২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / রাত ২:৩১/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ২:৩১ পূর্বাহ্ণ

মৌলভীবাজার ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভা

     

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখার ৫ম সম্মেলনোত্তর নবনির্বাচিত জেলা কমিটির ১ম সভা থেকে বর্তমান বাজারদরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে জাতীয় ন্যুনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহরের কোর্টরোডস্থ সংগঠনের জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়। জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীনের সভাপতি অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস ৫ম জেলা সম্মেলনের পর্যালোচনা ও আয়-ব্যয় হিসাব উত্থাপন করেন। উত্থাপিত রিপোর্টের উপর আলোচনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ওমৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৩০৫ এর সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৪৫৩ এর সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া, প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহজাহান আলী, কোষাধ্যক্ষ তারেশ বিশ্বাস সুমন, সদস্য মোঃ গিয়াসউদ্দিন, মোঃ জসিম, সুহেল আহমেদ সুবেল, কিসমত মিয়া, মোঃ জসিমউদ্দিন, নারায়ন গোড়াইত। সভায় বক্তারা বলেন যে শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে মালিকের আরাম আয়েশ ও বিত্ত বৈভবের সৃস্টি হয়, মালিকের এক কথায় যখন তখন সেই শ্রমিকের চাকরি চলে যাওয়া অতি সাধারণ ঘটনা। কাগজে কলমে শ্রমআইন থাকলে ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে হোটেল, স’মিল, রাইস মিল, দর্জি, নির্মাণ, প্রেস ইত্যাদি সেক্টরে শ্রমআইনের ন্যূনতম বাস্তবায়ন নেই। তদোপরি সরকারও শ্রমআইন সংশোধন করে মালিকদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর। বিগত সরকারের একেবারে শেষ সময়ে নির্বাচনী ডামাঢোলের মধ্যে শ্রমিকপক্ষের মতামতকে উপেক্ষা করে শ্রম(সংশোধন) আইন-২০১৮ পাস করা হয়। সংশোধিত শ্রম আইনে কৌশলী শব্দ ব্যবহার করে শ্রমিকদের কর্মঘন্টা বাড়িয়ে ১০ ঘন্টা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বিভিন্ন রকম শর্ত বহাল রাখা, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত মাতৃত্ব ছুটির অধিকারকে ‘অনুপস্থিপিত’ বলে অবিহিত করা, শ্রমিকদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ মাত্র ২ লাখ টাকা করা, বর্তমান আইনের ২৩ ও ২৬ ধারা বহাল রেখে মালিকদের স্বার্থরক্ষা করেছে। মহাজোট সরকার মাথাপিছু মাসিক আয় প্রায় ১২,০০০ টাকাসহ (বার্ষিক ১৭৫২ ডলার হিসেবে) নিজেদের মত করে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও সূচক দেখিয়ে উন্নয়নের ডামাঢোল চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের আপামর শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনতার জীবনে এই তথাকথিক উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। সরকার একদিকে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধিকে সাফল্য বলে প্রচার করলেও হোটেল, স’মিল, দর্জি, প্রেসসহ সরকারের ৪১ টি শ্রমিক সেক্টরের ঘোষিত নি¤œতম মজুরি ৩,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮,০০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই মজুরি দিয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে কিভাবে শ্রমিক তার পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনধারণ করে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করবে? সরকার প্রদত্ত মাথাপিছু আয়ের সাথে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির চিত্র অসঙ্গতিপূর্ণ হলেও মাথাপিছু ঋণের বোঝা ঠিকই আপামর শ্রমিক-কৃষক- মেহনতি জনগণকে টানতে হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনায় এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশকে ঋণগ্রস্থ করার কারণে মাথাপিছু ঋণ ৬০ হাজার টাকা(জুন ২০১৮ পর্যন্ত) ছাড়িয়েছে। সরকার একদিকে যেমন মালিকদের স্বার্থরক্ষায় শ্রমিকদের শ্রম শোষণকে বাড়িয়ে চলছে তেমনি শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিক যাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য শ্রমআইন সংশোধন করে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে সংকোচিত করছে। এমতবস্থায় শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প কোন পথ নেই।

সভা থেকে বর্তমান বাজারদেরে সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্য মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, মাসিক বেতনের সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান, চা-শিল্পে শ্রমআইনের বৈষম্য নিরসন ও বাঁচার মতো মজুরি নিশ্চিত করা, হোটেল, প্রেস, দর্জি, রাইছ মিল, স’মিলসহ বিভিন্ন সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন ও সরকার ঘোষিত  মজুরি কার্যকর, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply