করোনার কারণে পাবনার পাঁচ শতাধিক ডেকোরেটর বন্ধ : মালিক ও শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছে
আলাউদ্দিন হোসেন,পাবনা
করোনা ভাইরাসের কারণে পাবনার পাঁচ শতাধিক ডেকোরেটরের মালিক ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। গত তিন মাস কোন কাজ না থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সুত্র জানায়, পাবনা সদর উপজেলার ৭০টিসহ জেলার ৯টি উপজেলায় পাঁচ শতাধিক ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের আয় রোজগারও বন্ধ। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে জেলা ডেকোরেটর মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে ডেকে জেলার সমস্ত ডেকোরেটরের ব্যবসা বন্ধ রাখতে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানান। সে কারনে জনস্বার্থ বিবেচনায় ও জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে জেলার সমস্ত ডেকোরেটর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়, যেগুলো অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন শ্রেনীর ব্যবসায়ীদের মাঝে সরকারি প্রণোদনা ঘোষনা করা হয়েছে। জেলার ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন ধরনের প্রনোদনা বা কোন ধরনের সহযোগিতা তারা পাননি বলে জানান।
কয়েকজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে তাদের অবস্থায় খুবই খারাপ। তাদের পক্ষে দোকান ভাড়া, গোডাউন ভাড়া, শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা। এ কারনে একদিকে পরিবার নিয়ে কোন রকমে টিকে থাকা, অপরদিকে মালামাল রাখার জায়গা ভাড়া, গোডাউন ও দোকানে ভাড়া দেওয়া, সবকিছু মিলিয়ে তাদের জীবন যায় যায় অবস্থা। এখন মালামাল বিক্রি করে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, বাড়িতে তাদের খাবার সংকটে আছেন তারা। ঘুরে ঘুরে মহাজনের কাছেই তো যেতে হয় তাদের। মহাজনের কোন কামাই নেই, তারপরও যেটুকু পারে দেয়,তা দিয়েই চলি। এতো বড় কঠিন সময়েও মহাজনদের কাছে গেলে যতো সমস্যায় হোক খালি হাতে ফেরায় না তারা, এটাই তাদের কাছে এক ভালো লাগা। এভাবে চলতে থাকলে তো ডেকোরেটর সব একবারে বন্ধ হয়ে যাবে বলে শংকা প্রকাশ করেন এসব শ্রমিকেরা। পাবনার কালাচাঁদপাড়ার ডেকোরেটরের মালিক আমিরুল ইসলাম বলেন, করোনার এই ভয়াবহতা সহসায় কেটে না গেলে এই সেবাখাতটি যেমন ধ্বংসের মুখে পড়বে, ঠিক তেমনই অনেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবেন। ফলে এই সেবাখাতকে বাঁচিয়ে রাখতে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণসহ কিছু সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।
পাবনা জেলা ডেকোরেটর মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হান্নান ও সাধারন সম্পাদক সৌমেন সাহা ভানু জানান, একটি ডেকোরেটর দোকান চালু করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাংক থেকে এ বাবদ কোন ধরনের ব্যাংক ঋণ বা কোন ধরনের সুবিধা দেওয়া হয় না। তারা এও বলেন, এদেশে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগের চায়ের দোকানীকে ব্যাংক থেকে সুবিধা সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কোন খোঁজখবর বা সুবিধার বিষয়টি চিন্তা করেনা কেউ,এটাই তাদের ভেতরে চাপা এক কষ্ট। ডেকোরেটর ব্যবসা শুধু একটি ব্যবসায় নয়। এটি জনকল্যাণমূলক একটি সেবাখাত উল্লেখ করে তারা বলেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ডেকোরেটর মালিকদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই সেবাখাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগ গ্রহন না করলে এটি বিলুপ্ত হয়ে পড়ার শংকা রয়েছে। এ কারনে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
পাবনা চেম্বারের সভাপতি মো. সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী বলেন, কারোনার সময়ে ডেকোরেটর ব্যবসায়ী এবং এর সাথে যুক্ত শ্রমিকরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়া হবে।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, সরকার জেলা প্রশাসন, চেম্বারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করছে। খুব তারাতারি এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।