ভাসানচরে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা গেছে
স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে সাতটি জাহাজ।। আজ শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে তারা এখানে এসে পৌঁছান।
ভাসানচরে ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গার জন্যে ৭৬৮টি রুম বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। ভাসানচরে আসার পর সেখানকার পরিবেশ দেখে রোহিঙ্গারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।কমোডোর এএ মামুন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা পৌঁছানোর ভাসানচরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও অন্যান্য সংস্থা ভাসানচরে আসবে এবং সেখানকার সুযোগ-সুবিধা দেখবে। তারাও এখানকার পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন।’
‘গত দুই-আড়াই বছরে এই দ্বীপের ওপর দিয়ে ফণী, বুলবুল ও আম্ফান ঝড় বয়ে গেলেও এখানে কোনো ক্ষতি হয়নি’ বলেও মন্তব্য করেন এএ মামুন চৌধুরী।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের এসব জাহাজে তুলে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুপুর ২টার দিকে রোহিঙ্গাবাহী জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজের ছয়টি নৌবাহিনীর, একটি সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর জাহাজটির নাম ‘শক্তি সঞ্চার’। আরও ১৯টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে স্কট জাহাজও রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া কলেজ মাঠ থেকে ‘চল চল ভাসানচর চল’ লেখা সংবলিত ব্যানার লাগিয়ে রোহিঙ্গা-বহরের ৩৮টি বাস চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করে। যেসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নেওয়া হচ্ছে এতকাল ধরে তারা অবস্থান করছিলেন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত রোহিঙ্গারা টেকনাফের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হন। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কুতুপালংসহ আরও কিছু ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে করে নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে আনা হয়। সেখান থেকেই জলপথে রোহিঙ্গাদের শুক্রবার ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে র্যাব শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখভাল করছে। সার্বিক নিরাপত্তায় র্যাবের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চরম নজিরবিহীন নৃশংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় দেশটি থেকে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসে। মাঝে দুই দফায় রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়া সফল হয়নি। মূলত মিয়ানমার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বহুদিন ধরেই কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা বসবাস করে আসছেন। সেখানে চাপ কমানোর জন্য আপাতত সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে।