২৪ এপ্রিল ২০২৪ / ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:০৭/ বুধবার
এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

মৌলভীবাজারে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’র সভা

     

 

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভায় প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থ রক্ষাকারী জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী গতানুগতিক বাজেট’ আখ্যায়িত করে বক্তারা বলেন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৫ কোটি ২৩ লাখ ১৯০ টাকা প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ ২১২ টাকা ঘাটতি; যা মোট বাজেটের প্রায় ২৭ শতাংশ। এই বিপুল পরিমানের ঘাটতি পুরো চাপ নিতে হবে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণকে, ইতোমধ্যে মাথাপ্রতি ঋণ ৬৭ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, আগামী অর্থ বছরে মাথাপ্রতি ঋণ নিশ্চিত ভাবে আরও বাড়বে। মহাজোট সরকার উন্নয়নের সাফাই গাইলেও কার্যতঃ দেশকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে ফেলছে। ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭ টায় শহরের কোর্টরোড কার্যালয়ে এনডিএফ জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা আরও বলেন জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য’ তথা ‘এসডিজি’কে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি অবাধ বিনিয়োগের নামে প্রস্তাবিত বাজেট লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির স্বার্থরক্ষা করায় শোষণ-লুন্ঠণ আরো বেপরোয়া হবে। সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আরো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। সকল সরকারের আমলে প্রণীত বাজেটই জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের লক্ষ্যে ভ্যাট, ট্যাক্স তথা পরোক্ষ করের জালে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে বেধে ফেলা হয়েছে। একই সাথে জনজীবনের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর নতুন করে বাড়তি কর বসিয়ে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের জীবনকে আরো দূর্বিসহ করা হয়। অন্যদিকে কালো টাকার মালিকদের উৎসাহিত করতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জন্য নানারকম প্রণোদনা জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে নানা রকম সুযোগ দিয়ে ঋণ খেলাপিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষির জন্য অত্যাবশ্যকীয় সার, ডিজেল, কীটনাশকের মত বিষয়গুলোকে ভর্তুকি কমিয়ে কৃষিযন্ত্রের দামে ভর্তুকি দিয়ে মূলত ধনী গোষ্ঠি ও জোতদারকে সহায়তা ও দলীয় লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের নামে লগ্নিপুঁজি ও পণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফা ও সামগ্রীক স্বার্থে অবকাঠামোসহ সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া আছে। তাই বাজেটকে যে শিরোনামেই উপস্থাপন করা হোক না কেন এই বাজেট মূলত সা¤্রাজ্যবাদ ও তার সংস্থা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের নীতি-নির্দেশের আলোকে প্রণীত। এইজন্য প্রতিটি বাজেটই গণবিরোধী, গতানুগতিক ও ধারাবাহিকতারই প্রতিফলন। তাই বাজেট যে সরকারের আমলেই পেশ হোক তাতে রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী গোষ্ঠির স্বার্থে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না। যে কারণে বাজেটের আকার বাড়লে লুটেরা গোষ্ঠির সম্পদের আকার বাড়ে আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্রমেই সম্পদহীন হয়। জাতীয় ও জনস্বার্থমুখী বাজেটের পূর্ব শর্ত হচ্ছে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ প্রতিষ্ঠা।
জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৪৫৩-এর সভাপতি সোহেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল আহমেদ, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৩০৫ এর কোষাধ্যক্ষ্য তারেশ বিশ্বাস সুমন, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি শাহজাহান আলী, কোষাধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন, জেলা এনডিএফ সদস্য মোঃ জসিমউদ্দিন, হোটেল শ্রমিকনেতা মোঃ জামাল মিয়া।
সভা থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থা সমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, বিনাবিচারে হত্যা-খুন-গুম বন্ধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রমআইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply