিষয়টি প্রশাসন জানতে পেরেছেন বলে জানা যায়। এই আত্মঘাতী কাজে শুধু নদীর মাছ নিঁধন হচ্ছেনা পানিও দূষিত হয়ে মানুষ ও মাছে নানান রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এমন আশংকা স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা মৎস্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, নদীর পানিতে বিষ দিয়ে মাছ নিঁধনের সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করণের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ নিঁধনের বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তিনি জানান,সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কেন নদীর দু’তীরে তামাক হচ্ছে! এ নিয়ে তামাক কোম্পানীগুলোকে জবাব দিহীতা করতে বাধ্য করা হবে।
প্রসঙ্গত: দু’শ্ বছর আগে ব্রিটিশ সরকার মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য পরিকল্পিত বনায়ন করেছিলেন। মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থল আলীকদম উপজেলার মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ভূমি (প্রায় এক লাখ তিন হাজার একর) সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে। বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সৃজন করেছিল ওই ভুমিতে। কর্তৃপক্ষের স্বার্থান্ধতায় বন-বৃক্ষ উজাড় হয়ে বনাঞ্চলে বর্তমানে সেসব বন বা বৃক্ষ নেই। এর ফলে জীব বৈচিত্র হারিয়ে গেছে।
অপরদিকে পাহাড়ে গাছ না থাকায়, অসংখ্য ছড়া-নালায় পানির উৎস ধংস হয়ে যায়। এ ছাড়া গত তিন দশক ধরে আলীকদম থেকে লামা হয়ে চকরিয়া পর্যন্ত শতাধিক কিলোমিটার নদী তীরের পলিমাটিতে তামাক চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। এ কারণে নদী ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বহুগুণ কমে গেছে। চকরিয়া থেকে মানিকপুর লামা হয়ে নৌপথে মানুষজন ১২ মাস যাতায়াত করতেন।
১৯৮৫ সাল নাগাদ এমন দৃশ্য ছিল। খরস্রোতা সেই মাতামুহুরী নদীর কোন কোন অংশ ইতিমধ্যে প্রায় শুকিয়ে পানির গভীরতা তিন/চার ইঞ্চি হয়ে গেছে। নদী দু’দিকে প্রসারিত হয়ে মধ্যখানে অসংখ্য পয়েন্টে চর জেগে উঠেছে।
তামাক চাষসহ পরিবেশ বিধংসী কর্মকান্ড বন্ধ করা না হলে শুস্ক মৌসুমে মাতামুহুরী নদী শুকিয়ে জনজীবনে পানির হাহাকার নেমে আসতে আগামী ১০ বছরও লাগবে না বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিয়ে এখনো চিন্তা করার সময় আছে। না হয় চরম খেসারত দিতে হবে পার্বত্য লামা-আলীকদমবাসীকে। ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে এতদাঞ্চলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন সমাজ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply