২৭ এপ্রিল ২০২৪ / ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ / সকাল ৯:৪০/ শনিবার
এপ্রিল ২৭, ২০২৪ ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ছাত্র রাজনীতি

     

মাহমুদুল হক আনসারী
নিরাপদ ক্যাম্পাস ও ছাত্র রাজনীতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে সুস্থ ধারার রাজনীতি চালু থাকুক সেটা চায় অভিভাবকমন্ডলী। দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় সুষ্ঠ রাজনীতি চর্চার বিকল্প নেই। রাজনীতি ছাড়া গণতন্ত্র চর্চা হয়না। রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ করতে হলে ক্যাম্পাসের রাজনীতি নিরাপদ রাখতে হবে। দেশে বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে কলেজ ভার্সিটিতে সঠিকভাবে গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনীতির চর্চা খুব কমই চোঁখে পড়ছে। ছাত্র রাজনীতি আর বয়স্ক রাজনীতি দুটুই এখন হুমকীর মুখে। সারাদেশের স্কুল কলেজ ভার্সিটির রাজনীতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনেকটা থমকে আছে। পুরনো ছাত্র সংসদ দিয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতি চলছে। প্রায় ক্যাম্পাস অস্থির ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীদের বেপরোয়া আচার ব্যবহারে কোন্দল দলীয়করণ স্বজনপ্রীতি, মারামারী, হাঙ্গামা লেগে আছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলতে খুব একটা নেই বল্লেই চলে। ছাত্র-রাজনীতির কর্ণধার যারা, তারা ছাত্রদের স্বার্থের রাজনীতির চেয়ে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক বাণিজ্যে বেশী ঝুঁকে পড়েছে। টেন্ডারের রাজনীতির কারণে সময় অসময়ে মূল্যবাণ প্রাণ হারাতেও দেখা যাচ্ছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিটে জ্ঞানর্জনের জন্য পদার্পণ করে সেখান থেকে লাশ হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসা কী পরিমাণ দুঃখজনক ও মর্মান্তিক সেটা ভোক্তভোগী অভিভাবক বুঝবেন। ছাত্র-রাজনীতি ও ক্যাম্পাস দেশের প্রচলিত ধারার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। কিন্তু অপরাজনীতির কারণে ছাত্র-রাজনীতি পদে পদে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে বহু দুরে সরে আছে। একশ্রেণীর রাজনৈতিক দল ও নেতা ছাত্র-রাজনীতিকে নিজেদের উদ্দেশ্য ব্যবহার করতে দেখা যায়। কতিপয় নেতার নিয়ন্ত্রণে ছাত্র-রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বলে মনে হয়। ছাত্রদের প্রতিভাকে ভালো কাজে দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করার কথা থাকলে ও কিন্তু এ প্রতিভাকে ভালো কাজে দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করার কথা থাকলে ও কিন্তু সেটা অনেকটা শূণ্যের কোটায়। সঠিকভাবে ছাত্র রাজনীতির চর্চা না থাকাতে দেশে সেটা রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে,গণতান্ত্রিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পন্ন ছাত্র রাজনীতির চর্চা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আর এর বিপরীত রাজনীতি হবে দেশ ও মানুষের জন্য অনিরাপদ ও ক্ষতিকারক। ছাত্রদেরকে অবশ্যই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে। কোনো অবস্থায় তাদেরকে ক্ষমতায় উঠা নামার সিঁড়ি হিসেবে জনগণ দেখতে চায়না। ক্যাম্পাস ও ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব অভিভাবক ও রাজনীতিবীদদের। মুরুব্বী রাজনীতি চাইলে কখনো ছাত্র রাজনীতির কর্মকান্ড ধ্বংসাত্মক ও খুনাখুনী পর্যায়ে পৌছেনা। অতীতে দেখা গেছে যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই ছাত্র রাজনীতিকে ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করতে পারে। সেটা কোনো দোষের কিছু না। তাদেরকে অস্ত্র সস্ত্র দিয়ে স্বসস্ত্রভাবে ক্যাম্পাসের কর্মকান্ডে ব্যাবহার করাটা মারাত্বক অপরাধ। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধানত কাজ হলো লেখাপড়া অর্জন করে সঠিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়া। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে গিয়ে সন্ত্রাস আর টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়া সেটাকে অভিভাবকগণ কখনো মেনে নিতে পারেনা। আর ছাত্র হত্যা অপহরণ, খুন সেটাতো আরো মারাত্মক। এসব কেন হয় সেটাকে চিহ্নিত করে তার সঠিক ট্রিটম্যান্ট রাজনীতিবিদ অভিভাবকদের সমাধান দিতে হবে। ছাত্রদের এভাবে ছেড়ে দেয়া যাবেনা। তাদের নিয়ন্ত্রণের রশি অভিভাবকদের হাতে রাখতে হবে। আজকের ছাত্র সংগঠন অপরাপর ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের সহ্যই করেনা। ছাত্র ও মানুষ হিসেবে তাদের প্রতি ভালো কোনো আচরণ কম দেখা যায়। ছাত্র-রাজনীতির অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়েছে। অনেক ছাত্র সংগঠন মাঠে ও ক্যাম্পাসে কাজ করছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক আদর্শিক পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছেনা। দিন দিন ছাত্র-ছাত্রী অন্য কোনো আসক্তির মোহে পড়ে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করছে। ছাত্রত্বকে কলুষিত করছে। সমাজ পরিবার অভিভাবকদের জন্য দুর্নাম বয়ে আনছে। এমন ধরনের ছাত্র রাজনীতি জনকাম্য নয়। জনগণ যা চায় তা হলো- সভ্য, নৈতিকতা সম্পন্ন আদর্শ ও সচ্চরিত্র গুণের লালনে পালনের রাজনীতি। ছাত্রকে দেখে যেনো শিক্ষক ও অভিভাবক ভয় না পায়। ছাত্ররা যেন সমাজের শিক্ষার মডেল হয়। গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্র রাজনীতির ধারা অব্যাহত না রাখলে দেশে গণতন্ত্র দির্ঘায়ু হবেনা। গণতন্ত্র টেকসই করতে হলে অবশ্যই ছাত্র-রাজনীতির গুণগত মান বাড়াতে হবে। ছাত্র-রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস অনেক আছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৯০ এর গণ আন্দোলন গৌরবময় ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস। এ গৌরব উদ্ধারে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির গতি ও আদর্শের উপর নির্ভর করবে দেশের আগামীর রাজনীতি ও গণতন্ত্র। ক্যাম্পাস শান্ত অর্থ, পরিবার সমাজ রাষ্ট্র শান্ত। পরিবার সমাজ রাষ্ট্র শান্ত ও স্থিতিশীল রাখতে হলে ক্যাম্পাস শান্তিপূর্ণ থাকা চাই। ক্যাম্পাসে সঠিক পন্থায় সঠিক ধারায় রাজনীতির চর্চা চাই। সকল দল ও মতের কথা শুনতে চাই। ক্ষমতার দাপটে সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য টেন্ডারবাজী জনগণ চায়না। মানুষ হওয়ার প্রতিষ্ঠান ভালো মানুষ হিসেবে ফেরত চায় অভিভাবকগণ। ক্যাম্পাস থেকে উঠে আসুক সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, লেখক, গবেষক ও সমাজ সেবক। যারা রাষ্ট্র ও জনগণকে সঠিক পন্থায় দিক নির্দেশনা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিবে। পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে দেশ। আজকের প্রজন্ম আগামীর নেতৃত্ব। তাদের হাতেই আসবে দেশের সমাজের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। নৈতিকতা ভালোবাসা অর্জন করতে হবে ছাত্র সমাজকে। মানুষের অন্তরের জ্বালা যন্ত্রণা বুঝতে হবে। সুখে দুখে মানব সেবায় পাশে থাকতে হবে। একজন ভালো ছাত্র ভালো ছাত্র নেতা। একজন ছাত্র নেতা মানে আগামীর জন্য দেশ পরিচালক। এমনভাবে তৈরী হতে পারলে ছাত্র, অভিভাবক, সমাজ ও রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্র রাজনীতি ও নেতৃত্বের বিকল্প নেই। অবশ্যই খুন খারাবী বন্ধ করতে হবে। ছাত্র রাজনীতির নামে চাঁদাবাজী টেন্ডারবাজী মাদকসেবন ও পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজ হতে একজন ছাত্র নেতৃত্বকে দূরে থাকতে হবে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও সব ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ জীবন প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাসের রাজনীতিকে সফল করে তুলতে হবে। সকল ছাত্র-ছাত্রী আমার ভাই বন্ধু, দেশের আগামীর ভবিষ্যত মনে করতে হবে। কারো কোনো ক্ষতি হয় এমন ধরনের কার্যকলাপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিরাপদ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় অভিভাবক ছাত্র-শিক্ষক সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা চায় জনগণ।

About The Author

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply